%e0%a6%ae%e0%a7%9f%e0%a6%ae%e0%a6%a8%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%82%e0%a6%b9%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ab%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a7%9c%e0%a7%80%e0%a7%9f%e0%a6%be-%e0%a6%89%e0%a6%aa%e0%a6%9c

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে কলেজ সরকারিকরণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।বুধবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটির সঙ্গে ঘটনাস্থলে গেলে ইউএনও লিরা তরফদারকে আন্দোলনকারীরা ধাওয়া করেন বলে ফুলবাড়ীয়া থানার ওসি রিফাত খান রাজিব।ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজে রোববার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ওই কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ (৫০) ও পথচারীর সফর আলী (৭০) মারা যান। ঘটনা তদন্তে ছয়টি কমিটি গঠিত হয়েছে।ওসি বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় কলেজ শিক্ষকসহ দুইজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গঠিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চার সদস্যের তদন্ত কমিটি বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তদন্ত কমিটির সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিরা তরফদারকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা ধাওয়া করেন।পরে পুলিশ প্রহরায় তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

এ বিষয়ে ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।এদিকে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজ পরিদর্শন করেন। এসময় তারা প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন।কমিটি প্রধান ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কমিশনার আক্তার হোসেন বলেন, কোনো মানুষকে হত্যা করা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। ফুলাবাড়ীয়াতে শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ এবং পথচারী সফর আলী নিহতের ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।বৃহস্পতিবার তদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন ও সাত কর্মদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।এ সময় তদন্তে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের অভিযোগ ও অনুসন্ধান বিভাগের পরিচালক শরীফ উদ্দিনসহ সদস্য জয়দেব চক্রবর্তী ও আনিসুর রহমান।

এদিকে, ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজ সরকারী করণ আন্দোলনের ৪৩ তম দিনে গত রবিবার পুলিশের লাঠি চার্জে শিক্ষকসহ দুজন নিহতের ঘটনায় এখন সারাদেশ উত্তাল। এম পি আলহাজ মোসলেম উদ্দিন তার পুত্র ইমদাদুল হক সেলিম কলেজ সরকারী করণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর দায় চাপনোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। বুধবার সকালে মানবাধিকার কমিশনের একটি তদন্ত টিম কলেজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, কলেজ আন্দোলনে মানবাধিকার লংঘন করেছে পুলিশ। আমরা সরকারকে বিষয়টি জানাবো। মানবাধিকার কমিশনের সাথে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লীরা তরফদারের উপর আন্দোলনকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ধাওয়া দিলে পুলিশ পাহাড়ায় তিনি কলজে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে বাধ্যহন। পুরো উপজেলায় চলছে গ্রেফতার আতংক। বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা।

১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের পর বুধবার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে ভয় আতংক নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে আসে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে পুলিশের লাঠিপেটায় কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালামের কথা স্বরন করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তারা। কলেজে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ক্ষোভ আর বিচারের দাবীতে ফুঁসে উঠে তারা। ফুলবাড়ীয়া কলেজ নিয়ে হতাহতের ঘটনার জন্য এমপি ও এমপি পুত্রকে দায়ী করেন তারা। আন্দোলন সংশ্লিষ্টদের দাবী এমপি ও পুত্রের ষড়যন্ত্রের কারনেই সরকারী করণের সকল যোগ্যতা থাকার পরও উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ১৯৭২ সালে স্থাপিত ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজ সরকারী করণ করা হয়নি। এমপির প্রতিষ্ঠিত এমপি পুত্রের কলেজ হিসাবে খ্যাত নন এমপিওভুক্ত ২০০৯ সালে স্থাপিত বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ কে সরকারী করণ করা হয়েছে। সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজকে সরকারী করণ না করে আড়াইশ শিক্ষার্থীর কলেজ সরকারী করণের দায় এমপি ও এমপি পুত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর চাপানোর চেষ্টা করছে।

এমপি পুত্র ইমদাদুল হক সেলিম তার ফেইস বুকে দাবী করেছেন, উপজেলার প্রাচীনতম ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজ সরকারী করণ না করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়ী। তার অভিযোগ,প্রধানমন্ত্রী নিজে উপজেলার প্রাচীনতম ও সবচেয়ে যোগ্য ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজকে বাদ দিয়ে তার মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা সরকারী করণের নির্দেশ দিয়েছেন। এক ফেইস বুক কমেন্টে লিখেন, সারা দেশে জাতির জনকের পরিবারের সদস্যদের নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজগুলোকে প্রাধ্যান্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমপি পুত্র ইমদাদুল হক সেলিশের এমন অদ্ভুত যুক্তি প্রদর্শনে প্রধানমন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করায় ফুলবাড়ীয়ায় আওয়ামীলীগ ও সচেতন মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে। আওয়ামীলীগ নেতারা জানান, এমপি পুত্র নিজেদের পরিবারতন্ত্রের দায়ভার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর চাপিয়ে শেখ হাসিনার সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক অ্যাডভোকেট আ. রাজ্জাক বলেন, কলেজের এ ঘটনার নেপথ্যে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি এমপি মোসলেম উদ্দিন, গভর্নিং বডির সদস্য তার পুত্র অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক সেলিম ও এমপির পুত্রের ভায়রা ভাই কলেজের অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন খানের ইন্ধন রয়েছে। প্রায় শতাধিক শিক্ষক ও কমর্চারী নিয়োগ দিয়ে কয়েক কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন এমপি, এমপির পুত্র ও কলেজের অধ্যক্ষ। কলেজ সরকারিকরণের নামে শিক্ষকদের কাছ থেকেও বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এমএ জব্বারও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন।

সরকারী করণ আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক শিক্ষক নেতা এসএম আবুল হাসেম জানান, জাতীয়করণের উদ্দেশে গত বছরের ১৯ জুন কলেজটি পরিদর্শন করেন উচ্চপর্যায়ের টিম। এরপর জাতীয়করণের তালিকার ৬ নম্বরে ছিল ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ। কিন্তু ঘোষিত তৃতীয় তালিকায় আকস্মিকভাবে নন এমপিও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা মহাবিদ্যালয়ের নাম আসায় ফুঁসে ওঠে শিক্ষার্থীরা।আন্দোলনকারী শিক্ষক নেতা ফুলবাড়িয়া কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, এমপি ও এমপি পুত্র যদি যানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পরিবারের সদস্যদের নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি সরকারী করণ করবেন তাহলে ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজটি জাতীয়করণের জন্য কেন এমপি মোসলেম উদ্দিন ১০ লাখ টাকা নিলেন। এমপি মোসলেম উদ্দিন পরিবার চরম মিথ্যাবাদী পরিবার হিসাবে চিহ্নিত হয়ে গেছে। তারা যা বলেন তার উল্টো করেন। সংসদ সদস্য আলহাজ মোসলেম উদ্দিন জানান, জাতীয় করণের জন্য তিনি উপজেলা সদরের ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজ, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা মহাবিদ্যালয় ও ফুলবাড়ীয়া মহিলা মহাবিদ্যালয়ের নাম অন্তর্ভক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠনোর পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গেলে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গমাতার নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি সরকারী করন করেন।

অপর দিকে বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে মানবাধিকার কমিশনের ৪ সদস্যেও একটি প্রতিনিধি দল কলেজ পরিদশন করেন। এ সময় তার পুলিশী নির্যাতনের শিকার শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। কমিশনের কাছে কলেজ শিক্ষক আঃ রশিদ বলেন, আমার বৃদ্ধ মা জানেন কলেজ সরকারী করণনের জন্য আন্দোলনে শিক্ষকসহ দুজন মারা গেছে। আমার মা কে মিথ্যা কথা বলে আমি কলেজে এসেছে। পুলিশের লাঠিচার্জে কলেজ শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ আমার হাতেই মারা গেছেন। এ দায়তো আমি এড়াতে পারি না। আমরা আজাদ স্যারকে যে পুলিশ িিপটিয়ে হত্যা করেছে আমরা তার বিচার চাই। অফিস সহকারী শরিফুল ইসলাম বলেন, কলেজে পুলিশী হামলার পর আমরা অফিস রুমে দৌড়ে ঢোকার চেষ্টা করি। নিহত কালাম স্যারকে আমার সামনে পুলিশ লাঠি পেটা করেছে। বুকে লাথি মেরেছে। মনাবাধিকার কমিশনের কাছে কলেজের শিক্ষক রহুল আমীন বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার লীরা তরফদার একটা বেয়াদপ। কলেজ সরকারী করণ নিয়ে আমরা তার সাথে কথা বলেছি। তিনি পূর্বেই ব্যবস্থা নিলে হতাহতের ঘটনা ঘটত না। নিহত কলেজ শিক্ষক কালামের বুকে লাথি মারে শিক্ষক। পরে তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। আমরা এ্যাম্বুলেন্স দিয়ে হাসপাতালে কালামকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পরে কলেজের পিছন দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করার পর তিনি মারা যান। কলেজে পুলিশের লাঠিচার্জের বর্ননা দিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অনেকেই মানবাধিকার কমিশন থেকে আসা তদন্ত টিমের কাছে পুলিশী নির্যাতনের ক্ষত চিহ্ন দেখান।

পরে তদন্ত টিমের প্রধান মানবাধিকার কমিশনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর আকতার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজ সরকারী করণ আন্দোলনে পুুলিশের লাঠিচার্জ অবশ্যই মানবাধিকার লংঘন। এখানে শিক্ষকসহ দুজন নিহত হয়েছে। আমরা বিষয়টি সরকারকে অবহিত করবো। তিনি আরও জানান, তাদের রিপোর্ট বৃহস্পতিবার প্রদান করা হবে।