বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যত শক্তিশালীই হোক না কেন, প্রশাসন দলীয় সরকারের অধীনে থাকলে তারা অসহায় হয়ে যায়।আর এ কারণেই বিএনপি নির্বাচনের সময় নির্দলীয় একটি সহায়ক সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।রাষ্ট্রপতি যে ইসি দেবেন প্রধানমন্ত্রীর তা মেনে নেওয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত ‘বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মহান বিজয় দিবস’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

লুই আই কানের নকশার উপর ভিত্তি করে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার সরানো হলে তা হবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত। এমন মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।মওদুদ আহমদ বলেন, হঠাৎ লুই আই কানের নকশার গুরুত্ব পেল কেন! আসল কথা হলো জিয়ার মাজার সরানো হবে। এটা করা হলে জাতি তাদের ঘৃণার চোখে দেখবে, আর সেটা হবে তাদের রাজনীতিক ভুল সিদ্ধান্ত।নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন প্রসঙ্গে তুলে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগের রাত আগে পর্যন্তও সবকিছু ঠিকঠাক থাকবে, নির্বাচনের দিন কী হবে সেটাই দেখার বিষয়।

আগামী সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে, আগের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি দলীয় সরকারের অধীনে থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। সেটাই স্বাভাবিক।আলোচনা সভায় তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করার জন্য, নিরপেক্ষ করার জন্য এবং শক্তিশালী করার জন্য কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা খুশি যে সরকারও বলেছেন, রাষ্ট্রপতি যেটা বলবেন, তারা সেটা মেনে নেবেন।মওদুদ বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন হবে প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু কোন সরকারের অধীনে কীভাবে নির্বাচন হলে ইসি সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারবে- দ্বিতীয় পদক্ষেপে তা ঠিক করতে হবে।প্রশাসন যদি দলীয় সরকারের অধীনে থাকে এবং সমস্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি তাদের অধীনে থাকে, তাহলে আমাদের অভিজ্ঞতা হল, সেখানে নির্বাচন কমিশন অসহায় হয়ে যাবে। নির্বাচন কমিশন যতই শক্তিশালী করা হোক না কেন, তারা স্বাধীনভাবে, নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে না।

সেজন্য আমাদের প্রস্তাবে একটা সহায়ক সরকারের কথা আমরা বলেছি। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেজন্য একটি সহায়ক সরকার থাকতে হবে।২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে। নতুন ইসি গঠনে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্েযাগ নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

নতুন যে কমিশন দায়িত্ব নেবে, তার অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। আর বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মত একটি ব্যবস্থ সংবিধানে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মাননীয় রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নিয়েছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আলাপ আলোচনা করবেন। সকল দলের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি যেভাবে চাইবেন সেইভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি কী করেন সেটা আমরা দেখব এবং সেইভাবে আমরা মেনে নেব।তিনি বলেন, এখন আমাদের রাষ্ট্রপতির উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে। আমরা আশা করব, তিনি (রাষ্ট্রপতি) এমন একটা উদ্যোগ গ্রহণ করবেন, যাতে আমরা যেসব প্রস্তাব দিয়েছি… সব বিবেচনা করে একটি শক্তিশালী নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করার সুপারিশ তিনি করেন। অন্যদিকে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের ¯্রােতের মতো প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না, আজ বঙ্গবন্ধু থাকলে এমনটি হতো না। ১৯৭৪ সালে যখন রোহিঙ্গারা এদেশে এসেছিল সে সময় শেখ মুজিব মায়ানমারকে বলেছিলেন, তোমরা যদি রোহিঙ্গাদের বাসস্থান ফিরিয়ে না দাও, প্রয়োজনে আমরা দখল করে রোহিঙ্গাদের ভূমি ফিরিয়ে দেবো।স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিম, যুব দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেত্রী খালেদা ইয়াসমীন ও নিপুন রায় চৌধুরী আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।