ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্টমন্ত্রী রেতনো মারসুদিকে সঙ্গে নিয়ে উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।মঙ্গলবার দুপুরে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী দ্’ুদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের সফরসঙ্গী নিয়ে উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের বিভিন্ন ব্লক পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন।এর আগে বেলা ১১টার দিকে তারা হেলিকপ্টার যোগে উখিয়া পৌঁছান। সেখান থেকে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে যান দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাদের সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক।

এসময় আরও ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ, কক্সবাজার-৪ আসনের এমপি আব্দুর রহমান বদিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা।পরিদর্শনকালে দুই মন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বিভিন্ন ব্লকে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের কথা বলেন এবং তারে ওপর নির্যাতনের কথা শোনেন।এসময় দু’মন্ত্রীকে পেয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা মন্ত্রীদের সামনে ভিড় জমাতে চেষ্টা করেন এবং অনেকে তাদের উপর চালানো নৃশংসতার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর নির্যাতন ইস্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী ও ইন্দোনেশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বৈঠক করবেন। রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শনের পর তাদের এ বৈঠক হবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও ইন্দোনেশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক করার কথা রয়েছে। রাতেই তিনি দেশে ফিরে যাবেন।

উল্লেখ্য, গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সীমান্ত পুলিশের ৯ সদস্য নিহত হয়।ওই হামলার জন্য রোহিঙ্গা মুসলমানদের দায়ী করে আসছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর থেকে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী নিরীহ রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন ও জাতিগত শুদ্ধি অভিযান শুরু করে।সেনা অভিযানে এখন পর্যন্ত কয়েক’শ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন এবং ৩০ হাজারের বেশি গৃহহীন হয়েছেন। জীবন বাঁচাতে ৩০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকে পড়েছেন বলে দাবি করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন।

এদিকে, কক্সবাজারে নাফ নদীর জলসীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গা বোঝাই ৪টি নৌকা ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা।সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এসব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।টেকনাফ বিজিবি-২ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান, মিয়ানমারের আরকান প্রদেশ থেকে টেকনাফের নাফ নদীর জলসীমানা অতিক্রম করার চেষ্টা করছিল রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাগুলো। এসময় বিজিবির বাধার মুখে নৌকাগুলি মিয়ানমারে ফেরত যেতে বাধ্য হয়।অন্যদিকে, কক্সবাজার বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্ণেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, উখিয়ার সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকালে ২২ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি।টেকনাফ-২ বিজিবি জানায়, গত ১ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্তে রোহিঙ্গা বোঝাই ৩১৮টি নৌকা ফেরত পাঠানো হয়েছে। এসব নৌকায় প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা ছিল। এসময় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তার দায়ে অন্তত ১৯জন দালালকেও আটক করা হয়েছে। আটককৃত দালালদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।