খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ২ নং কমলছড়ি ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বেতছড়ি মুখ গ্রামের এক প্রতিবন্ধী যুবকের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে স্বপ্ন প্রতিবন্ধী সংগঠন ও ট্রেনিং সেন্টার নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । যেখানে বিনামূল্যে ৪/৫ টি গ্রামের প্রায় ৪০ জন প্রতিবন্ধী শিশুকে বিনামূল্যে শিক্ষা, কম্পিউটার ও সেলায়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যার উদ্যোগে এই সংগঠনটি গড়ে উঠেছে তিনি হচ্ছেন উক্ত এলাকার শিক্ষিত প্রতিবন্ধী যুবক কিশোর চাকমা, পিতাঃ মিলন কান্তি চাকমা ও মাতা কমলাদেবী তালুকদার। তার সাথে কথা বলে জানা যায় এই সংগঠনটি তিনি গড়ে তুলেছেন সম্পূর্ণ নিজের ব্যাক্তিগত উদ্যোগে।

তিনি বলেন ২০০৯ সালে অনার্স পড়াকালীন সময়ে ছাত্রাবাস থেকে পড়ে গিয়ে কোমড়ে মারাত্বকভাবে আঘাট পান। চিকিৎসার জন্য ভারতে গেলে চিকিৎসকরা জানান এই আঘাটটি ভালো হওয়ার নই। যার ফলে হয়ে যান স্থায়ীভাবে পংঙ্গু। মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে ঠিক মত উঠে দাঁড়াতে পারেন না। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করতে হয়। তারপর ফিরে আসেন দেশে। গ্রামের বাড়িতে ফিরে তিনি বসে থাকেননি, নিজে প্রতিবন্ধী হয়েও ২০১৮ সালে গড়ে তুলেন স্বপ্ন প্রতিবন্ধী ও ট্রেনিং সেন্টার নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেখানে আশেপাশের গ্রামের প্রায় ৪০ জন প্রতিবন্ধী সহ গরীব অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের কম্পিউটার ও সেলায় প্রশিক্ষণ সহ বিনামুল্যে শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় একটি ভাঙ্গা বেড়ার ঘরে দুইটি কম্পিউটার ও ৬টি সেলায় মেশিনে কয়েক জন দরিদ্র অসহায় প্রতিবন্ধীকে হুইলচেয়ারে বসে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন প্রতিবন্ধী যুবক কিশোর চাকমা। সেলায়ের প্রশিক্ষণের জন্য রেখেছেন একজন শিক্ষক। তিনি জানান কম্পিউটার ও সেলায় মেশিন গুলো অনুদান হিসেবে পেয়েছিলেন। যেগুলো দিয়ে দরিদ্র ও অসহায় প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ দেন, সেলায়ের জন্য যে প্রশিক্ষক রেখেছেন তাকেও বেতন দেন নিজেই।

কারো কাছ থেকে সহযোগিতা পান কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পক্ষ থেকে ৩ টি সেলায় মেশিন ছাড়া এই পর্যন্ত কোনো সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহযোগিতা পাননি, এবং কি নিজে প্রতিবন্ধী হয়েও পান না কোনো প্রতিবন্ধী ভাতা। তিনি আরো বলেন তার মত অনেক প্রতিবন্ধী আছে যারা কোনো ভাতা পাচ্ছে না। খাগড়াছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যান ট্রেনিং সেন্টারটি পাকা করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো কাজ শুরু হয়নি।

তিনি সরকার এবং বিত্তশালীদের কাছে সহযোগীতা প্রার্থনা করেন, যাহাতে সমাজের অবিহেলিত দরিদ্র, অসহায় প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারেন এবং তারা যাহাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
এই বিষয়ে বেতছড়ি মূখ ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মংসিথু মারমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান কিশোর চাকমা নিজে প্রতিবন্ধী হয়েও প্রতিবন্ধীদের সাবলম্বী করার চেষ্টা করতেছেন। তিনি যে প্রতিবন্ধী ভাতা পান না তা সত্যি দুঃখজনক বলে তিনি জানান, কি কারনে কিশোর এখনো ভাতা পাচ্ছেন না, তা তিনি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন।

২ নং কমলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান সাওপ্রু মারমা বলেন কিশোর চাকমাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতদুর সম্ভব সহযোগিতা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতেও সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন। তিনি আরো বলেন তার ট্রেনিং সেন্টারটি পাকা করে দেওয়ার কাজ শীগ্রই শুরু হবে। কিশোর চাকমা প্রতিবন্ধী হয়েও কেন প্রতিবন্ধী ভাতা পান না তা জিজ্ঞেস করা হলে চেয়ারম্যান বলেন তিনি যদি নির্ধারিত আবেদন ফরমে আবেদন করেন অবশ্যই ভাতা পাবেন।

মিল্টন চাকমা কলিন, (মহালছড়ি) খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি