তানোরে রোপা আমন মৌসুমে (কারেন্ট) গাছ ফড়িং পোকা দমনে সফল হওয়ায় প্রতি বছর রোপা আমন ধানের ফলন বেড়েছে সাড়ে ১১হাজার মেট্রিক টন। গত ২বছরে ২৩হাজার মেট্রিক টন ধান বেশী উদপাদন হয়েছে। কৃষকরা ধান বিক্রি করে প্রতি বছর (বর্তমান বাজার মুল্যে) আড়াই কোটি টাকা লাভবান হয়েছেন। গত ২বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকা কৃষকদের অর্থনীতিতে যোগ হয়েছে। ফলে একদিকে যেমন কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন অন্য দিকে দেশের জাতীয় খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক ভুমিকা রাখছে। বর্তমানে ধান চাষ কৃষকদের কাছে লাভ জনক ফসলে পরিনত হচ্ছে।

তানোর উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তানোর উপজেলায় প্রতি বছর ২৩হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করা হয়। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক জমিতে মাদামী গাছ ফড়িং পোকার আক্রমনের ফলে ফলনের দিক থেকে ক্ষতির মুখে পড়তেন কৃষকরা। অপর দিকে জাতীয় উৎপাদনে ও কৃষকদের অর্থনীতিতে বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ক্ষতি হতো। ধান চাষে লাভবান না হওয়ায় কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছিল। গত ২বছর ধরে গাছ ফড়িং (কারেন্ট) পোকার আক্রমন থেকে রোপা আমন ধান রক্ষা করতে পারায় যেমন ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। সেই সাথে জাতীয় উদপাদন ও স্থানীয় কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবার হওয়ায় স্থানীয় অর্থনীতি চাংগা হয়েছে। এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তানোর উপজেলা কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলে শুধুমাত্র গাছ ফড়িং (কারেন্ট) পোকার আক্রমনে বছরে প্রায় সাড়ে ১১হাজার মেট্রিক টন ধানের ফলন কম হয়। তিনি বলন, গাছ ফড়িং (কারেন্ট) পোকা এমন একটি পোকা যা মুহুর্তের মধ্যে ধানের ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে এবং ফলন কমে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েন, এ পোকার আক্রমন দেখামাত্রই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারলেই ধানের ক্ষতি রোধ করা সম্বব।

গত ২বছর ধরে এ পোকার আক্রমন বুঝে ব্যবস্থা নেয়ায় ধানের মেতন কোন ক্ষতি হয়নি। ফলে ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে সাড়ে ১১হাজার মেট্রিক টন। তিনি আরো বলেন, ফড়িং পোকার আক্রমন থেকে ধান রক্ষা করে এবং ভালো ফলনের জন্য কৃষকদের মধ্যে আদর্শ বীজ সরবরাহ, লাইনে ধান রোপন, সুসম সার ও কিটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে আগ্রহী করে তোলার পাশাপাশি বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমন থেকে রোপা আমন ধান রক্ষা করতে এলাকায় মাইকিং, লিপলেট বিতরন, কৃষকদের নিয়ে গ্রামে গ্রামে নিয়মিত উঠান বৈঠক করা, জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা এবং জুম্মার নামাজের পর মসজিদে মসজিদে গাছ ফড়িং পোকা দমনে বিশেষ পরামর্শ দেয়া, শিক্ষকদের সচেতনতা মুলক সভা করা, এনজিও কর্মিসহ বিএমডিএ’র গভীর নলকুপ অপালেটরদের নিয়ে সভা করা, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদেরকে মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সাথে সম্পৃক্ত করে সারাক্ষন সরাসরি কৃষকদের সাথে মাঠে রাখা এবং সকল কৃষি কর্মকর্তাদের শুক্রবার ও শনিবারের ছুটি বাতিল করে কৃষকদের সাথে মাঠে থেকে জমির ধান গাছ প্যার্সিং করা এবং পাখি বসার জন্য জমির মধ্যে ধঞ্চ্যা গাছ প্যাচিং করে দেয়া এবং কৃষক গ্রুপকে কাজে লাগিয়ে কৃষকদের সচেতন করায় গাছ ফড়িং পোকা আক্রমনে রোপা আমন ধানের ক্ষতি করতে পারেনী। তিনি আরো বলেন শুধুমাত্র গাছ ফড়িং পোকার আক্রমনে প্রতি বছর সাড়ে ১১হাজার মেট্রিক টন ধান উদপাদন কম হতো, গত ২বছর থেকে রোপা আমন ধানের ফলন বেড়েছে সাড়ে ১১হাজার মেট্রিক টন। গত ২বছরে ২৩হাজার মেট্রিক টন ধান উদপাদন বেশী উৎপাদন হয়েছে। তিনি বলেন ২বছরে ২৩হাজার মেট্রিক টন ধান বেশী উদপাদন হওয়ায় তানোরের কৃষকদের অর্থনীতিতে ৫কোটি টাকা বেশী যোগ হয়েছে। এব্যাপারে জাতীয় স্বর্ন পদক প্রাপ্ত আদর্শ কৃষক নুর মোহাম্মদ বলেন, তানোর উপজেলা কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলামের কর্মদক্ষতা ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কঠোর প্ররিশ্রমের ফলে গত ২বছর ধরে বাদামী গাছ ফড়িং পোকার আক্রমনে রোপা আমন ধানের ক্ষতি করতে না পারায় উদপাদন ফলন বেড়েছে। তিনি বলেন ২বছর আগে কৃষকরা গাছ ফড়িং পোকার আক্রমন দিশে হারা হয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিয়ে কোন সহযোগীতা না পাওয়ায় পোকার আক্রমন ঠেকাতে পারতেন না ফলে উদপাদন ফলন কম হওয়ায় কৃষকদেরকে ক্ষতির মুখে পড়তে হতো।

কৃষকদের প্রতি আন্তরিক বর্তমান কৃষি অফিসার তানোরে যোগ দেয়ার পর থেকে গাছ ফড়িং পোকা দমনে কৃষকদেরকে সচেতন করতে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহন করায় ফড়িং পোকার আক্রমনে ধানের ক্ষতি হয়নি একারেনই ফলন বেশী হয়েছে এবং কৃষকরা রোপা আমন ধানের আবাদ করে লাভের মুখ দেখেছেন। তিনি আরো বলেন কৃষি কর্মকর্তার দুরদর্শিতা ও সারাক্ষন মাঠ পর্যায়ে থেকে কঠোর পরিশ্রম করছেন। তানোরের কৃষকরা ধান চাষ করে ফলন ভালো পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন এবং ধান চাষের পাশাপাশি তানোরের কৃষকরা আলুসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদে ঝুকে পড়েছে। কৃষ্ণপুর গ্রামের আদর্শ আলু চাষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকে আলু চাষ করে আসছি বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কৃষি অফিসে গেলে তেমন একটা সহযোগীতা পাওয়া যেতনা, কিন্তুগত ২বছর বর্তমান কৃষি অফিসারের কাছে যেকোন সমস্যার বিষয়ে পরামর্শ চাওয়া মাত্রই তিনিসহ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে এসে সমস্যা গুলো চিহিৃত করে আন্তরিক ভাবে পরামর্শের পাশাপাশি সহযোগীতা করছেন। তিনি আরো বলেন কৃষকরা যেন চাষাবাদ করে লাভবান হতে পারে সেজন্য তিনি জমি’র ধরন বুঝে ধান চাষসহ বিভিন্ন ফসল চাষের জন্য কৃষকদের উদবুদ্ধ করার পাশাপাশি সহযোগীতা করছেন, তিনি বলেন বর্তমান কৃষি অফিসার কৃষকবান্ধব অফিসার। #

সাইদ সাজু, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি