বরেণ্য বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক অজয় রায় বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের সামনের ভাস্কর্য সরিয়ে নিলে এর বিরুদ্ধে তরুণ শক্তিকে আন্দোলনে নামতে হবে। ভাস্কর্যটি ন্যায়ের প্রতীক, এটা কোনো সাধারণ মূর্তি নয়। এটি থাকার প্রয়োজন আছে কি নাÑসে সিদ্ধান্ত আদালত নেবে।বুধবার নারীর জন্য নিরাপদ হোক পয়লা বৈশাখ’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে অজয় রায় এসব কথা বলেন। রাজধানীর ব্রতী কার্যালয়ে পয়লা বৈশাখে নারীর নিরাপত্তার লক্ষ্যে নাগরিক নজরদারির গুরুত্ব বোঝাতে এ সম্মেলনের আয়োজন করে নারীর জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ আন্দোলন।
অজয় রায় আরও বলেন, ভাস্কর্য আর মূর্তি এক নয়Ñএটি হেফাজতকে বোঝাতে হবে। তরুণ সমাজকে বোঝাতে হবে, যেখানে-সেখানে ধর্মের নামে সংস্কারমূলক কথাবার্তা বা কাজ চলবে না।ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুখে যতই অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলুক, সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোকে হেফাজতীকরণ করা হয়েছে।ছাড় দিয়ে পাঠ্যপুস্তকগুলো হেফাজতে ইসলামের চাহিদামতো ছাপানো হলো, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের গ্রিন সিগন্যাল না এলে একটি বাক্যও ছাপানো হয় না।বর্ষীয়ান এই শিক্ষক বলেন, ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম, মানবতার ধর্ম। অথচ কয়েকটি সংগঠন ধর্মকে পুঁজি করে নারীকে কেবল রান্নাঘরের জীব হিসেবে আর রাতে পুরুষের সঙ্গী হিসেবে পেতে চায়। এই মনোভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা বলেন, দেশের সব জায়গাতেই নারীরা সহিংসতা, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। মেয়েরা ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপদ নন।দুই বছর আগে পয়লা বৈশাখের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বেশ কয়েকজন নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। মেয়েরা এখন বাইরে গিয়ে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত পরিবারকে আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে রেহাই পেতে সরকার-প্রশাসনের পাশাপাশি নাগরিক সমাজকেও দায়িত্ব নিতে হবে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মুনিরা খান বলেন, এই সময়ের প্রেক্ষাপটে এটি অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি কার্যক্রম। এ আন্দোলন পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে। হারিয়ে যাওয়া আগের সেই সামাজিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে হবে।অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দুই বছর আগে পয়লা বৈশাখে কয়েকজন নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হন। এসব ঘটনা নিয়ে এ সংগঠনটি গঠিত হয়েছে। এই সংগঠনের আওতায় গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ২২টি স্থান স্পর্শকাতর চিহ্নিত করে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নজরদারি কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এ বছরেও এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তাঁদের স্বেচ্ছাসেবকেরা মাথায় নীল রঙের ব্যান্ডেনা বেঁধে সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। এতে মানুষকে সচেতন করতে প্রচারপত্রও বিলি করা হবে।অনুষ্ঠানে সংগঠনটির আহ্বায়ক শারমীন মুরশীদ বলেন, দেশকে নারীর জন্য নিরাপদ করতে হবে। এর অংশ হিসেবে প্রয়োজন নাগরিক অংশগ্রহণ ও নিবিড় নজরদারি। তবে পয়লা বৈশাখকে ঘিরে প্রশাসনের নিরাপত্তাব্যবস্থা যেন উৎসবকে সংকুচিত না করে বা এর নিজস্বতা যাতে হারিয়ে না যায়, তা খেয়াল রাখতে হবে।