সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় বাতিলের পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতে জাতি উদ্বিগ্ন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।সরকার রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি স্তম্ভ শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে। এসময়, এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ব্যারিস্টার সালাম তালুকদার স্মৃতি সংসদ’র উদ্যোগে সাবেক মহাসচিব ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

উল্লেখ্য, গত বুধবার বন্যা পরিস্থিতিসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাক্ষাৎ করেন। রায় নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপ্রধান মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে যান। তার সঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও ছিলেন।রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা গতকাল দেখলাম প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং নিজে অ্যাটর্নি জেনারেল এবং আইনমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পরে এভাবে সাক্ষাৎ করায় জাতি উদ্বিগ্ন এবং হতাশ। এর আগেও আমরা দেখেছি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেন।সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তৎপরতা রাষ্ট্রদ্রোহীতার সামিল এবং এ জন্য ভবিষ্যতে তাদের জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মানুষ মনে করে বর্তমান রাজনীতিতে এ রায়ে যে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মানুষের জন্য, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য, সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য এ রায় শুধু যুগোপযোগী নয়, ঐতিহাসিকও। আমি মনে করি এটি একটি দলিল।তিনি আরও বলেন, এখানেই আওয়ামী লীগের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। সরকার দেখছে যে তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই।আওয়ামী লীগ যে দেশে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন শাসন চালিয়ে আসছে তার প্রকাশ ঘটেছে এই রায়ের মধ্য দিয়ে দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, বিচার বিভাগ নিজেরাই বলেছে, সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীসহ আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সাক্ষাতকে ‘নজিরবিহীন’ আখ্যায়িত করে উদ্বেগ জানিয়েছে বিএনপি।মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে রায় হয়ে গেছে, সুপ্রিম কোর্ট সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়ে দিয়েছে, সেই রায়ের বিরুদ্ধে তারা(সরকার) অবস্থান নিয়ে রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। আমরা এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।সরকার ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ’ করছেঅভিযোগ করে এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় গত ১ অগাস্ট প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।এই সাক্ষাৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখররু বলেন, এই সাক্ষাৎ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে, নিঃসন্দেহে সমগ্র জাতিকে, সমগ্র মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। যেটা হওয়ার কথা নয়, নজিরবিহীন।বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন আগে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ এবংমন্ত্রী-এমপিদের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা,অশ্লীল-অশ্রাব্য কথাবার্তা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় চলতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।আশঙ্কা করছি নতুন করে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, গণতন্ত্র যেটুকু অবশিষ্ট আছে সেটুকুকে ধ্বংস করে দেওয়ার।বিচার বিভাগের ক্ষমতা হরণ এবং তার স্বাধীনতা হরণের যেকোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।গণতন্ত্র রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে শুধু বিএনপি নয়, সমস্ত রাজনৈতিক দল, সমস্ত সংগঠন, ব্যক্তি, সুশীল সমাজ সকলের এগিয়ে আসা উচিৎ বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য, তার সংবিধানকে রক্ষা করার জন্য, তার গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য। আজকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই অপশক্তিকে প্রতিরোধ করতে হবে ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে।

ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের অভিযোগ তুলে এজন্য ভবিষ্যতে তাদের বিচারের মুখোমুখি করারহুঁশিয়ারি দেন বিএনপি মহাসচিব।তিনি বলেন, আজকে যারা এই রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছেন, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছেন তাদের ভবিষ্যতে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কারণ আপনারা রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন, এটা নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রবিরোধী কার্য্কলাপের ভেতরে পড়ে।আপনারা কথায় কথায় আমাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী মামলা দেন। আরে প্রকাশ্যে তো আপনারা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করছেন, দেশকে ধ্বংস করছেন, সংবিধানকে ছিন্ন-ভিন্ন করে ফেলছেন। এসব প্রত্যেকটির বিচার আজকে হোক, কালকে হোক জনগণ করবে। ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোয় আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় নিয়ে তার বিচার হওয়া উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, যে অন্যায় তিনি করেছেন… যে শর্ট রায় তিনি দিয়েছেন, সেটাকে ১৬ মাস পরে পরির্বতন করে আরেকটা ভিন্ন রায় দিয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে আমরা মনে করি, আইনজীবীরা মনে করেন, দিস ইজ অ্যা ক্রিমিনাল অফেন্স।সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সুজাত আলীর পরিচালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুজ্জামান দুদু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতন, সিরাজুল হক, এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, ওয়ারেস আলী মামুন, সাঈদুর রহমান সাঈদ, আনোয়ার হোসাইন, শফিউল বারী বাবু, নিলোফার চৌধুরী মনি, এটিএম আবদুল বারী ড্যানি, শামসুজ্জামান মেহেদি, হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন, সাদিয়া হক, প্রয়াত সালাম তালুকদারের জামাতা এম হাসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে প্রয়াত সালাম তালুকদারের স্ত্রী মাহমুদা সালাম, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।