গত দুই সপ্তাহ ধরেই পেঁয়াজের বাজার চড়া। দেশি পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দর হয়েছিল ৫৫ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৫০ টাকা। চলতি সপ্তাহে পেঁয়াজের দামে আরেক দফা হাওয়া লেগেছে। কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ এখন ৭০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।পঁয়াজের চড়া দামের সঙ্গে নতুন করে এখন যুক্ত হয়েছে আদাও। চলতি সপ্তাহেই কেজিপ্রতি আদা ১০০ টাকা থেকে এক লাফে বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০ টাকায়।

শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মাদপুর কাঁচাবাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার ও আজিমপুর কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়। পেঁয়াজের ক্রমাগত চড়া দাম এবং নতুন করে যুক্ত হওয়া আদার চড়া দাম সম্পর্কে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। তারা যেমনটি বলছেন, আদা ও পেঁয়াজের বাজার পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। পেঁয়াজের আমদানিতে ভাটা পড়ায় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দাম। তাছাড়া টানা বৃষ্টিপাত ও বন্যায় ক্ষতি হয়েছে দেশীয় পেঁয়াজের চাষ ও মজুতে।অন্যদিকে আদার আমদানিও কমেছে গত কয়েক সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য হারে। ফলে বাজারে আদার দামও বাড়তি। নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতা এনায়েত হোসেন বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন আদা ও পেঁয়াজের আমদানি নাকি কমেছে। ফলে বাজারে দাম বাড়তির দিকে। বাড়তি দাম দিয়ে কিনে এখন আমাদের বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। মোহাম্মাদপুর কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতা মিজান বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম হঠাৎ করে কেন যেন বেড়ে যাচ্ছে। একটি পণ্যের দাম কমলে হঠাৎ করে আরেকটির দাম বেড়ে যায়। তবে পেঁয়াজ ও আদার দাম শিগগির কমবে বলে মনে হচ্ছে না।অন্যদিকে এক মাস ধরে চলা সবজির বাজারে দামের পাগলা ঘোড়া কিছুতেই বাধ মানছে না। সবজির সর্বশেষ খুচরা বাজারের তথ্য অনুযায়ী প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, বেগুণ ৭০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, গাজর ৭০ টাকা, ধনিয়াপাতা ২০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, শিম ১৬০ টাকা, শসা ৫০ টাকা ও আলু ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।নাজিরশাইল ছাড়া বাকি সব চালের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। ৬৭ টাকা থেকে ৩ টাকা বেড়ে গিয়ে নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। চালের বাজারে দামে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। প্রতিকজি মিনেকেট ৬০ টাকা, বিআর-২৮ কেজিপ্রতি ৫০-৫৫ টাকা ও স্বর্ণা ও পারিজা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।অন্যদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে সব নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও মাছ-মাংসের দাম।

সর্বশেষ খুচরা বাজারদর অনুযায়ী, দেশি রসুন কেজিপ্রতি ৮০ টাকা, আমদানি করা রসুন ৮৫ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১০০ টাকা, আমদানি করা ডাল ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।মাছের সর্বশেষ বাজার দর প্রতি কেজি বড়, মাঝারি ও ছোট চিংড়ি যথাক্রমে ৭৫০, ৭০০ ও ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি রুই মাছ ২০০-৩০০ টাকা করে, কাতলা মাছ ১৮০ টাকা, রূপচাঁদা ৭০০ টাকা, শিং মাছ ৩৮০ টাকা ও পাঙ্গাশ মাছ ১২৫ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ টাকা করে কেজি, বোয়াল ২৮০ টাকা করে কেজি ও সিলভার কার্প ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এ খবরে দেশি পেঁয়াজের মজুদদাররা বাজারে বিক্রি কমিয়ে দিয়েছে। ফলে সরবরাহ কম থাকায় বাজারে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ ও আমদানি পেঁয়াজের দাম ৫০-৫৫ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে যেখানে দেশি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং আমদানি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হত।এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে গড়ে প্রায় ৪৭ শতাংশ। সংস্থাটির হিসেবে, এ সময়ে দেশি পেঁয়াজের দাম ৪২ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫৩ শতাংশ। আর এক সপ্তাহে কেজিতে দেশি ও আমদানি পেঁয়াজ বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ অক্টোবর (মঙ্গলবার) প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ ও আমদানি পেঁয়াজের দাম ৫৫-৬০ টাকা। এক মাস আগে দাম ছিল দেশি পেঁয়াজের ৪৫ থেকে ৫০ টাকা আর আমদানি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।দাম বেশির কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. হাবিব বলেন, ১০-১২ দিন ধরে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি। ভারতে যখন পেঁয়াজের দাম বাড়ার খবর শুনি তখন দেশের বাজারে এমনেই দাম বেড়ে যায়। আজকে প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৩০০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ২৫০ খেকে ২৭০ টাকা।খুচরা বিক্রেতা আনোয়ার জানান, হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দাম বাড়ানো ও কমানোর পিছনে আমাদের মত খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনো কিছু করাই নেই। কারণ আমাদের বেশি দামে কিনা তাই বিক্রিও বেশি দামে করতে হয়। সপ্তাহ দুয়েক আগে ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। এখন ঘাটে দেশি পেঁয়াজ কেনাই পরে ৬০ টাকার উপরে। ৬৫ থেকে ৭০ টাকা তো বিক্রি করতে হবেই।শান্তিনগর বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা সুরুজ জানান, ‘এক কেজি পেঁয়াজ ৬০ টাকা বল্লাম দেবে না। একদাম ৬৫ টাকা। পেঁয়াজ ছাড়া তো চলে না, নিতেই হবে। পেঁয়াজের দাম বাড়ায় খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের সমস্যা হচ্ছে। এভাবে সব পণ্য বাড়াতে আমরা এখন বিব্রত।এদিকে রাজধানীর কাঁচাবাজরগুলোতে কাঁচা মরিচের দাম কমেছে। তবে গত সপ্তাহের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য শাক-সবজি। শীতের সবজি বাজারে ভালোভাবে না আসা পর্যন্ত বাড়তি এ দাম কমবে না বলে মনে করছেন বিক্রেতারা।