বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা এমন সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই, যে সরকার নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে না। জনগণ তাদের ভোটাধিকার সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারবে। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই একটি সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।

সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, তার কথায় মনে হয় তিনি আবারও ২০১৪ সালের মতো একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে চান। কিন্তু সে রকম আর হতে দেওয়া হবে না। দেশের মানুষকে আন্ডারস্টিমেট করবেন না। এই দেশের মানুষ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। তাই আশা করবো সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদেরও একহাত নিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বললেন, খালেদা জিয়া ও তার ছেলের বিরুদ্ধে নাকি ১২ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সংবাদ তারা কেন প্রকাশ করেননি। আমরা তার সেই বক্তব্যের পর তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখলাম দেশের বাইরে তাদের কোথাও কোনো সম্পদ নেই। এটা এক ধরনের মিথ্যাচার। দেশের মানুষ আমাদের বলেন- আপনারা আন্দোলন করতে পারেন না কেন? আমরা বলি ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শক্তির লড়াই অসম লড়াই।আগের বারের মতো একাদশ সংসদ নির্বাচনেও বিএনপিকে বাইরে রাখতে সরকার ‘কু-রাজনীতি’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।বিএনপির সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ না নেওয়ার কথা জানানোর পাশাপাশি খালেদা জিয়ার সম্পদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কথার পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযোগ করেছেন তিনি।

ফখরুল আলোচনা সভায় বলেন, এই খবর (খালেদা জিয়ার বিদেশে সম্পদ) পাওয়ার পরে আমরা তন্ন তন্ন করে খুঁজছি, সব জায়গায়। আমরা জিজ্ঞাসা করেছি রাষ্ট্রদূতদের, এর কোনো ভিত্তি আছে কি না? কোনো ভিত্তি নেই, কোনো সত্যতা নেই।এই কু-রাজনীতি করে কী আনতে চান? আপনারা নির্বাচন আবারও করতে চান ২০১৪ সালের মতোই। ২০ দলীয় জোট, বিএনপিকে দূরে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, তাই তো শুরু করেছেন।নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও একই দাবি তুলে সরকারকে আলোচনার উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানায় দলটি।বিএনপির আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপিই ‘নাকে খত দিয়ে’ ভোটে আসবে।‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে’ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ফখরুল সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আর কখনোই ২০১৪ এর মতো নির্বাচন হতে দেবে না।বাংলাদেশে মানুষকে আন্ডার এস্টিমেট করবেন না। সব কিছু যে সহ্য করে নেবে, সব কিছু যে মেনে নেবে- এটা মনে করবেন না।

তিনি বলেন, একটি পার্টির সাধারণ সম্পাদককে (আমিনুর রহমান) পর্যন্ত গুম হয়ে যেতে হল, কোনো খবর নেই আজকে ৯৭ দিন। একজন সাবেক রাষ্ট্রদূতকে গাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সংসদ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলীসহ আমাদের নেতা ইলিয়াস আলী, কমিশনার চৌধুরী আলমসহ অসংখ্যক মানুষকে গুম করা হয়েছে। কোথায় যাবেন? এরা এভাবে ভিন্নমত যে পোষণ করবে, তাদের মতের বাইরে যে যাবে, এভাবে তাদেরকে তারা (সরকার) গুম করে দেবে। সেই দলটিকে আমরা কি গণতান্ত্রিক দল বলতে পারি? এই দলটি (আওয়ামী লীগ) গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে অতীতে। যখনই তারা ক্ষমতায় আসে, তাদের আসল ফ্যাসিস্ট চেহারাটা পরিষ্কার হয়ে ফুটে উঠে।গত ২৭ অগাস্ট আমিনুর রহমানকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ তিনি।কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, সরকার তার সকল ক্ষমতা নিয়ে নিয়ে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটকে নিষ্ক্রিয়, নিস্তেজ, স্তব্ধ করার জন্যে সকল প্রকার ষড়যন্ত্রমূলক ও অষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে।আমরা যদি সাবধান না থাকি, তাদের যে কোনোরকম দুরভিসন্ধিমূলক পদক্ষেপের মধ্যে পড়ে আমরা বিপথগামী হতে পারি। আমার আবেদন থাকবে, তাদের উস্কানিমূলক কর্মকান্ডে আমরা পা দেব না।সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, নাকে খত দিয়ে আসতে হবে (বিএনপিকে)। এটা কি উনার বক্তব্য, না উনি ভারতের দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে পাওয়া নির্দেশনা? আওয়ামী লীগ কি নিজেদের শক্তিতে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, না ভারতীয়রা কলকাঠি নাড়ছেন?কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নুরুল কবির ভুঁইয়া পিন্টুর পরিচালনায় আলোচনা সভায় জাগপার সভাপতি রেহানা প্রধান, এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্তজা, ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, কল্যাণ পার্টির নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ, কাহির মাহমুদ, আজাদ মাহবুব, শাহজাদা আলম, মো. ইলিয়াস হোসেন, শাহিদুর রহমান তামান্না, নজরুল ইসলাম, বনি আমিন বক্তব্য রাখেন।অনুষ্ঠানে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফোরকান ইবরাহিম, বিএনপির আখতারুজ্জামান, সারোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান উপস্থিত ছিলেন।