বাংলাদেশে ছয় লাখের মতো ভিক্ষুক রয়েছে। এদের বেশির ভাগই প্রফেশনাল (পেশাদার) ভিক্ষুক এবং তাদের কিছু করা যায় না। কোনোমতেই ভিক্ষাবৃত্তির বাইরে নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না।বৃহস্পতিবার সকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহের চতুর্থ দিনে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় দুর্নীতি প্রতিরোধে শ্রেষ্ঠ কমিটির সদস্যদের পুরস্কৃত করতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দুদক।অর্থমন্ত্রী বলেন, ভিক্ষুকদের যতই সাহায্য করা হোক না কেন, তারা আবার ফিরে যায়। তিনি বলেন, এদের কিছুদিন কোথাও বসানো হলে, একটা ঘরবাড়ি দেওয়া হলো, কিছুদিন পর আবার সেই ভিক্ষাতে ফিরে যায়।অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় এলে দেশে কোনো ভিক্ষা বৃত্তি থাকবে না। নতুন জেনারেশন শুদ্ধাচার কৌশল অনুসরণ করবে। দুদক ওয়াচডগ হিসেবে থাকবে। তারা লোকজনকে নীতিকথা শোনাবে। দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে, সেটা ৮ বা ১০ বছর পরে আর কেউ বলবে না।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, মানুষ সাধারণত অভাবের কারণে দুর্নীতি করে। বর্তমান সরকারের আমলে দেশের দুর্নীতি অনেক কমে গেছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, অভাবের কারণে না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে, এমন মানুষ এখন বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া কঠিন। এরপরও যাঁরা দুর্নীতি করছেন, তাঁরা লোভের কারণে করছেন।দুদকের প্রতিরোধমূলক কর্মসূচির প্রশংসা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, কী উপায়ে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠিত করা যায় এবং সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করা যায়, দুদকের এ-জাতীয় কর্মসূচি তারই প্রকাশ। তিনি বলেন, আগামী কয়েক বছরে মধ্যেই হয়তো এমন অবস্থার সৃষ্টি হবে, তখন দেশটি দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছেÑএ মন্তব্য করার সুযোগ থাকবে না। দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা করার ক্ষেত্র কমে আসবে। তখন কমিশনকে শুদ্ধাচার বিকাশে প্রচার-প্রচারণায় অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে।অনুষ্ঠানের সভাপতি দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, শেয়ারবাজারের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কিছু সিএ ফার্ম যোগসাজশ করে বিভিন্ন সময় আর্থিক বিষয়ের ভুল তথ্য দেওয়ায় সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা প্রতারিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।কমিশনে এসেছে, এমন একটি অভিযোগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান একই বছরের ভিন্ন ভিন্ন আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করিয়ে বিভিন্ন সংস্থায় ব্যবহার করছে। তিনি এ বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আয়কর বিভাগে যে আর্থিক বিবরণী দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে আইপিওর জন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে জমা দেওয়া আর্থিক বিবরণী কিংবা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য জমা দেওয়া আর্থিক বিবরণীর কোনো মিল নেই। এটা কীভাবে সম্ভব? ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিবছরের প্রতিটি আর্থিক বিবরণী অবশ্যই একই হতে হবে।

বিষয়টি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমরা এ ধরনের অভিযোগ পেয়েছি; তবে এখনো তদন্তে যাইনি। আমরা প্রত্যাশা করি, সিএ ফার্মগুলো সঠিক তথ্য প্রদান করবে। তবে সেটি না হয়ে থাকলে আমরা অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিষয়টি কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তদন্ত করে দেখতে পারেন, অথবা আমরাও তদন্ত করতে পারি।

কিছু লোক সব সময় ভিক্ষা করবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেটা থাকবে। কিন্তু প্রয়োজনে ভিক্ষা, সেটা যাতে না থাকে সেই ব্যবস্থা আপনাদের সরকার, শেখ হাসিনার সরকার করে রাখছে।আমার শৈশব, কৈশোর এমনকি যৌবনেও দেখেছি, বাগেরহাটে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় মানুষের না খেয়ে মৃত্যু খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। এখন কোথাও না খেয়ে মারা যায় না। আমার মনে হয় বাংলাদেশে এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।মুহিতের বিশ্বাস, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যখন শুদ্ধাচার কৌশল অনুসরণ করবে, তখন দুর্নীতির দায়ে শাস্তির প্রয়োজনও কমে আসবে।তখনও এন্টি করাপশন কমিশনের প্রয়োজন হবে, কারণ শুদ্ধাচারের প্রচার তখনও চালাতে হবে। কিন্তু শাস্তি দেওয়া তখন প্রধান লক্ষ্য হবে না।অর্থমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির মামলা এখন সংখ্যা কমে গেছে এবং অধিকাংশ মামলায় শাস্তি হচ্ছে।তবে তাতে দুর্নীতি কমেছে কিনা সেই বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা তিনি তার বক্তব্যে দেননি।

মুহ্তি বলেন, এখন দুদকের মামলায় ৭০ ভাগ শাস্তি পায়। এটাই হবে ভবিষ্যৎ। তখন এন্টি করাপশন কমিশন ওয়াচ ডগ হিসেবে থাকবে। তারা লোকজনকে নীতিকথা শোনাবে। দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে- এমন কথা আট বা ১০ বছর পরে আর বলা যাবে না।দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ অনুষ্ঠানে বলেন, অভাবের কারণে দুর্নীতির নজির এখন আর মিলবে না।বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীলের দেশের স্বীকৃতির পথে। আমরা সামাজিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের আরো উন্নতি হত, যদি আমরা লোভের কারণে দুর্নীতি বন্ধ করতে পারতাম।তিনি বলেন, কোনো কোনো অসাধু কোম্পানির কর্তারা ইদানিং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে এমন আর্থিক বিবরণী দিচ্ছেন, যা সঠিক নয়।ওগুলো তৈরি করে সিএ ফার্ম। কিন্তু ওইসব সিএ ফার্মই আবার ভিন্ন ভিন্ন আর্থিক বিবরণী ব্যাংক ও আয়কর বিভাগে জমা দিচ্ছে। এটা কী করে সম্ভব!এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বিষয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দেখাবেন কিনা, অথবা আপনি বললে আমরাও দেখতে পারি। কারণ এটি একটি দুর্নীতি।দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে অন্যাদের মধ্যে দুদক কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) জাফর ইকবালসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।