শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী নিয়ে প্রশ্ন করায় এক গণমাধ্যমকর্মীর প্রতি ক্ষুব্ধ আচরণের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। ঘটনার একদিনের মাথায় শনিবার দুপুরে গণমাধ্যমের কাছে এক বিবৃতিতে গণফোরাম সভাপতি স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রণীত আইনগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারা সর্বদাই বিশেষ আবেগ অনুভূতির বিষয় বলেও উল্লেখ করেন।

শুক্রবার সকালে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে একপর্যায়ে জামায়াত সম্পর্কিত প্রশ্নে ক্ষেপে যান সংবিধানের অন্যতম এই প্রণেতা।ক্ষিপ্ত হয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, বেহুদা কথা বলো, কত পয়সা পেয়েছ এই প্রশ্ন করতে? কার কাছ থেকে পয়সা পেয়েছ? এই জায়গায় এই রাজনৈতিক প্রশ্ন করতে । তোমার নাম কী? জেনে রাখব তোমাকে। চিনে রাখব। পয়সা পেয়ে শহীদ মিনারকে অশ্রদ্ধা করো তোমরা? আশ্চর্য, শহীদদের কথা চিন্তা করো! চুপ করো, চুপ করো! খামোশ, আশ্চর্য!, যোগ করেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ।ড. কামালের এ মন্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। তার পরিপ্রেক্ষিতেই বিবৃতি দিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন ঐক্যফ্রন্টের নেতা।

গণফোরামের সভাপতি বলেন, মহান শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য অসামান্য তাৎপর্যপূর্ণ। আমিও প্রত্যেক বছরের মতো এবারও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মিরপুরের স্মৃতি সৌধে গিয়েছি। এই দিনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, যার মধ্যে আমার অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাও ছিলেন।১৯৭২-৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রণীত আইনগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারা সর্বদাই বিশেষ আবেগ অনুভূতির বিষয়’- এমনটা উল্লেখ করে কামাল হোসেন বলেন, আমি বিশ্বাস করি, সর্বস্তরের মানুষ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শুধুই শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য যায়।ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে গণফোরাম সভাপতি বলেন, ১৪ ডিসেম্বরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে স্মৃতিসৌধের বেদিতে দাঁড়িয়ে আমি বলেছিলাম, আমরা কত মেধাবী সন্তানদের হারিয়ে, তবেই স্বাধীনতা পেয়েছি।তখন হঠাৎ করে বেদিতেই আমার কাছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলো। আমি তাৎক্ষণিক সবিনয়ে বলি, আজকে এই দিনে যেখানে আমাদের গভীর অনুভূতির বিষয়, এই বিষয়ে এখানে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। পুনরায় একই প্রশ্ন তুললে আমি একই মনোভাব ব্যক্ত করি।কিন্তু তৃতীয়বার ভিড়ের মধ্য থেকে কোথাও অনবরত দুই থেকে তিনবার আমি শুধু ‘জামাত জামাত’ শব্দ শুনতে পাই। তখন আমার খুবই খারাপ লেগেছিল এবং আমি প্রশ্নকর্তাকে থামানোর চেষ্টা করেছিলাম, বিবৃতিতে যোগ করেন ঐক্যফ্রন্ট নেতা।যদি আমার বক্তব্য কোনোভাবে কাউকে আহত বা বিব্রত করে থাকে, তাহলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সারা জীবন সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিজের শামিল থাকার কথা উল্লেখ করে ড. কামাল আরো বলেন, আশা করি, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানগণ তাদের জীবনের বিনিময়ে যে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা আমরা সকলে মিলে গড়তে সক্ষম হব।