ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের শাহপুর ঘিঘাটি গ্রামের ফুলচাষি আনোয়ার হোসেন বলছিলেন তিন বিঘা জমিতে গাঁদা, রজনী ও গ্লাডিয়াস ফুলের চাষ করেছিলেন কৃষক আনোয়ার হোসেন। দু’সপ্তাহ হলো ফুল বেচাকেনা বন্ধ। ফলে জমিতেই ফুল নষ্ট হচ্ছে। এদিকে ফুল তুলে ফেলে না দিলে গাছ মরে যায়। গাছ থেকে একবার ফুল তুলে ফেলে দিতে প্রায় চার হাজার টাকা খরচ হয়। দু’সপ্তাহে দু’বার ক্ষেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিয়েছেন। এদিকে কবে ফুলের বাজার শুরু হবে তাও অনিশ্চিত। পকেটের টাকা খরচ করে এভাবে ফুলগাছ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে এখন ফুল গাছ তুলে ফেলে দিতে হচ্চে। এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে করোনা ভাইরাসের কারনে। এ ভাইরাসের কারনে সারাদেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। ফলে দেশের সব ফুলের বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। এ বছর প্রায় দুই লক্ষাধিক টাক খরচ করে এই চাষ করেছিলাম। যা করোনার কারনে সবই মাটি হয়ে গেল। একই রকম অবস্থা জেলার হাজার হাজার ফুলচাষিদের। এবছর ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় ২০৪ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছিল। গেল বছর এ জেলায় চাষ হয়েছিল ২৪৫ হেক্টর। প্রতিবছর সব থেকে বেশি ফুলের চাষ হয় জেলা সদর উপজেলার গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে। ১৯৯১ সালের কথা। ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহে কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সৌখিন কৃষক ছব্দুল শেখ সর্বপ্রথম ফুল চাষ করেন। ওই বছর মাত্র ১৭ শতক জমিতে ফুল চাষ করে ৩৪ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেন। এরপর থেকে এলাকায় বিভিন্ন জাতের ফুল চাষের বিস্তার লাভ করতে থাকে। সেখান থেকে শুরু হয়ে বর্তমানে জেলার হাজার হাজার কৃষক ফুলচাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি হচ্ছে। সাথে সাথে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজার হাজার ফুলকর্মী নারী-পুরুষের। কিন্তু চলতি মৌসুমে বৈশি^ক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে ফুলচাষি ও ফুলকর্মীদের সে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। ২৩ মার্চ থেকে ফুলের বাজার বন্ধ। প্রতিবছর এ জেলার ফুলচাষিরা বসন্ত বরণ, বিশ^ ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস এবং বাংলা নর্ববর্ষ উদযাপন সহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে ফুলের যোগান দিয়ে থাকে। এ সময়ে ভালো লাভ পান কৃষকরা। এবছর স্বাধীনতা দিবসের আগে থেকে ফুল বেচাকেনা বন্ধ। এখনো সামনে রয়েছে বাংলা নববর্ষ। কিন্তু কৃষকের সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে করোনা ভাইরাস। ফুল বেচাকেনা না থাকায় চরম লোকসানের মুখে পড়েছে এই স্বাম্ভানাময় ফুলচাষের সাথে জড়িতরা। বেশি বিপদে পড়েছে ফুলকর্মীরা যারা ফুল তোলা ও গাথার কাজ করে সংসারের খরচ যোগান দিত। সব থেকে বেশি ফুলচাষ হওয়া এলকা বালিয়াডাঙ্গা ও গান্না ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা পকেটের টাকা খরচ করে ক্ষেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছে। অনেকে ফুল গবাদি পশুর খাবার হিসাবে ব্যবহার করছেন। অনেক স্থানে দেখা গেলো কৃষকরা ফুলসহ গাছ তুলে ফেলে দিচ্ছে। ক’দিন আগে মাঠের পর মাঠ দোল খাচ্ছিল লিলিয়াম, গাঁদা, রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ ও গ্লাডিয়াসসহ নানা জাতের ফুল। ক’দিন আগেও এসব এলকার কৃষকরা ফুলের রঙে রঙিন স্বপ্নে বিভোর ছিল। তারা এখন জানালে ফুল নিয়ে চরম হতাশা আর দুঃস্বপ্নের কথা। এ কালীগঞ্জ উপজেলার শাহপুর ঘিঘাটি গ্রামের স্কুল শিক্ষক খলিলুর রহমান জানান, এবছর আট বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছিলাম। অনেক জমিতে ফুল তোলা শুরু হয়েছিল। এখন ফুল বেচাকেনা বন্ধ। জমিতে ফুল পচে নষ্ট হচ্ছে। কিছু বাড়ি গবাদি পশু দিয়ে খাওয়াচ্ছি। অনেক জমির ফুল গাছ তুলে দিচ্ছি। ক’দিন আগেও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বালিয়াডাঙ্গা, লাউতলা ও কালীগঞ্জ মেইন বাসস্টান্ড দুপুর গড়ালে ফুলে ফুলে ভরে যেত। এসব বাজারে প্রতিনিদন দূর-দূরান্ত থেকে ফুল কিনতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আসতেন। ফুলচাষি, ব্যাপরী আর ফুল কর্মীদের হাকডাকে মুখরিত থাকতো। সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে স্তুপ করে সাজানো হতো ফুল। ঢাকা-চট্রগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরে ট্রাক-পিকআপ ও ভ্যান ভরে ফুল যেত। সেখানে এখন আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। একই রকম অবস্থা জেলার বড় ফুলের হাট গান্না বাজারের। গান্না বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দাউদ হোসেন জানালেন, ফুলের ভরা মৌসুমে করোনার হানায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কবে নাগাদ ফুলের বেচাকেনা হবে তাও অনিশ্চিত। ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়ে ফুল গরু ছাগল দিয়ে খাওয়াচ্ছে। ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিপ্তরের উপ-পরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, করোনা ভাইরাসের কারনে ফুলচাষিরা চরম বিপদে পড়েছে। তারা ফুল বিক্রি করতে পারছেন না। আবার ক্ষেতে ফুল রাখতেও পারছেন না। বাধ্য হয়ে গরু ছাগর দিয়ে খাওয়াচ্ছে। অনেকে ফুল তুলে দিচ্ছে। ফুলচাষ দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখলেও দ্রুত পঁচনশীল হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষকরা যোগ করেন এই জেলা কৃষি কর্মকর্তা।
করোনা ভাইরাসের কারনে ফুলচাষিরা চরম বিপদে
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে ফুলের ভরা মৌসুমে করোনার হানায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা দিশেহারা, ফুল খাচ্ছে এখন গরু ছাগলে
সাম্প্রতিক
বার্তা-মঞ্চ
পাবনার রূপপুরে আজ নতুন বিদ্যুৎ লাইন চালু; ৩ জেলায় সতর্কতা জারি
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বগুড়া (পশ্চিম) ৪০০/২৩০ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র পর্যন্ত ৮৯ দশমিক ৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘৪০০ কেভি...
২০৩০ সাল নাগাদ চীনে বাণিজ্যিকভাবে আসবে ৬-জি
চীনের যেসব স্থানে অবকাঠামো প্রস্তুত আছে সেসব এলাকায় ২০৩০ সালের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে ৬জি কানেকশন চালু হবে। শনিবার ৬-জি উদ্ভাবন এবং উন্নয়ন বিষয়ক একটি ফোরামে...
আত্রাইয়ে তিন দিনব্যাপী কৃষি প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধন
নওগাঁর আত্রাইয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আত্রাইয়ের আয়োজনে আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যেম রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকাল ১০টায় উপজেলা...
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও রূপকল্প ২০৪১
আমাদের জানা আছে যে আদি যুগে পৃথিবীতে মানুষ শুধু কৃষি বা প্রকৃতির উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করতো। ৩০০ বছর আগেও অর্থনীতি ও মানুষের...
বিনামূল্যে ইন্টারনেট দিচ্ছে বাংলালিংক
দেশের অন্যতম উদ্ভাবনী ডিজিটাল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক সর্বস্তরের মানুষের ডিজিটাল জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত করার লক্ষ্যে ফোর-জি ও ফাইভ-জি স্মার্টফোন ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।...