গাজীপুরে বেতনভাতা ও ঈদবোনাসসহ বিভিন্ন দাবীতে পোশাক শ্রমিকরা বৃহষ্পতিবার বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি করেছে। এসময় তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করেছে। তারা বেশ কয়েক পরিবহন শ্রমিককেও লাঞ্চিত করেছে। পুলিশ দীর্ঘক্ষণ চেষ্টার পর বিকেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জিএমপি’র টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম ও শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেনসহ স্থানীয়রা জানান, টঙ্গীর বিসিক এলাকার পেট্রিয়ট পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের মে মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবী জানিয়ে আসছিল। ওই দাবী মেনে না নেওয়ায় শ্রমিকরা গত দুইদিন ধরে কর্মবিরতি ও আন্দোলন করছিলেন। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে কর্তৃপক্ষ কারখানাটি লে-অফ ঘোষণা করে। বৃহস্পতিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় গিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য লে-অফ’র নোটিশ দেখতে পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। ঈদকে সামনে রেখে কর্তৃপক্ষের এ ঘোষণার প্রতিবাদে শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য পাশ্ববর্তী রেডিসন, হামিম গ্রুপসহ কয়েকটি পোশাক কারখানার সামনে গিয়ে ওইসব কারখানার শ্রমিকদের বেরিয়ে আসতে বলে। পরে তারা বিচ্ছিন্নভাবে টঙ্গী রেলস্টেশন, রেলওভার ব্রীজ ও পিনাকি কারখানার সামনে জড়ো হয়। এসময় আশেপাশের আরো কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা লাঠিসোটা নিয়ে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়। পরে তারা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে একটি ভাগ কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলের সামনে এবং অপরভাগ স্টেশনরোড এলাকায় ঢাকা-ময়নসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ এবং কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। এসময় তারা বেশ কয়েক পরিবহণ শ্রমিককে মারধর ও লাঞ্চিত করে। এতে মহাসড়কের উভয়দিকে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সুষ্টি হয়। একপর্যায়ে তারা স্টেশনরোড এলাকায় হামিম গ্রুপের একটি কভার্ডভ্যানে এবং চেরাগআলী এলাকার কাদেরিয়ায় টেক্সটাইলের সামনে অপর একটি কভার্ডভ্যানে অগ্নিসংযোগ করে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ কমিশনার থোয়াই অং প্রু মারমা জানান, অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে টঙ্গী ফায়ার স্টেশন কর্মীরা আগুন নেভাতে যাওয়ার সময় বিক্ষোভকারীরা বাঁধা দেয়। পরে পুলিশের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনান্থলে গিয়ে আগুন নেভান। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ওই মহাসড়কের চেরাগআলী এলাকায় বিকেল পর্যন্ত অবরোধ করে রাখে। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বিকেলে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এছাড়া গাজীপুর মহানগরীর কুনিয়া এলাকায় লিবাস পোশাক কারখানার শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার সকালে কাজে যোগ দিতে কারখানায় যান। তারা কারখানা গিয়ে জানতে পারেন শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ পাওনাদি পরিশোধ না করে বিনা নোটিশে কারখানাটি শ্রীপুর এলাকায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। মেশিন-মালপত্রও সরানো হচ্ছে। এ খবর পেয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে এবং পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এদিকে গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকার ট্রাস্ট পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেতনভাতাসহ বিভিন্ন পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে বৃহষ্পতিবার প্রায় ৫ঘন্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয়রা জানান, ভবানীপুর এলাকার ট্রাস্ট পোশাক কারখানার শ্রমিকরা এপ্রিল মাসের বেতন ও নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ বিভিন্ন পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে সকাল হতে কারখানার সামনে বিক্ষোভ করতে থাকে। তারা কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে বেলা ১১টার দিকে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে মহা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এতে মহাসড়কের উভয়দিকে যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মহাসড়কের উপর থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। এসময় পুলিশের মধ্যস্থতায় শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মালিকপক্ষের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে শ্রমিকদের যৌক্তিক পাওনাদি আগামী তিনদিনের মধ্যে পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হলে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শ্রমিকরা তাদের অবরোধ তুলে নিলে প্রায় ৫ঘন্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।