ঔষধ প্রশাসনের সঙ্গে ইতিবাচক বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জিআর কোভিড-১৯ র‌্যাপিড ডট ব্লট কিট প্রকল্পের সমন্বয়কারী ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার।

রোববার (৫ জুলাই) দুপুরে বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘অ্যান্টিবডি কিটের বিষয়ে আমরা আমাদের ইন্টারনাল ভ্যালিডেশন রিপোর্টকে আমলে এনে নিবন্ধনের অনুরোধ করেছিলাম। ঔষধ প্রশাসন বিদ্যমান সরকারি নিয়মে আবার কন্ট্র্যাক্ট রিসার্চ ফার্মের (সিআরও) মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) আমব্রেলা গাইডলাইন অনুসরণ করে এক্সটারনাল ভ্যালিডেশন করতে বলেছে। আমাদের আবেদিত রিয়েজেন্টের জন্য অনাপত্তি সনদ (এনওসি) দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। অ্যান্টিজেনের নী‌তিমালা আগামী বুধবার ফাইনাল হ‌বে। একটা ফর‌মেট পাঠা‌বে। ওইটা অনুযায়ী প্রটোকল আপ‌ডেট ক‌রে জমা দি‌তে ব‌লে‌ছে।’

এর আগে দুপুর ১২টায় অ্যান্টিবডি কিট নিয়ে আলোচনার জন্য জাতীয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে যান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল।

কিটের উদ্ভাবক বিজ্ঞানী-গবেষক ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘ঔষধ প্রশাসনের মহাপরিচালক আমাদের কথা ইতিবাচকভাবে শুনেছেন এবং সর্বাত্মক সহায়তা করতে চেয়েছেন। অ্যান্টিবডি কিট আরেকবার পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু সেই পরীক্ষা করার সক্ষমতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নেই। এটি করতে পারবে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। আগামী দুএক দিনের মধ্যেই আমরা আইসিডিডিআর,বিতে যাবো।’

তিনি বলেন, ‘আমব্রেলা গাইডলাইন অনুসরণ করে কিট পরীক্ষা করতে খুব কম সময় লাগবে। ১০০ থেকে ১৫০টি কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করলেই ফলাফল পাওয়া যাবে। ৫০টি পজিটিভ স্যাম্পল ও ১০০টি নেগেটিভ স্যাম্পল পরীক্ষা করলেই হবে। এতে সর্বোচ্চ সাত দিন সময় লাগতে পারে এবং অন্যান্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সর্বোচ্চ ১৫ দিন সময় লাগবে।’

ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘অ্যান্টিবডি ট্রায়ালের আগে বা ট্রায়াল চলাকালে আমাদের জানানো হয়নি ভ্যালিডেশনে এফডিএ’র আমব্রেলা গাইডলাইন অনুসরণ করা হবে। বিএসএমএমইউ সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। যে কারণে কিট মূল্যায়নে সমস্যা হয়েছে। অ্যান্টিজেন কিটের ক্ষেত্রে আমরা আগেই বলেছি, কোন প্রক্রিয়ায় ট্রায়াল হবে তা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পূর্বেই নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর একটি গাইডলাইনের খসড়া প্রণয়ন করেছে। আগামী বুধবারের মধ্যে অ্যান্টিজেন কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার গাইডলাইন চূড়ান্ত হবে। তার আগে খসড়া অনুযায়ী আমরা আবেদন করতে পারবো।’

প্রসঙ্গত, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিটের অনুমোদন দেয়নি জাতীয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গত ২৫ জুন বিকেলে এক ই-মেইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের অনুমোদন না দেওয়ার বিষয়টি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে জানায়।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা শেষে বিএসএমএমইউ ১৬ জুন তাদের প্রতিবেদন জমা দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গণস্বাস্থ্যের কিট করোনা শনাক্তে কার্যকর নয়। তবে অ্যান্টিবডি টেস্টে ৭০ শতাংশ কার্যকর ফল দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ঔষধ প্রশাসনের (এফডিএ) আমব্রেলা গাইডলাইন অনুসরণ করে অ্যান্টিবডি কিটের ডিজাইন আপডেট করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। তাদের কিটের সংবেদনশীলতা (সেনসিটিভিটি) এখন ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ ও নির্দিষ্টতা (স্পেসিফিসিটি) ৯৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পরীক্ষায় কিটটির সর্বোচ্চ সংবেদনশীলতা পাওয়া গিয়েছিল ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ ও নির্দিষ্টতা ৯৬ শতাংশ। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর জানিয়েছিল, এফডিএ’র আমব্রেলা গাইডলাইনের আলোকে কিটের সর্বনিম্ন সংবেদনশীলতা ৯০ শতাংশ ও নির্দিষ্টতা ৯৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যান্টিবডি কিটের সংবেদনশীলতার মাত্রা ন্যূনতম ৯০ শতাংশের কম হওয়ায় এর অনুমোদন দেয়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। তবে, কিটটির উন্নয়নের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল ঔষধ প্রশাসন।