অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় অপরাধী কোন না কোন ভাবে অবতেন মনে স্বযত্নে ফেলে যান অপরাধ সংঘটনের আলামত। ঠিক এমনই একটি ভুল বানান ছিলো ‘খোতি’ (সঠিক ক্ষতি)।উঠতি বয়সী আইটি এক্সপার্ট, অনলাইন জুয়াড়ু থেকে অপহরনকারী শেষে খুনিতে পরিনত হন পাবনার আতাইকুলার ফয়সাল হোসেন (২৩)।
অপহরণ ও খুনের রহস্য উদঘাটনে প্রধান ভূমিকা পালন করেন পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ-প্রশাসন) মাসুদ আলম। এএসপি মাসুদ আলম এই সুচতুর অপরাধীকে ধরতে উন্নত তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, বিচক্ষন অনুসন্ধান, অনুসরণ করে ‘খোতি বানানের ভুল ম্যাসেজ’ এ ধরে ফেলেন ফয়সালকে।
পুলিশ সুত্রে জানা যায় অনলাইনে জুয়া খেলে ১০ লাখ টাকা ধরা খান মো: ফয়সাল হোসেন । ক্ষতি পোষাতে ৪ বছরের শিশুকে অপহরণ করেন । পরে টেলিগ্রামে শিশুর চাচাকে ম্যাসেজ পাঠিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন ফয়সাল । একই সঙ্গে দেন হত্যার আল্টিমেটামও । কিন্তু ওই ম্যাসেজের মধ্যে ‘খোতি’ (ক্ষতি) বানান ছিল ভুল। আর এর সূত্র ধরেই ধরা পড়ে অপহরণকারী ও খুনি ফয়সাল। উদ্ধার করা হয় শিশুটির বাক্সবন্দি লাশ ।
আটককৃত খুনী ফয়সাল (২৩) পাবনার আতাইকুলা থানার পূর্ব আলোকচর গ্রামের আনোয়ার হোসেন শাহাদতের ছেলে এবং নিহত শিশু সালমান একই এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় অভিযুক্ত মো. ফয়সাল হোসেনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আদালতে ১৬ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ফয়সাল। এর আগে অপহরণের দুদিন পর মঙ্গলবার রাতে ফয়সালের ঘর থেকে বাক্সবন্দি সালমানের লাশ উদ্ধার করে আতাইকুলা থানা পুলিশ।
অপহরণ ও খুনের রহস্য উদঘাটনে প্রধান ভূমিকা পালন করেন পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ-প্রশাসন) মাসুদ আলম। এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথমে ওই এলাকার টেলিগ্রাম ব্যবহার করেন কে তাদের খুঁজে বের করি। তখন আইটিতে পারদর্শী ফয়সালের ব্যাপারে জানতে পারি। এ সময় ফয়সালকে জিজ্ঞাসাবাদ করি এবং তাকে রাজনৈতিক বিষয়ে মোবাইলে ৮/১০ লাইনের গদ্য লিখতে দেওয়া হয়। প্রশ্নে ‘খোতি’ (ক্ষতি) বানানটাও ছিল। উত্তরেও সে আবারো ‘খোতি’ একই বানান লেখেন। তখনই আমার সন্দেহ হয়। এছাড়াও অনেকক্ষণ আমাদের হেফাজতে থাকায় টেলিগ্রামে আর কোনো রিপ্লাই আসছিল না। এক পর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদে সে অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে। তিনি আরও বলেন, আসামি ফয়সাল হোসেন ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত এবং প্রযুক্তি বিদ্যায় পারদর্শী। স্থানীয় একটি আইটি স্কুলে শিক্ষকতাও করেন। অনলাইন জুয়া এবং প্রতারণার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। সম্প্রতি অনলাইন জুয়া খেলায় ৮/১০ লাখ টাকা ধরা খেয়েছিলেন। এই টাকা উঠাতে গিয়ে তার চাচা আবুল হোসেনের একমাত্র শিশু পুত্র সালমানকে টার্গেট করেন। জানাজানি হওয়ার ভয়ে ছোট্ট শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যা করে বাক্সের মধ্যে ফেলে রাখে। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি বিচক্ষন পুলিশ অফিসারের অনুসন্ধানে।