সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বর্ষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। বিদায়ী ১৪৩০ এর সব ভুল-ত্রুটি, ব্যর্থতা, গ্লানি আর না পাওয়াকে ভুলে নতুন উদ্যমে ১৪৩১ কে স্বাগত জানাচ্ছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পুরো জাতি। বাঙালির জীবনে পহেলা বৈশাখ কেবল নতুন বছরের শুরু নয়। নতুন বছরের নতুন দিনটি উদযাপিত হয় সবচেয়ে বড় উৎসবের উপলক্ষ হিসেবে। বৈশাখ আর বাঙালি মিলেমিশে একাকার বাংলায়। তাই পহেলা বৈশাখ নিয়ে উচ্ছ্বাসের যেন শেষ নেই বাঙালির।

বাংলা নববর্ষের অন্যতম অনুষঙ্গ বৈশাখী মেলা। তাই বৈশাখ মাসকে বলা হয় মেলার মাস। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে যে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয় তা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

পহেলা বৈশাখ মানেই একসময়—হালখাতার মৌসুম। ডিজিটাল বাংলাদেশে সেই পরিবেশ আর নেই। তবে আনন্দের আবহে নানান আয়োজনে বর্ষবরণের ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন, পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মেতে ওঠে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ। প্রতি বছর দিনটি জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচিও নেওয়া হয়। তার ব্যতিক্রম হয়নি এবারও।

দিনটি ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। ভোরে রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসর বসিয়েছে ছায়ানট।

শুভ নববর্ষ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে দেশে ও দেশের বাইরে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রধান অঙ্গ পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির জীবনে একটি পরম আনন্দের দিন। বৈশাখের আগমনে বেজে ওঠে নতুনের জয়গান। দুঃখ, জরা, ব্যর্থতা ও মলিনতাকে ভুলে সবাই জেগে ওঠে নব আনন্দে, নব উদ্যমে। পহেলা বৈশাখের মাঝে বাঙালি খুঁজে পায় নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও চেতনার স্বরূপ।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে উৎসবমুখর বাংলা নববর্ষের এই দিনে দেশবাসীসহ সব বাঙালিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলা নতুন বছর ১৪৩১ আমাদের জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে। সারা বছরের দুঃখ-জরা, মলিনতা ও ব্যর্থতাকে ভুলে বাঙালি রচনা করবে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, আনন্দ ও ভালোবাসার মেলবন্ধন।

পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের চিরন্তন উৎসব, বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এই দিন আমাদের আপন শিকড়ের প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত হওয়ার দিন, বাঙালির প্রাণের উৎসবের দিন। আবহমান এই লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যে বর্ষবরণ উৎসবে মেতে ওঠে দেশের প্রতিটি শহর-গ্রাম-নগর-বন্দর।

শুধু আনন্দ-উৎসবই নয়, পহেলা বৈশাখের সঙ্গে মিশে আছে গ্রামীণ অর্থনীতিও। বৈশাখি মেলা, উৎসবের আয়োজন, হালখাতা তৈরি, মিষ্টান্ন বিতরণ, ভালো ভালো খাবার পরিবেশন—এসব বাংলার লোকায়ত ঐতিহ্যেরই অংশ। এই একটি দিনে কোনো ভেদাভেদ থাকে না বাংলার মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মাঝে। নববর্ষের উৎসব হয়ে ওঠে সর্বজনীন।