image_109989
তৃণমূলে ভোটযুদ্ধ আজ

উপজেলা পরিষদে তৃণমূলের ভোটযুদ্ধ শুরু হচ্ছে আজ। প্রথম ধাপে ৪০ জেলার ৯৭ উপজেলায় ভোট দিয়ে শুরু হবে এ নির্বাচন। উপজেলা নির্বাচনকে উৎসব মুখর করে তুলতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকালই কেন্দ্রে কেন্দ্রে পেঁৗছে গেছে ব্যালট পেপার ও নির্বাচনী মালামাল। দেশের ৯৭ উপজেলায় আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকায় থাকছে সাধারণ ছুটি। তবে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ভোটারদের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রেও থাকছে নিরাপত্তা বলয়। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী, র্যাব ও বিজিবি। এ ছাড়া এ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় নেওয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। আর ১৯ জেলার ৩২ উপজেলায় ৫৯০ জন কর্মকর্তাকে রাখা হচ্ছে নজরদারিতে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কয়েকটি ধাপে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে আজ ৯৭টি উপজেলায় ভোট হচ্ছে। এ ছাড়া আরও একটি উপজেলায় ভোট হবে ২৪ ফেব্রুয়ারি। তিন পদে এসব মোট ১ হাজার ২৭৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি। অন্যদিকে দশম সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ না নিলেও নির্দলীয় উপজেলা নির্বাচনে তারা অংশ নিচ্ছে। ফলে এ নির্বাচন রূপ নিয়েছে দলীয় নির্বাচনে। আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন দিলেও অসংখ্য বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে প্রধান দুটি দলের। ফলে নির্বাচন জমে উঠেছে। জাতীয় নির্বাচনে সহিংসতার পর উপজেলা নির্বাচনে তার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে মনে করে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি। উৎসবমুখরভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। এ নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ ভোটারদের নির্বিঘ্ন পরিবেশ তৈরিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের আইন লঙ্ঘন বরদাস্ত করা হবে না। তবে দলীয় সমর্থনে উপজেলা নির্বাচনে রাজনৈতিক মাত্রা পেলেও কিছু করতে পারছে না ইসি।

প্রার্থী, ভোটকেন্দ্র, ভোটার ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা : প্রথম ধাপে তিন পদে এসব উপজেলায় মোট ১ হাজার ২৭৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে ৪৩২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫১৩ জন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৩২৯ জন। সুজন সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, প্রথম ধাপের প্রার্থীদের মধ্যে ১২২ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে। মোট ভোটার ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭৮ হাজার ১৭২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮১ লাখ ৯১ হাজার ৫৩৭ জন, মহিলা ভোটার ৮২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৩৫ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৬ হাজার ৯৯৫টি, ভোটকক্ষ ৪৩ হাজার ২৯০টি। প্রিসাইডিং অফিসার প্রতি ভোটকেন্দ্রে একজন করে ৬ হাজার ৯৯৫ জন। সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার প্রতি ভোটকক্ষের জন্য একজন করে মোট ৪৩ হাজার ২৯০ জন। পোলিং অফিসার সংখ্যা ৮৬ হাজার ৫৮০ জন দায়িত্ব পালন করবেন।

প্রচার-প্রচারণা বন্ধ : প্রথম ধাপের ভোটের আগে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গত সোমবার মধ্যরাতেই বন্ধ হয়ে গেছে মিছিল-মিটিংসহ সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। ইসি সচিবালয়ের সহকারী সচিব আশফাকুর রহমান জানান, নির্বাচনের ৩২ ঘণ্টা পূর্বে সব প্রচার-প্রচারণা বন্ধ থাকবে। তা অব্যাহত থাকবে নির্বাচনের পর ৬৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। কেউ আইন ভঙ্গ করলে কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হবে। সর্বোচ্চ ক্ষমতা ইসির রয়েছে_প্রার্থিতা বাতিল।

নির্বাচন কমিশন প্রথম দফায় ১০২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা করলেও সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতার কারণে রংপুরের চারটি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। প্রথম দফার পীরগঞ্জ উপজেলার ভোট ১৯ তারিখ থেকে পিছিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন : নির্বাচনের আগে ও পরে মিলিয়ে মোট পাঁচ দিন নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে তারা। প্রতি উপজেলায় ১ প্লাটুন করে সেনাবাহিনীর সদস্য টহল দেবে। পাশাপাশি প্রতি উপজেলায় সেনাবাহিনীর দুই থেকে তিনটি গাড়ি থাকবে। সঙ্গে সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ও একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। এ ছাড়া মোবাইল ফোর্স হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমাণ র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকছে। প্রতি কেন্দ্রে একজন পুলিশ (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার একজন (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার ১০ জন (মহিলা ৪, পুরুষ ৬ জন) এবং আনসার একজন (লাঠিসহ) ও গ্রামপুলিশ একজন করে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবে। পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও হাওর এলাকায় এ সংখ্যা শুধুমাত্র পুলিশের ক্ষেত্রে দুজন হবে। ১৯ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ৩৮৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯৭ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।

কেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তা বলয় : ভোটের আগের দিন গতকাল প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা ব্যালট পেপারসহ মালামাল গ্রহণ করে কেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যসহ অবস্থান করছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা সুবিধাজনকভাবে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় চার ব্যবস্থা : নির্বাচনকে সামনে রেখে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় নেওয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য গোলযোগ ঠেকাতে চারটি সমস্যা চিহ্নিত করে ইসিতে সুপারিশ দিয়েছে রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা। ওই প্রতিবেদনে চার সুপারিশের মধ্যে রয়েছে সম্ভাব্য গোলযোগপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় আইনশৃঙ্খলা জোরদার করার পাশাপাশি ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে পরের দুই দিন পর্যন্ত গোপন নজরদারির ব্যবস্থা নিতে হবে। সম্ভাব্য হামলাকারীদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তাদের গ্রেফতার করার পাশাপাশি অন্যদের নজরদারিতে রাখতে হবে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। ভোটের আগে-পরে এলাকায় স্থানীয়ভাবে পাহারা দিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলতে হবে। প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় কোনো ধরনের সহিংসতা ও গোলযোগের শঙ্কা করছে না নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।

নির্বাচনী কর্মকর্তারা নজরদারিতে : দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসারদের মধ্যে ১৯ জেলার ৩২ উপজেলায় ৫৯০ জন কর্মকর্তাকে নেতিবাচক হিসেবে চিহ্নিত করে তালিকা দিয়েছে সংস্থাটি। তাদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। সরকার বিরোধী গোষ্ঠীর প্রতি আনুগত্য, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সমালোচিত, বিভিন্ন অনিয়ম ও নেতিবচাক কর্মকাণ্ডে অতীতে জড়িত ছিল এবং তাদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেছেন। ইসি সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভোটে নিরপেক্ষভাবে সবাইকে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটলে বা পক্ষপাতিত্ব করলে বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৯১ অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ইসি।