দৈনিক বার্তাঃ ঢাকার অদূরে কামরাঙ্গীরচরে বুড়িগঙ্গা নদীর পারে র্যাব-১০-এর দপ্তর করার জন্য যে সাত একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল,তা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।দপ্তরের জন্য তাদের অন্য জায়গায় জমি বরাদ্দ দেওয়া হবে। সোমবার সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন।এ সভায় নৌমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ,স্থানীয় সাংসদ হাজি মোহাম্মদ সেলিম।সভা শেষে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, রোববার পাঁচজন মন্ত্রী ওই এলাকা সরেজমিনে দেখেছেন। এরপর পর্যালোচনা করে মনে হয়েছে, এ জায়গাটি বরাদ্দ দেওয়া হলে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত হবে। এ জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। র্যাবকে অন্য কোনো জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে।
মন্ত্রী জানান, এ ছাড়া যেসব জায়গা দখল করা হয়েছে, আদি চ্যানেল উদ্ধারের লক্ষ্যে সেগুলো উচ্ছেদে আজকের সভায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান শামছুদ্দোহা খন্দকারের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে।
নৌমন্ত্রী বলেন,এ কমিটি অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা করবে এবং তা বাস্তবায়নও করবে। আগামী জুন মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে।সেখানে ৭ একর জায়গা ২০০৭ সালে প্রায় এক কোটি টাকায় র্যাবকে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছিল। সোমবার এক বৈঠকে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার।
সচিবালয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে পাঁচ মন্ত্রীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বৈঠকে বুড়িগঙ্গা শাখা নদী তীরে ওই জমি র্যাবকে না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কামরাঙ্গীরচরে র্যাবকে জমি দেয়া হবে না- সভার এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন,প্রয়োজনে বেসরকারি জায়গা অধিগ্রহণ করে র্যাবকে দেয়া হবে।এছাড়া সরকারেরও অনেক জমি রয়েছে।পরিবেশ রক্ষা করে র্যাবের জায়গা বরাদ্দ দেয়া হবে। পরিবেশের ব্যাপারে আমরা সচেতন। প্রধানমন্ত্রীও আমাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।নারায়ণগঞ্জের সাত খুনে র্যাবের তিন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠার মধ্যে সরকারের সিদ্ধান্ত বদল হল।
কামরাঙ্গীরচরের এই জমি ঢাকা জেলা প্রশাসনের বরাদ্দ নিয়েছিল র্যাব। দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তের সেলামি বাবদ ৯৮ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ টাকার বিনিময়ে র্যাবকে এই জমি দেয়া হয়।
দাতা হিসেবে বন্দোবস্ত দলিলে স্বাক্ষর করেন ঢাকা জেলা প্রশাসক। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র সচিবের পক্ষে দলিলে স্বাক্ষর করেন র্যাব-১০-এর পরিচালক এস এম কামাল উদ্দিন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ২০০৪ সালে র্যাব এই সংক্রান্ত প্রস্তাব দিলে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০০৫ সালে তা অনুমোদন দেয়। ২০০৭ সালে তৎকালীন সরকার জমির দখল র্যাবকে বুঝিয়ে দেয়।
লালবাগ-কামরাঙ্গীরচরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গার শাখা নদীর ওপর ওই জমি ভবন তৈরির জন্য বরাদ্দ দেয়ার সমালোচনা করে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা। নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বৈঠকে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।র্যাব-১০ এর সদর দপ্তর কোথায় করা যায়, সেই পরামর্শও এই কমিটির কাছে চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।এই কমিটি এক সপ্তাহের মধ্যে হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল চিহ্নিত করে খনন ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করবে।
এক সপ্তাহের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালানো হবে। কোনো কোম্পানি- টোম্পানি বুঝি না, সব ভাঙা হবে, বলেন শাজাহান খান।গত ১১ মে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার নির্দেশ দেন।নৌমন্ত্রী বলেন, আগামী জুন মাসের মধ্যেই নদীর দখল উচ্ছেদ দৃশ্যমান হবে।