AL-BNP-up

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২ জানুয়ারি: ৫জানুয়ারির আর মাত্র তিন দিন বাকি৷ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বর্ষপূর্তি এদিন৷ দিনটিকে ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছে; আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এটাকে কালো দিবস হিসেবে পালনের কথা বলছে৷উভয় দলই এদিন মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে৷ নিজ নিজ অবস্থানে অনড় দেশের প্রধান এ রাজনৈতিক দল দুইটি৷এতে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে উভয় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে৷বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সাত দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন৷ প্রস্তাবনা না মানলে রাজপথে ফয়সালা করারও হুমকি দিয়েছেন তিনি৷ তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন৷ এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়ার প্রস্তাবনা নাকচ করে দিয়েছে৷দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন,কোনো দফায় কাজ হবে না৷

২০১৯ সালে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে হবে৷ ৫ জানুয়ারি কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ৷ বিএনপি জোট যত কথাই বলুক, ওই দিন তারা রাজনৈতিক টার্গেটে পৌঁছতে পারবে না৷ তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটালে প্রশাসন দেখবে৷ তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেছে ক্ষমতাসীনরা৷ দুই দলের নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকা নিয়ে জনমনেও আতঙ্ক বিরাজ করছে৷তাদের প্রশ্ন-কী হবে ৫ জানুয়ারি? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের ছাড় দেয়ার মানসিকতা না থাকলে সঙ্কট আরও ঘনীভূত হবে৷ আন্দোলনের হুমকি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, খালেদা জিয়ার আন্দোলনে তার দলের অনেক নেতা নেই৷কারণ উনি আন্দোলন করছেন ছেলে তারেক রহমানকে দুর্নীতির মামলা থেকে বাঁচানোর জন্য৷ এ আন্দোলনে বিএনপি বা দেশের স্বার্থ নেই৷ প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ৫ জানুয়ারি তারা কিছু করতে পারবে না৷ তারা বহু আগে থেকেই অরাজকতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করে আসছে৷ তারা জনগণের জানমালের যে ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন, তা আমরা জানি৷ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর ৬৬ সালের ছয় দফায় অনুপ্রাণিত হয়ে সাত দফা উপস্থাপন করেছেন৷ এ অসাংবিধানিক দাবি আওয়ামী লীগ তাত্‍ক্ষণিক প্রত্যাখ্যান করেছে৷ আমরা খালেদা জিয়াকে মাইনাস করব না; উনি নিজেই নিজের দলের নেতাকর্মীদের কাছে মাইনাস হবেন৷বার বার ভুল সিদ্ধান্ত এবং ছেলের কারণে অচিরেই উনি মাইনাস হয়ে যাবেন৷ ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, সাত দফা কেন, ৭০০ দফা দিয়েও কোনো কাজ হবে না৷ সংবিধান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনে আসতে হবে৷ এর থেকে পিছু হটার সম্ভাবনা নেই৷

এদিকে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় বিএনপি৷ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ বিষয়ে আর সময়ক্ষেপণ করতে চাচ্ছেন না৷ প্রয়োজনে হার্ডলাইনে যাবেন তিনি৷ বুধবার জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সরকারের প্রতি শীতল সতর্কবার্তা দিয়েছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, সমাবেশ আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার৷ আমরা আমাদের সমাবেশ পালন করবই৷ তবে এবারের আন্দোলন নিয়ে অনেকটা কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন তিনি৷ আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে দল ও জোট নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হলেও কর্মসূচি জানান দেয়ার ব্যাপারে বেশ সতর্ক তিনি৷ খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাপ হয়েছে- এমন এক নেতা জানান, আন্দোলনের কর্মসূচির কী হতে পারে, সে বিষয়ে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) নেতাদের কাছে থেকে মতামত নেয়া পর্যন্তই বিরত থেকেছেন৷ কবে, কখন, কী ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে, সে সম্পর্কে ধারণা দেননি৷ শুধু বলেছেন, সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার ব্যবস্থা নিন৷ পর্যায়ক্রমে সময়োপযোগী কর্মসূচি দেয়া হবে৷ আপনারা প্রস্তুত থাকুন৷ যখন এসব কর্মসূচি পালনের দায়িত্ব আসবে, তখনই ওই দায়িত্ব পালন করবেন৷ তবে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া নিজেই মাঠ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন; নির্দেশনা দিচ্ছেন আন্দোলন-সংগ্রামে সর্বাত্মক প্রস্তুত থাকতে৷ এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের মহানগর কমিটিগুলোকে৷ সাংগঠনিক এসব কমিটির ‘গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ামাত্র ৯০ আদলে আবারও রাজপথে দেখা যাবে বিএনপি প্রধানকে৷খালেদা জিয়ার আন্দোল কৌশলের আঁচ পাওয়া গেছে বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদেও প্রশ্নের জবাবে৷ তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলন করার শক্তি রাখে৷ সরকারকে আমরা একটি বছর সময় দিয়েছি৷ এখন সময় ফুরিয়ে গেছে৷ জনগণের সঙ্গে আন্দোলনে আগামীতে আমাকে সামনের সারিতে পাবেন, সময়মতো পাবেন৷ প্রস্তাবিত সাত দফা প্রসঙ্গে বলেছেন, যারা জোর করে ক্ষমতায় আছে, তাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা আলোচনায় রাজি হবে কিনা৷ তাদেরই ঠিক করতে হবে, তারা কি প্রস্তাব মেনে নেবে, নাকি আন্দোলন মোকাবিলা করবে৷ বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৫ জানুয়ারিকে কালো দিন’ বা গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের জন্য নতুন বছরের শুরুতে রাজধানী ঢাকায় দুটি সমাবেশ করতে চায় বিএনপি ৷এজন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রদলের আজকের ‘ছাত্র সমাবেশ’ বাতিল করা হয়েছে৷ ৩ ও ৫ জানুয়ারি রাজধানী তে সমাবেশের বিকল্প  ( সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাপলা চত্বর বা নয়াপল্টন) তিনটি স্থান পছন্দ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে ২২ ডিসেম্বর আবেদন করেছে দলটি৷ তবে সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে ডিএমপির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো সাড়া পায়নি৷ বিকালে এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ও সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি বিকালে ডিএমপি কার্যালয়ে যান৷ সেখানে ঊধর্্বতন কর্মকর্তাদের না পেয়ে ফিরে যান তারা৷ আবদুল লতিফ জনি জানান, তারা ডিএমপি কার্যালয়ে গিয়ে ঊধর্্বতন কর্মকর্তাদের পাননি৷ তাদের জানানো হয়েছে, হরতাল থাকায় কর্মকর্তারা কন্ট্রোল রুমে কাজ করছেন৷ জানা যায়, ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ কর্মসূচির অনুমতি না দিলে ৫ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মসূচি ডাকা হতে পারে৷ এর মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করবে ২০ দলীয় জোট৷

টানা দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠনের পর দেশের অর্থনৈতিক সূচকে অনেক ইতিবাচক দিক দেখা গেলেও, রাজনৈতিক অবস্থা ছিল গুমোটের মধ্যে৷ আর নতুন বছরের শুরুতেই সে গুমোট থেকে সংঘাতের হুইসেলআসছে৷তাই অর্থনৈতিকউন্নয়নে ভারসাম্য আনতে সরকারের নতুন বছরের টার্গেট সরকারবিরোধী রাজনৈতিক অস্থিরতা দমন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা৷সরকারের বিভিন্ন সূত্র জানায়, দেশে-বিদেশে স্বীকৃত সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক ডামাডোলে ভারসাম্যহীন অবস্থায় পড়েছে৷ তাই যুদ্ধাপরাধের তকমায় সর্বস্বান্ত জামায়াত আর টানা ক্ষমতার বাইরে থেকে সাংগঠনিকভাবে বিপর্যস্ত বিএনপির আন্দোলনের হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে দেশের পরিস্থিতি শান্ত রেখে উন্নয়নে ভারসাম্য আনাই সরকারের নতুন বছরের চ্যালেঞ্জ৷ বিগত সময়ে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি থাকলেও, উন্নয়ন ছাপিয়ে গত এক বছরে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ই ছিল ৫ জানুয়ারির নির্বাচন৷ রাজনীতিতে ছিল চাপা এক উত্তেজনা৷ কারণ বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ আর এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য ক্ষমতায় আসে৷ এ নির্বাচনের পর গত এক বছর ধরে আরেকটি নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসে বিএনপি৷সর্বশেষ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সাত দফা দাবিতেও তা উঠে এসেছে৷ এ জন্য সংলাপের দাবিও জানাচ্ছে তারা৷ তবে সরকার আগের চেয়ে অনেক হার্ডলাইনে৷ নতুন নির্বাচনের জন্য এ সরকারের মেয়াদপূর্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বিরোধী দলগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছে প্রতিনিয়ত৷ এর জবাবে, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে বিএনপি চাইছে সরকারের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করতে৷ ৫ জানুয়ারির আগে ও পরে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ঢাকাসহ সারাদেশে বড় ধরনের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ শাসক দলের নেতারা বলছেন, সরকারও বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে প্রস্তুত৷ এজন্য বিএনপির বকশীবাজার ও গাজীপুর মিশন সরকার হার্ডলাইনে থেকে ব্যর্থ করে দিয়েছে৷এদিকে, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন,নাশকতার আশঙ্কা থাকলে ৫ জানুয়ারি ঢাকায় বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না৷ আসাদুজ্জামান খান জানুয়ারি বিএনপির সমাবেশের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান৷ তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি আসতে এখনো দুই-তিন দিন বাকি৷ বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে৷

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন৷ হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) চার দিনব্যাপী অষ্টম হজ-ওমরাহ মেলার উদ্বোধন করতে প্রতিমন্ত্রী সেখানে যান৷আসাদুজ্জামান খান বলেন, যদি কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা থাকে তাহলে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না৷ তবে যদি নাশকতার বিষয়টি না থাকে এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের বিষয় হয় তাহলে আমরা ব্যাপারটি ভেবে দেখব৷৫ জানুয়ারি বিএনপি যেকোনো মূল্যে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে৷ এটি আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি কি না সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী৷রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান,শাপলা চত্বর বা নয়াপল্টন এই তিন জায়গার যেকোনো একটিতে ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ২২ ডিসেম্বর আবেদন করেছিল বিএনপি৷ তবে সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে এখনো কোনো সাড়া পায়নি দলটি৷বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিনকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস’আখ্যা দিয়ে বছর পূর্তিতে ওই দিনে সারাদেশে সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি৷ ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে জনসভা করতে পুলিশের অনুমতি চেয়েছে দলটি৷অন্যদিকে ওই দিনটি সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়ে রাজপথে সেদিন যে কোনো নাশকতা মোকাবেলার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ৷পুলিশ বিএনপির জনসভা নিয়ে টালবাহানা করছে বলে আগের দিন অভিযোগ করেছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী৷ জনসভার অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী কামাল বলেন, যদি নাশকতার আশঙ্কা থাকে সেক্ষেত্রে সমাবেশ করার অনুমতি পাবে না৷ এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে৷ অন্যদিকে,জনসভা করার অনুমতি না পেলেও ৫ জানুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট রাজপথে থাকবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান৷ তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করলেও আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের সকল পথ বন্ধ করে দিয়েছে৷শুক্রবার ছাত্রদলের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন৷বিএনপি তার নিজস্ব কৌশলে আন্দোলন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই ক্ষমাসীনদের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে৷ ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, গত বছর ৫ জানুয়ারি একটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে৷ এই দিনটিকে আমরা গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করতে চাই৷

এরই মধ্যে ঢাকায় জনসভা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়েছি৷ এখনো অনুমতি মেলেনি৷ শেষ পর্যন্ত যদি অনুমতি না মেলে, তারপরও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ওই দিন রাজপথে থাকবে৷ সকল প্রকার বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে জনগণের দাবি আদায়ে সচেষ্ট হবে বিএনপি৷ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অতীতের মতো এবারও ছাত্রদল মাঠে থাকবে এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল রাজপথে তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে৷ কোনো বাধা বিপত্তি তাদেরকে দমাতে পারবে না৷ খালেদা জিয়াবিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাত দফা প্রস্তাব নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে৷ দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেক নেতা এ প্রস্তাবে কিছুটা বিস্মিত হয়েছেন৷ আবার কেউ কেউ একে দেখছেন কৌশল হিসেবে৷ তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এ প্রস্তাব আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিএনপিকে কিছুটা হলেও বাড়তি সুবিধা দেবে৷ গত বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে খালেদা জিয়া নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও বর্তমান আরপিও সংশোধন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রিসভা ও জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর সম্মতিতে গঠিত’ নির্দলীয় সরকারের হাতে দায়িত্ব দেওয়াসহ সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন৷বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে এ উদ্যোগ নিওয় কথা বলতে গিয়ে জানা গেল, খালেদা জিয়া যে এ ধরনের প্রস্তাব তুলে ধরবেন, তা দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি বড় অংশ জানতেন না৷ হঠাত্‍ এ উদ্যোগে তাঁরা কিছুটা বিস্মিত হয়েছেন৷তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া এ প্রস্তাব দেওয়ার আগে তা নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়৷ এরপর ২০-দলীয় জোটের শরিকদের তা জানানো হয়৷ তারপর সংবাদ সম্মেলন করেন খালেদা জিয়া৷ বর্তমান প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়ার এ প্রস্তাব নিয়ে জানতে চাইলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের এক বছর হয়ে গেছে৷ অনেকের মনেই হয়তো প্রশ্ন, বিএনপি এখন সুনির্দিষ্টভাবে কী চায়৷ কারণ, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন না মানা এক বিষয়, আর এখনকার চাওয়া আরেক বিষয়৷ তাই এ রকম দাবি বা প্রস্তাব থাকলে বিএনপির সামনের আন্দোলনে সুবিধাই হবে৷ তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের একটি বড় অংশ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে পুরোপুরি বৈধতা দেয়নি৷ তারা হয়তো মনে করে, বড় দুই দলকে একসময় আলোচনায় বসতেই হবে৷ এ প্রস্তাব বিএনপিকে সেদিক থেকেও কিছুটা সুবিধা দিতে পারে৷

এ বিশ্লেষণের সঙ্গে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব সম্পর্কে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের ওয়াকিবহাল অংশের মূল্যায়নের মিল পাওয়া গেছে৷ এ অংশটি জানায়, ৫ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের আন্দোলনে যেতে চায় বিএনপি৷ এ পর্যায়ে থাকবে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি৷ তার আগে নিজেদের দাবি ও অবস্থান স্পষ্ট করতেই এই সাত দফা তুলে ধরা হয়েছে; যাতে আন্দোলন শুরু হলে দলকে কোনো প্রশ্নের মুখে পড়তে না হয়৷ দলের এ অংশের মূল্যায়ন হচ্ছে, বিএনপির আন্দোলন যখনই দানা বাঁধতে শুরু করে, তখন সরকার একে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা হিসেবে আখ্যা দেয়৷ তাঁদের আশঙ্কা, এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না৷ এ কারণেও আন্দোলনে যাওয়ার আগে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করা জরুরি ছিল৷বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, এত দিন বলা হয়েছে বিএনপি কী চায়? এখন তা-ই পরিষ্কার করা হয়েছে৷ দেশে ন্যূনতম গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে এই সাত দফা বাস্তবায়ন করতে হবে৷ এই মূল্যায়নের সঙ্গে অবশ্য একমত নন বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সব নেতা৷ স্থায়ী কমিটির তিনজন সদস্য বলেছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আচমকা এমন প্রস্তাবে তাঁরা কিছুটা হতবাক হয়েছেন৷দলের মধ্যম সারি ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের মধ্যেও চেয়ারপারসনের বক্তব্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে৷ দলের জেলা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সম্পাদক পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে এই প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়৷ এঁদের কেউ কেউ মনে করছেন, খালেদা জিয়ার প্রস্তাব কৌশলগত৷ আবার কোনো ধরনের আলটিমেটাম না থাকায় কেউ কেউ হতাশ হয়েছেন৷তবে সহসম্পাদক পর্যায়ের একাধিক নেতা মনে করেন,খালেদা জিয়ার কাছে কোনো ‘সিগন্যাল’ আছে৷ না হলে হঠাত্‍ তিনি এমন প্রস্তাব দিতেন না৷ জেলা পর্যায়ের নেতাদের কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন,খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারি কঠোর কর্মসূচি দেবেন এবং তাঁর বক্তব্য হবে আক্রমণাত্মক৷ বিশেষ করে গাজীপুরের সমাবেশ থেকে পিছু হটার পর কর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে এটা দরকার ছিল বলে তাঁদের ধারণা৷কর্মীদের একটা অংশও কর্মসূচি না থাকায় কিছুটা বিস্মিত৷ গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার বক্তব্য শেষে তাঁর গুলশান কার্যালয়ের বাইরে অপেক্ষমাণ ছাত্রদলের য়েকজন নেতা-কর্মীর বক্তব্যের মোদ্দা কথা ছিল তাহলে কী হলো? তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দীন আহমদের ব্যাখ্যা ভিন্ন৷ তিনি মনে করেন, বিএনপি আন্দোলনের জন্য দলকে সংগঠিত করেছে৷ সামনে হয়তো হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি আসবে৷দেশ অশান্ত হবে৷এ ক্ষেত্রে কর্মীদের মনে সাহস সঞ্চারের জন্য বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রস্তাব বড় ভূমিকা রাখবে৷

বছরের শেষ দিন বিএনপি চেয়ারপারসনের সংবাদ সম্মেলন ঘিরে আগ্রহের কমতি ছিল না দলের নেতাকর্মীদের৷ সবার প্রত্যাশা ছিল এবার দলীয় প্রধান চূড়ান্ত আন্দোলনের রূপরেখা পেশ করবেন৷ সরকারকে চূড়ান্ত আলটিমেটাম দেবেন৷ কিন্তু তা না দিয়ে খালেদা জিয়া পেশ করলেন সাত প্রস্তাব৷ সরকার এগুলো আগেও পাত্তা দেয়নি এবারও পাত্তা দেবে না বলে বিশ্বাস দলীয় কর্মীদের৷ এজন্য দলীয় চেয়ারপারসনের বক্তব্যে তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে৷বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন জানতে পারলেন চেয়ারপারসন কোনো কর্মসূচি দেননি, এমনকি দাবি পূরণের জন্য কোনো সময়সীমাও ঘোষণা করেননি, তখন তাদের মাঝে হতাশা নেমে আসে৷ গুলশান কার্যালয়ের বাইরে অপেক্ষমাণ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, তা হলে কেন এই সংবাদ সম্মেলন? এর চেয়ে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠালেই হতো৷নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, তারা আশা করেছিলেন, নেত্রী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন৷ অন্তত একটি আলটিমেটাম দেয়া হবে৷ তা না হওয়ায় মাঠ নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হওয়ার পরিবর্তে চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন বলেই মনে করেন ওই নেতা৷ হরতালের কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে থাকেন বলে খালেদা জিয়া দাবি করেন৷ এ ব্যাপারেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মাঠ নেতারা৷দল ও জোটের সিনিয়র একাধিক নেতা বলেছেন, নেত্রী যে ৭ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন তা আসলে নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ের জন্য প্রযোজ্য৷ কিন্তু এ মুহূর্তে দেশে কোনো নির্বাচনী হাওয়া বিরাজ করছে না৷নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ম্যাডামের বক্তব্যে আমরা নিজেরাও কনফিউজড (বিভ্রান্ত)৷ বক্তব্যের পর আমরা নিজেরা অনেকে এটি নিয়ে আলোচনা করেছি৷ উনি যেভাবে কথা বলছিলেন, এগুলো তো নির্বাচনের প্রাক্কালের কথা৷ নির্বাচন কী খুব কাছাকাছি সময়ে হচ্ছে? তবে আমি মনে করি না মার্চ, এপ্রিল বা ভেরি নিয়ার ফিউচার ইলেকশন হচ্ছে৷ জাতিসংঘের মতো বড় কোনো শক্তি কী নির্বাচনের ব্যবস্থা করছে? আন্তর্জাতিক বিশ্ব পরিস্থিতি সে কথা বলছে না৷সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার উপস্থাপিত এ বক্তব্যের বিষয়ে স্থায়ী কমিটির অনেক সদস্যই আগে থেকে কিছু জানতেন না বলে জানা গেছে৷খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ২০ দলের নেতারাও৷ ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের এক নেতা বলেন, জোট নেত্রীর কাছে এ মুহূর্তে কেউ এমন নরম সুরের বক্তব্য আশা করেনি৷ সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে যে হার্ডলাইনে চলে গেছে তা থেকে নেতাদের রক্ষা করতেই হয়তো কঠোর কর্মসূচি থেকে বিরত থাকছেন বিএনপি প্রধান৷ এতে জনগণের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাবে বলেও মনে করেন তিনি৷বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যে নেতা-কর্মীদের অনেকেই হতাশ হয়েছেন৷ ছাত্রদলের সম্পাদক পর্যায়ের একজন নেতা গুলশান কার্যালয়ের সামনে এই প্রতিবেদককে বলেন, তাঁরা আশা করেছিলেন খালেদা জিয়া এবার একটি আলটিমেটাম দিয়ে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন৷ কিন্তু তা না হওয়ায় তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী হতাশ হবেন বলে তাঁর ধারণা৷ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘হরতালের কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে থাকেন৷ এ কথা শুনে ছাত্রদলের সম্পাদক পর্যায়ের ওই নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদেরই গালাগাল দিতে শুরু করেন৷ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মতো বিএনপির চেয়ারপারসনের বক্তব্যে হতাশ ও বিস্মিত হয়েছেন খোদ দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেক নেতা৷ হতাশ শরিক দলের নেতারাও৷খালেদা জিয়ার আজকের বক্তব্যে মূল বিষয় ছিল মূলত সংকট সমাধানের লক্ষ্যে সাত দফা প্রস্তাবনা (আসলে প্রস্তাব)৷ কিন্তু যেসব প্রস্তাব তিনি উপস্থাপন করেছেন, তা মূলত নির্বাচনী সমঝোতার পর আশা করা যায়৷ যেখানে সরকার বার বার আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে, সেখানে বিএনপির প্রধানের এমন প্রস্তাব কেন, তা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেকেই বিস্মিত৷

নতুন বছরের শুরুর দিনেই হরতাল বাকি দিনগুলোতে রাজনৈতিক উত্তাপের আভাস দিলেও বিরোধী শক্তি সরকারের দৃশ্যমান অটল আত্মবিশ্বাস কতটুকু টলাতে পারবে তা নিয়ে দ্বিধা আছে অনেকেরই৷সরকারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি আন্দোলনে এক পা এগিয়ে দুই পা পেছানোর প্রবণতা দেখানোয় নতুন বছরে তাদের নির্বাচন আদায় করার আন্দোলন কতখানি আশার মুখ দেখবে, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছেই৷ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর সত্য হলে সরকারের কৌশল সামলানোর পাশাপাশি দলে ভাঙনও সামলাতে হবে বিএনপিকে; মোকাবেলা করতে হচ্ছে দলের প্রধান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাও৷

তাদের প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামীর ঘাড়ের ওপর ঝুলছে নিষিদ্ধ হবার আইনি খড়গ৷ যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত দলের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকর হলে দলটি নেতৃত্বশূন্যতা মোকাবিলা কিভাবে করে, তা নিয়েও কৌতূহল রয়েছে পর্যবেক্ষকদের মধ্যে৷বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবেলা করে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া শেখ হাসিনা টইটম্বুর আত্মবিশ্বাস নিয়েই বলেছেন, যুদ্ধাপরাধী সবার শাস্তি কার্যকর করবেন৷যার অর্থ দাঁড়ায়, বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতের সামনে বড় বিপদ৷ সেইসঙ্গে হাই কোর্টের রায় অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো তো রয়েছেই; যদিও নির্বাচনে লড়তে তাদের আইনি লড়াই চূড়ান্তভাবে শেষ হয়নি এখনও৷দেশের অন্য সব কার্যক্রম যে কেন্দ্রবিন্দুকে ধরে আবর্তিত হয়, সেই রাজনীতির দিকে দৃষ্টি থাকে সবার৷ কেননা, রাজনীতিতে স্থিতি না থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেমন বাধাগ্রস্ত হয়, তেমনি সহিংসতা জনগণের জীবনও যে কতটা অনিরাপদ করে তোলে, ২০১৩ সালই তার উদাহরণ৷ সহিংসতাময় বছর পেরিয়ে ২০১৪ সালে শঙ্কার মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয় দশম সংসদ নির্বাচন৷ তবে নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর আপাত শান্তি নেমে রাজনৈতিক অঙ্গনে৷ তবে দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির একটির অনুপস্থিতিতে এই নির্বাচনের পর অনিশ্চয়তা যে কাটেনি পুরোপুরি, তা প্রতিফলন দেখা যায় অর্থনীতিতে৷২০১৪ সালজুড়েই প্রায় শান্ত রাজনৈতিক অঙ্গনে শেষ দিকে এসে বিএনপির আন্দোলনের ঘোষণা কিছুটা উত্তাপ তৈরি করেছে, যদিও তাদের আন্দোলনের সামথর্্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা৷তবে বছরের শেষ দিনে আকস্মিক এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, তার দল সুসংগঠিত এবং আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত৷নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের আওয়াজ তুলে ৭ দফা প্রস্তাব হাজির করেছেন তিনি৷ বলেছেন, এই সরকারকে এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে, এখন আন্দোলনের বিকল্প নেই৷তবে বিরোধী দলের আন্দোলনের হুমকি যে ক্ষমতাসীনরা কেয়ার করছে না, তা বিভিন্ন সময় মন্ত্রীদের কথায় স্পষ্ট৷ আগামী পাঁচ বছর আগে কোনো নির্বাচন হবে না বলে জোরেশোরেই বলছেন তারা৷তারপর নতুন বছরের বাণীতে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানও বেশ কঠোর- বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে সাথে নিয়ে দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে চায়৷ জনগণ তাদের আর ওই সুযোগ দেবে না৷নির্বাচিত ব্যক্তিদের অধীনেই দেশ পরিচালনা এবং নির্বাচন- তার এই ঘোষণা বিএনপির জন্য স্পষ্টতই হতাশার৷৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার পর মামলার জাল ছাড়িয়ে দলটি নতুন করে আন্দোলনের কর্মসূচি কিভাবে সাজাবে, তা নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন৷ বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলার বিচার ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে৷ দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে রয়েছে অর্ধ শতাধিক মামলা৷বিএনপির হিসাব অনুযায়ী, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১৪ হাজার মামলা হয়েছে৷ এর আসামির সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখ৷ এসব মামলার বেড়াজালের পাশাপাশি জোট টিকিয়ে রাখতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বিএনপিকে৷ দুটি দল ইতোমধ্যে বিদায় নিয়েছে, এর পেছনে সরকারের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি বিএনপি নেতাদের৷নতুন বছরের শুভেচ্ছা বাণীতে খালেদা জিয়া নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার কথা বললেও কতটা সফল হবেন, তা সময়ই বলে দেবে৷ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অঙ্গীকার রক্ষা না করার অভিযোগ তুলে সংকট উত্তরণে সরকার ও সব পক্ষের সামনে সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷তার এই প্রস্তাবের মূল বক্তব্য হল নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচন করা, যে সরকার হবে প্রতিদ্বন্দ্বী সব পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে৷

এই সাত দফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যমত টওতিষ্ঠার’ অঙ্গীকার ঘোষণা করে তাতে যোগ দিতে সব গণতান্ত্রিক দল, শক্তি ও ব্যক্তিকে শরিক হওয়ারও আহ্বানও জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন৷আমি বিশ্বাস করি, আগামী বছর হবে জনগণের বিজয়ের বছর, বছরের শেষ দিন বুধবার আকস্মিকভাবে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন তিনি৷৫ জানুয়ারির নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিনটি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন৷প্রস্তাবগুলো হলো-. জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে৷. নির্বাচন ঘোষণার আগেই প্রতিদ্বন্দ্বী সব পক্ষের সম্মতিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, যাতে বর্তমান আরপিও সংশোধন করা যায়৷ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রিসভা ও জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হবে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর সম্মতিতে গঠিত’ নির্দলীয় সরকার দায়িত্ব নেবে৷ভোটের তারিখ ঘোষণার পর সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে হবে৷ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানোর পাশাপাশি ‘চিহ্নিত ও বিতর্কিত’ ব্যক্তিদের প্রশাসনের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে হবে৷ সব রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে হবে এবং রাজনৈতিক নেতাদের নামে থাকা ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ মামলা প্রত্যাহার করতে হবে৷এ সরকারের সময়ে ‘বন্ধ করে দেওয়া’ সব সংবাদপত্রে ও টেলিভিশন খুলে দিতে হবে এবং আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ আটক সব সাংবাদিককে মুক্তি দিতে হবে৷নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আওয়ামী লীগের প্রত্যাখ্যানের মধ্যেই নির্বাচন সংক্রান্ত এই সাত দফা উত্থাপন করে খালেদা বলেন, আমরা এই প্রস্তাবনা মেনে নিয়ে জাতীয় সংকট নিরসনের আহ্বান জানাচ্ছি৷ এ বিষয়ে আমরা জনমত গঠনের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যমত ্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ঘোষণা করছি৷সব পক্ষকে এক প্ল্যাটফর্মে এসে অথবা ‘নিজ নিজ অবস্থানে থেকে’ এ আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি৷আপনারা অগ্রাধিকার কোনটিকে দিচ্ছেন আলোচনা না আন্দোলন- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে খালেদা বলেন, আমরা প্রস্তাব দিয়েছি৷ এটা নিয়ে কথা বলতে হবে৷ সরকার চাইলে আলোচনা হতে পারে৷ আমরা কোনো সময়সীমা দিচ্ছি না৷ আমরা চাই অতিদ্রুত নির্বাচন৷এই সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সরকার অবৈধ৷ তারপরও আলোচনা তো ওদের সঙ্গে করতে হবে৷ গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ক্ষোভ আর নেই নেতাকর্মীদের মধ্যে৷ তারা এখন সরকারের পতন ঘটাতে উন্মুখ৷ বিগত সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ডজন খানেক নেতাকর্মীকে হারানোর শোক এখন পরিণত হয়েছে শক্তিতে৷ শুধু তাই নয়, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দৃষ্টান্তমূলক অভিজ্ঞতা নিয়ে আগামী আন্দোলনে নামতে চায় নেতাকর্মীরা৷মূল দল ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন নিয়ে জেলা দলে যে টানাপোড়েন তা নিয়ে হতাশ নয় তৃণমূল৷ আন্দোলনের জন্য তারা সরাসরি কেন্দ্রের নির্দেশেই মাঠে নেমে যান৷ এরপরেও দুর্বার আন্দোলনের জন্য তারা দ্রুত নিজ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিভেদ কমিয়ে আনার পক্ষে৷ তারা এবারের সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিজেদের সর্বশক্তি প্রয়োগের পক্ষে৷ সমপ্রতি ২০ দলীয় জোট নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আন্দোলনের ডাকে এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জেলা ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা৷গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ক্ষোভ আর নেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে৷ একে তো খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত, তার ওপর নির্বাচন ষড়যন্ত্রের অংশ না হওয়ায় তারা খুব খুশি৷ কারণ, এর পরপরই উপজেলা নির্বাচনে তারা দেখেছে সরকারি দলের ভোট ডাকাতি৷ ফলে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট না হওয়ায় বিএনপি অংশ না নেয়ায় তারা সন্তুষ্ট৷