Kamarujjaman_Family_459909604

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ ফেব্রুয়ারি: ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা৷মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃতু্যদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখা করে ফিরে গেছেন তার পরিবারের সদস্যরা৷ তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা না বললেও কামারুজ্জামানের আইনজীবী শিশির মো. মুনির ব্রিফ করেন৷ কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়ে শিশির মো. মুনির জানান, তারা যথাসময়েই রিভিউ করবেন৷ রিভিউ করার আগে জানানো হবে৷

কামারুজ্জামানের পরিবারের বরাত দিয়ে এই আইনজীবী সাক্ষাতের বিষয়ে বলেন, তিনি মোটেই বিচলিত নন৷ তিনি তার পরিবারের সদস্যদের কাছে উচ্চ আদালতে রিভিউ করে খালাস পাবেন বলে ফের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন৷ রিভিই নিষ্পত্তির পরে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানিয়েছেন কামারুজ্জামান৷ শনিবার বেলা এগারটা ৩৫ মিনিটে কারাগারের ভেতর থেকে বের হয়ে আসেন কামারুজ্জামানের স্ত্রী নূরুন্নাহারসহ মোট ৮ জন৷ এর আগে সকাল দশটা ৪০ মিনিটের দিকে কারাগারের ভেতরে ঢোকেন তারা৷ অন্যদের মধ্যে ছিলেন কামারুজ্জামানের মেয়ে আফিয়া নূর, পুত্রবধূ শামীম আরা, শ্যালক আবুল কালাম আজাদ, ভাগ্নে সানোয়ার হোসেন এবং ৩ ভাগি্ন রোকসানা জেবিন, শাহানা জেবিন ও আফরোজা জাহান৷

কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী সাংবাদিকদের জানান, এটি নিয়মিত সাক্ষাতের অংশ৷ তারা ৫৫ মিনিটের মতো ভেতরে ছিলেন৷সাক্ষাত্‍ শেষে বেলা সাড়ে ১১টায় তারা বেরিয়ে আসেন বলে জেল সুপার মো. ফরমান আলী জানিয়েছেন৷ কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আসার পর কারাফটকে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি তার পরিবারের কোনো সদস্য৷তবে এই জামায়াত নেতার আইনজীবী সাবেক ছাত্রশিবির নেতা শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, কামারুজ্জামান সুস্থ আছেন, ভালো আছেন৷আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য কবে আবেদন করা হবে জানতে চাইলে সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ করতে হয়৷ সেই সময় অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই রিভিউ করা হবে৷

আপিল বিভাগের রায় প্রকাশের পর কামারুজ্জামানের মৃতু্য পরোয়ানা জারি হয়৷ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল-২ এর তিন বিচারক মৃতু্য পরোয়ানায় সই করলে নিয়ম অনুযায়ী তা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়, পড়ে শোনানো হয় কামারুজ্জামানকে৷ এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া৷কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা পূর্ণাঙ্গ রায়ের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউয়ের কথা বললেও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় বা মৃতু্য পরোয়ানার যেটা আগে পাওয়া যাবে, সেটা পাওয়ার দিন থেকে ১৫ দিনের সময় গণনা শুরু হবে৷একাত্তরে আল বদর বাহিনীর ময়মনসিংহ জেলা শাখার প্রধান কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯ মে মৃতু্যদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল৷ ওই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায়েও একই সাজা বহাল রাখে৷

আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য কামারুজ্জামান আবেদন করবেন বলে গত ২১ ফেব্রুয়ারি তার সঙ্গে দেখা করার পর জানিয়েছিলেন তার আইনজীবীরা৷কামারুজ্জামানের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের দেখা করা নিয়ে সকালে তার ছেলে হাসান ইকবাল কবলেন, এটা নিয়মিত সাক্ষাত্‍৷ প্রতিমাসে একবার আমরা বাবার সাথে দেখা করি৷ গত ৩১ জানুয়ারি দেখা করেছিলাম৷ সেদিন কারা কর্তৃপক্ষ সাক্ষাতের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করে দিয়েছিল৷এর আগে বৃহস্পতিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) পূর্ণাঙ্গ রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর থেকে রিভিউ আবেদনের জন্য নির্ধারিত ১৫ দিন গণনা শুরু হবে বলে দাবি করেছিলেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা৷ তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আসামি তার আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় ও মৃতু্য পরোয়ানা জানার পর থেকে এ দিন গণনা শুরু হয়েছে৷ ফলে আগামী ৫ মার্চের মধ্যে রিভিউ করতে হবে৷

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারা কর্তৃপক্ষ কামারুজ্জামানকে তার মৃতু্য পরোয়ানা পড়ে শোনান৷ এর দু’ঘন্টা আগে লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃতু্য পরোয়ানাটির সঙ্গে আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপিও পৌঁছে কারাগারে৷ সে সময় কামারুজ্জামান জানান, তিনি আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ করে রিভিউ আবেদনের বিষয়ে জানাবেন৷কামারুজ্জামানের ইচ্ছা অনুসারে ২১ ফেব্রুয়ারি তার ৫ জন আইনজীবী কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আইনজীবীদের রিভিউ করতে বলেন৷

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি(বর্তমান প্রধান বিচারপতি) এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির বেঞ্চ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ এ রায় দেন৷ বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি আব্দুল ওহাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী৷দুপুর একটা ৫৫ মিনিটে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে ৫৭৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়৷ এর আগে বেলা সাড়ে বারোটার দিকে চার বিচারপতি রায়ে স্বাক্ষর দেওয়া শেষ করেন৷রাত পৌনে আটটায় আপিল বিভাগ থেকে ফাঁসির রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পৌঁছে দেওয়া হয় ট্রাইবু্যনালে৷ একই সঙ্গে পাঠানো হয় ট্রাইবু্যনালের রায় ও অন্যান্য ডকুমেন্টস, যেগুলো আপিল শুনানির জন্য পাঠানো হয়েছিল আপিল বিভাগে৷