11-03-15-PM_Parliament-2

দৈনিকবার্তা-নারায়ণগঞ্জ, ১১ মার্চ: খালেদা জিয়ার গ্রেফতার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আদালত নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় তল্লাশি করতে। এই নির্দেশ গুলশান থানায় পৌঁছালেই সেখানে তল্লাশি হবে। এটা করা একান্ত প্রয়োজন। একই সঙ্গে গ্রেফতারি পরোয়ানা গুলশান থানায় পৌঁছামাত্র খালেদাকে গ্রেফতার করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বকালে এম এ আউয়ালের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা এ কথা বলেন।খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে তল্লাশি এবং তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ আদালতের পরোয়ানার অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আদালত নির্দেশ দিয়েছে তল্লাশি করতে, যখনই গুলশান থানায় আদালতের আদেশ পৌঁছবে, তখনই তল্লাশি চালাবে, বুধবার সংসদ অধিবেশনে এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন তিনি।

একই প্রশ্নের উত্তরে সরকার প্রধান বলেন, যে মুহূর্তে গ্রেপ্তারের আদেশ পৌঁছবে, সেই মুহূর্তে গ্রেপ্তার করা হবে।আদালত থেকে তল্লাশি পরোয়ানা জারির ১০ দিন এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ১৩ দিন পরও তা কার্যকর না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে সরকার প্রধানকে প্রশ্ন করেছিলেন তরীকত ফেডারেশনের নেতা এম এ আউয়াল।

জিয়া ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় খালেদাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি হয় গত ২৫ ফেব্র“য়ারি। ওই দুই মামলার পরের শুনানির দিনও তা বহাল রাখা হয়।অন্যদিকে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের মিছিলে হাতবোমা হামলার ঘটনায় গত ৩ মার্চ আদালত থেকে খালেদার কার্যালয় তল্লাশির পরোয়ানা জারি হয়।আদালতের পরোয়ানা পুলিশের হাতেপৌঁছায়নি বলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানিয়ে আসছেন। আর বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, অবৈধ বলেই ওই পরোয়ানা থানায় পৌঁছাচ্ছে না।রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে লাগাতার অবরোধ ডেকে গত ৩ জানুয়ারি থেকে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে রয়েছেন খালেদা। তাকে কিছুদিন পুলিশ অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। এখন অবরুদ্ধ অবস্থা না থাকলেও সেখানে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ।

ওই কার্যালয়ে তল্লাশি চালাতে পুলিশের আবেদনে বলা হয়েছিল, সেখানে বিস্ফোরক থাকতে পারে এবং পলাতক আসামিরা সেখানে থাকতে পারেন।প্রধানমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে সংসদে বলেন, আমিও মনে করি, তল্লাশি চালানো একান্ত প্রয়োজন।নাশকতার কর্মসূচি দিয়ে কার্যালয়ে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার দলের নেতা-কর্মীদের সমর্থনও হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, তার (খালেদা জিয়া) দলের নেতা-কর্মীরাও এখন তার সঙ্গে নেই।এর আগে খালেদা জিয়ার ডাকা অবরোধে নাশকতা এবং আদালতে তার না যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
খালেদা জিয়ার কর্মসূচি বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি-জামাত নেত্রী যে দাবি-দাওয়া দিয়েছেন,তা সবই তার নিজের ও পুত্রের জন্য। তাই জনগণ এখন তাকে একেবারেই সমর্থন করে না, বরং জনগণ ক্ষুব্ধ।নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে গত ৫ জানুয়ারি লাগাতার অবরোধ ডাকেন খালেদা জিয়া। এরপর ফেব্র“য়ারি থেকে প্রায় লাগাতার হরতালও ডাকা হচ্ছে।সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিএনপি জোটের কর্মসূচির মধ্যে নাশকতায় গত ৬৫ দিনে ১১৯ জন মানুষ মারা গেছেন, যাদের অধিকাংশের মৃত্যু ঘটেছে পেট্রোল বোমা কিংবা গাড়িতে দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে। এছাড়া পেট্রোল বোমাসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক কাজে সহস্রাধিক ব্যক্তি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেনএই সময়ে ছয়টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ এবং ৩৪ দফা ট্রেনে নাশকতা চালানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

নাশকতার মুখে বিএনপির দাবি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, বিএনপি এখন রাজনৈতিক আন্দোলনে নেই, বরং জঙ্গিবাদী তৎপরতায় লিপ্ত। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামাত নেত্রী আন্দোলনের নামে অফিসে বসে নাশকতামূলক কাজ করছে। সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে হেয় প্রতিপন্ন করছে। দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করছেন।মানুষ ঘৃণাভরে জ্বালাও- পোড়াও এবং পেট্রোল ঢেলে মানুষ হত্যা ডত্যাখ্যান করেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথার্থ পদক্ষেপ না নিলে বহু আগেই জনগণ খালেদা জিয়াকে গুলশানের কার্যালয় থেকে বের করে দিত।

দুর্নীতির মামলায় আদালতে উপস্থিত না হয়ে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বেগম খালেদা জিয়া কোর্টের আদেশ অমান্য করে অত্যন্ত খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আর আইনকে সমুন্নত রাখা সরকারের দায়িত্ব।জিয়া ট্রাস্টের দুই মামলায় খালেদার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

শেখ হাসিনা বলেন, কোর্ট থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে দেশের যে কোনো নাগরিকের দায়িত্ব হচ্ছে কোর্টে আত্মসমর্পণ করা। আর দায়িত্বশীল নাগরিক অতি দ্রুততার সঙ্গে কোর্টের আদেশ মান্য করবেন, এটাই সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত।২০ দলের কর্মসূচির ফলে সৃষ্ট সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সরকার সচেষ্ট বলেও সংসদে জানানপ্রধানমন্ত্রী।এ নেরাজ্য দীর্ঘদিন চলতে দেওয়া যায় না। দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে তৎপর আছে। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে আরও কঠোর হবে। দেশের মানুষ শান্তি প্রিয়, তারা চায় শান্তিতে বসবাস করতে।জনজীবন নির্বিঘ্ন করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও আধুনিক এবং তার কলেবর বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার ফলে অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার মাত্রা অনেক কমে এসেছে। ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বাস ও ছোট ছোট যানবাহনও স্বাভাবিকভাবে চলছে। হরতাল ও অবরোধের দিনে ঢাকাবাসীকে প্রচণ্ড যানজটের মধ্যে পড়তে হচ্ছে।তবে দূরবর্তী এলাকায় বাস কিছুটা কম চলছে বলে স্বীকার করেন সরকার প্রধান।

প্রধামন্ত্রী আরও বলেন, খালেদা জিয়া এখন আর কোনো রাজনৈতিক দলের নেত্রী নন। তিনি জঙ্গিবাদের নেত্রী। তার কার্যালয় তল্লাশি করা একান্ত প্রয়োজন। কেন-না তিনি বাড়ি ছেড়ে অফিসে বসে আছেন। দেশকে একটা জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র বানাতে চান। দেশে জঙ্গি শাসন কায়েম করতে চান।আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের আইনের অভাব নেই। ট্রাইব্যুন্যালও আছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। যারা মানুষ পুড়িয়ে মারছে, তাদের কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে না। এসব অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সময়ের ব্যাপার মাত্র। গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট হরতাল-অবরোধের নামে দেশে এক চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতার লিপ্সায় অন্ধ হয়ে তারা দরিদ্র খেটে খাওয়া নিরপরাধ, সাধারণ নারী-পুরুষকে পুড়িয়ে মারছে। বিএনপি-জামায়াত নেত্রী যে দাবি-দাওয়া দিয়েছেন তা সবই নিজের ও তার পুত্রের জন্য। দেশের মানুষের কোনো দাবি নেই বলে সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৬৪ দিনের হরতাল-অবরোধে পেটের তাগিদে কাজে বের হয়ে ১১৯ জন মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এর অধিকাংশই আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। পেট্রোলবোমাসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক কাজে সহস্রাধিক ব্যক্তি মারাতœকভাবে আহত হয়েছেন। এ কয়দিনে ২ হাজারের বেশি যানবাহন আগুনে পুড়ানো ও ভাংচুর করা হয়েছে, ৬টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আর ৩৪ দফায় ট্রেনে নাশকতা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ নৈরাজ্য দীর্ঘ দিন চলতে দেওয়া যায় না। দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর আছে। প্রয়োজনে তারা আরও কঠোর হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার ফলে অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার মাত্রা অনেক কমে এসেছে। বাস ও ছোট ছোট যানবাহনও স্বাভাবিকভাবে চলছে। তবে দূরবর্তী এলাকার বাস কিছুটা কম চলছে। বর্তমানে হরতাল-অবরোধের মধ্যেও ঢাকাবাসীকে প্রচণ্ড যানজটে পরতে হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত নেত্রী যে দাবি-দাওয়া দিয়েছেন তার সবই নিজের ও পুত্রের জন্য। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য তার কোনো চিন্তাও নেই, দাবিও নেই। তাই জনগণ এখন তাকে একেবারেই সমর্থন করে না বরং জনগণ তার প্রতি ক্ষুদ্ধ।

শেখ হাসিনা বলেন, তার এসব কর্মকাণ্ডের কারণে দলের নেতাকর্মীরাও তার সঙ্গে নেই। তারপরও বিএনপি নেত্রী আন্দোলনের নামে অফিসে বসে নাশকতামূলক কাজ করছেন। সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে হেয় প্রতিপন্ন করছেন। দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়ডন্ত্র করছেন। বিএনপি-জামায়াত নেত্রী আইন মানেন না। কোর্ট থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে দেশের যে কোনো নাগরিকের দায়িত্ব হচ্ছে কোর্টে আত্মসমার্পন করা। আর দায়িত্বশীল নাগরিক অতি দ্রুততার সঙ্গে কোর্টে আদেশ মান্য করবেন, এটাই সারাবিশ্বে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু খালেদা জিয়া কোর্টে আত্মসমার্পণ না করে অত্যান্ত খারাপ নজির সৃষ্টি করেছেন। এজন্য আমি বলতে চাই- আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, আর আইনকে সমুন্নত রাখা সরকারের দায়িত্ব।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে উঠার জন্য দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।ইংল্যান্ডকে হারিয়ে মাশরাফিদের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিতের পর বাংলাদেশজুড়ে উল্লাসের মধ্যে বুধবার জাতীয় সংসদে নিজের আশার কথা জানান সরকার প্রধান। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ইংল্যান্ডকে হারিয়ে জয়লাভ করেছে। এজন্য আমি জাতীয় সংসদের সকল সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে তাদের অভিনন্দন জানাই। এই প্রথম পরপর ৩ ম্যাচে জয়ী হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছি।আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই, যাতে আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা সেমি ফাইনালে উঠতে পারে। হয়ত একদিন ফাইনালে গিয়ে বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে আনবে।গত সোমবার অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেইডে ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়ে প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। গ্র“প পর্বে শেষ খেলায় শুক্রবার স্বাগতিক নিউ জিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ ভারত।