DoinikBarta_দৈনিকবার্তা pictuer-25-02-2015

দৈনিকবার্তা-নাটোর, ৩০ এপ্রিল: নাটোর ও উত্তরাঞ্চালসহ চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরে নারী শ্রমিক সংখ্যা ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে। ন্যায মজুরী নেই, কাজের নির্দ্দিষ্ট সময় নেই, ভালো ব্যাবহার নেই, তারপরও নারী শ্রমিকরা থেমে নেই। এ অঞ্চলের নারীরা কৃষিকাজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের শ্রম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। রাস্তাঘাটে মাটি কাটা থেকে শুরু করে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীতে কাজ করছেন, ফসল কাটা, কৃষিজমি পরিচর্যা করা, নিড়ানী দেওয়া বীজতলা তৈরী করা,এছাড়া দালান কোঠা নির্মাণে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা তাদেও শ্রম বিক্রি করে থাকেন।

খোয়া ভাঙ্গেন, রাইসমিল, ধানের চাতাল, হোটেলসহ এ অঞ্চলে গড়ে ওঠা ছোট বড় শিল্প কারখানায় সুনামের সাথে কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা।তবে পুরুষের পাশাপাশি একই কাজ করে তারা মজুরী পান পুরুষের তুলনায় অনেক কম।অসহায় এ সমস্ত ছিন্নমুল নারীদের খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে পারলেই হল। এসব কাজে স্বামী পরিত্যাক্তা বিধাব এবং অসায় নারীরা বেশি সম্পৃক্ত। এই ছিন্নমূল অহায় নারীরা সারাদিন শ্রম বিক্রি কওে পান ১৩০-১৫০ টাকা। চলনবিলের প্রায় ৪৫০ চাতালে সাড়ে পাঁচ হাজার নারী ও দেড় হাজার পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন প্রতিদিন ১২-১৪ ঘন্টা। একজন পুরুষকে দিন হাজিরা ২২৫-২৫০ টাকা দিলেও নারী শ্রমিকদের দেয়া হয় মাত্র ১২০-১৪০ টাকা। বিলাঞ্চলের চাতালগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায় আরেক পদ্ধতিতে মজুরী পরিশোধের নিয়ম। এতে ১০০ মণ ধান ভেজানো থেকে শুরু করে সিদ্ধ, শুকানো, ধান ভাঙ্গানো, চাল ও গুড়া পৃথক কওে বস্তাজাত করে খামাল দেযার পর মজুরী হিসেবে পাওয়া যাবে ৪০০ টাকা আর ৭/৮ কেজি খুদ। এক্ষেত্রে পুরুষ বা মহিলার পৃথক কোন মজুরী নেই।

DoinikBarta_দৈনিকবার্তা image_1928_243220

নাটোর বিসিক শিল্প নগরীর বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, একজন সাধারণ পুরুষ শ্রমিক ও নারী শ্রমিকের মজুরী ১৪০-১৫০ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায় প্রচন্ড খরতাপে পুড়ে সারাদিন ইট ভেঙ্গে খোয়া তৈরী করে একজন নারী শ্রমিক মজুরী পান ১৩০ টাকা আর পুরুষ পান ২০০ টাকা।এ কাজটি সাধারনত এ অঞ্চলের আদিবাসীরাই করে থাকে।এখন বিলাঞ্চলের এলাকাগুলোতে চৈতালী ঘরে তোলার পর শুরু হয়েছে বোরো মুগ তোলার পালা যার বেশিরভাগ কাজে সম্পৃক্ত থাকেন নারী শ্রমিকরা।জেলার বেশকয়েকটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা জানা যায়,এ অঞ্চলের অধিকাংশ পুরুষ শ্রমিক অভিবাসী। এরা জীবিকার তাগিদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন। ফলে প্রতি বছর নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে কৃষিকাজ থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু মজুরী বেলায় বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন।

জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তফিজুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশের কৃষি নারী শ্রমিকদের এখনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। নুন্যতম মজুরী আইনও নেই। তারা অবিলম্বে কৃষি শ্রমিকদের স্বীকৃতির দাবী জানান। তিনি আরো জানান, দিন দিন নারী শ্রমিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। নাটোরের বিসিক শিল্প নগরী, প্রাণ কারখানা, চাতাল, গৃহ-নির্মাণ ও কৃষিক্ষেত্রে নারী শ্রমিকরা কাজ করছেন এবং তাদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুরুষের তুলনায় নারী শ্রমিকের মজুরি কম বিষয়ে অভিযোগ উঠলেও অভাব অনটনের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারছেন তারা, আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে পারছেন, সংসারে সচ্ছলতা আনতে পারছেন। তবে অতি দ্রুত মজুরি বৈষম্য নির্মূল করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসবে বলে তিনি আশাবাদী এবং তার সংগঠনের পক্ষ থেকে কার্যকরী ভূমিকা রাখা হচ্ছে বলে তিনি দাবী করেন।