press_club_bg_864839407

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০ মে: বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংবিধানের কিছু অংশের সংশোধনী ও বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানসমূহের পূর্ণবিন্যাস প্রয়োজন।এতে বিদ্যমান নানা সমস্যার সমাধান সম্ভব হতে পারে।সংকটকবলিত রাজনীতির দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি পদের পূর্ণ স্বাধীনতা, প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য ওদায়িত্ব পুনর্র্র্নিধারণ করাসহ সংবিধানের কয়েকটি ধারা এবং সাংবিধানিক বিধিবদ্ধ সংস্থাগুলোর সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ।নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেছেন, দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের ওপর অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়ায় পূর্ণ গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশের অভিযাত্রা অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

রোববার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা। পূর্ণ অগ্রযাত্রার পথে অভিযাত্রা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রাজনীতিই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মূল চাবি কাঠি।দেশের বর্তমান অচলাবস্থার কারণ রাজনৈতিক সংকট ও অপব্যবহার। এ সংকট নিরসনে সংবিধান সংশোধনী প্রয়োজন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়। নিয়ে বিরোধী দলের আন্দোলন দেশের জন্য অশুভ বার্তা বহন করে,’ যোগ করেন ড. শামসুল হুদা।লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এ আন্দোলন সরকারকে যেমন স্বতন্ত্র করতে পারেনি, তেমনি বিরোধী জোটকেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জনে সফল করতে পারেনি। দেশের সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে সাবেক এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা কোন রাজনৈতিক দলের নই। সব পক্ষের অংশগ্রহণে পৌন:পুনিক সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। অন্যথায় দেশের এ অস্থিরাবস্থা থেকে জনগণ মুক্তি পাবে না।

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূলত গত তিন মাসের সন্ত্রাস ও নাশকতায় আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়লেও গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমরা গণতন্ত্রকে বেসিক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশেই কাজ করছি। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশ চলছে না। আমরা একটি বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যেতে চাই। আমাদের এসব ক্ষুদ্র বুদ্ধি যদি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে তারা গ্রহণ করতেও পারে, নাও করতে পারে। এ নিয়ে কেউ উদ্বিগ্ন হলে আমাদের কিছুই করার নেই।অপর এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার মনজুর হাসান বলেন, দুর্নীতি থাকাকালীন উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। কিন্তু দুর্নীতি না থাকলে উন্নতি আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আমি মনে করি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নারীদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক সংসদীয় আসন সংরক্ষণ, জাতীয় ও স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির ওপর গণভোট গ্রহণের আবশ্যিক বিধান প্রয়োজন আছে।লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দুর্ভাগ্যবশত আমাদের নেতৃবৃন্দ সজ্ঞানে কিংবা অজ্ঞানে এটা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন যে জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী ও জবাবদিহিমূলকভাবে গড়ে তুলতে হবে। তাঁরা দায়িত্বশীল বিরোধী দলের উপস্থিতি এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থে অতীত ও বর্তমানের বিষয়ে আপস-মীমাংসার মানসিকতা থাকা যে গণতন্ত্র বিকাশের জন্য অপরিহার্য, সেটাও উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে শামসুল হুদা জানান, ভয়াবহ সন্ত্রাস চলাকালে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীকে সংলাপে বসার তাগিদ দিয়ে যে চিঠি দিয়েছিলেন এর জবাব তাঁরা পাননি। তবে তাঁরা মনে করেন সংস্কার নিয়ে তাঁদের প্রস্তাবগুলো সম্পর্কে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক ও চর্চা চলতে থাকলে সত্যিকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ কোনো না কোনো সময় ফিরে আসবে।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উদ্বিগ্ন নাগরিকেরা যে রাজনৈতিক পরিবর্তন কামনা করছেন—তা একমাত্র রাজনীতিবিদেরাই আনতে পারেন।সাংবিধানিক সংস্কারের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপতি পদের পূর্ণ স্বাধীনতা; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ভারসাম্য আনা; প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য ও দায়িত্ব পুনর্নির্ধারণ করা, সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা রেখে নারীদের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক সংসদীয় আসন সংরক্ষণ, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং ক্ষমতা ও সম্পদ হস্তান্তর করা, জাতীয় ও স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণভোট চালু করা।এছাড়া সাংবিধানিক বিধিবদ্ধ সংস্থাগুলোর মধ্যে জাতীয় সংসদ, সুপ্রিম কোর্ট, নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ও আমলাতন্ত্রের সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা, দলগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক দলগুলোর বিদেশি শাখা বিলুপ্ত করা এবং ছাত্র- পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে দলের কাঠামো থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন,দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের ওপর অত্যধিক গুরুত্ব দেয়ায় পূর্ণ গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশের অভিযাত্রা অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম শামুসল হুদা। এতে বলা হয়, দুর্ভাগ্যবশত আমাদের নেতৃবৃন্দ সজ্ঞানে কিংবা অজ্ঞানে এটা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন যে জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী ও জবাবদিহিমূলকভাবে গড়ে তুলতে হবে। তারা দায়িত্বশীল বিরোধী দলের উপস্থিতি এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থে অতীত ও বর্তমানের বিষয়ে আপস-মীমাংসার মানসিকতা থাকা যে গণতন্ত্র বিকাশের জন্য অপরিহার্য, সেটাও উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের সংস্কার প্রস্তাবগুলো হলো:সাংবিধানিক সংস্কার: রাষ্ট্রপতি পদের পূর্ণ স্বাধীনতা; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ভারসাম্য আনা; প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য ও দায়িত্ব পুনর্র্নিধারণ করা, সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা রেখে নারীদের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক সংসদীয় আসন সংরক্ষণ; স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলার কাছে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং ক্ষমতা ও সম্পদ হস্তান্তর করা, জাতীয় ও স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণভোট চালু করা।

সাংবিধানিক বিধিবদ্ধ সংস্থা: জাতীয় সংসদ, সুপ্রিম কোর্ট, নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ও আমলাতন্ত্রের সংস্কার।পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা, দলগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক দলগুলোর বিদেশি শাখা বিলুপ্ত করা এবং ছাত্র- পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে দলের কাঠামো থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, এম হাফিজ উদ্দিন খান, কলামিস্ট ও সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মনসুর প্রমুখ অংশ নেন।