maya_285810

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ জুন ২০১৫: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সংসদ সদস্য (এমপি) পদ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার এবং আইনজীবী ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন।দুদকের কমিশনার শাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেছেন, মায়ার এমপি পদ থাকতে কোনো বাধা নেই।রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।কিন্তু দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মায়ার সংসদ সদস্য পদ থাকা উচিৎ নয়। এটি একটি বিতর্কের বিষয়। সুতরাং এ বিষয়ে সংসদে আলোচনা হতে পারে।দুর্নীতির মামলায় মায়াকে হাইকোর্টের খালাসের রায় বাতিল করে দেয়া আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় বুধবার প্রকাশ করা হয়।উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ১৩ জুন দুদকের সহকারী পরিচালক নূরুল আলম সূত্রাপুর থানায় মায়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করেন। মামলায় মায়ার বিরুদ্ধে ২৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ আনা হয়।২০০৮ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত এ মামলায় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা এবং তার প্রায় ছয় কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেন আদালত।

২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় বাতিল করে আদেশ দেন।রোববার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে দুদক বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স এ্যগোইনস্ট করাপশন (র‌্যাক) নব নির্বাচিত কমিটির সঙ্গে সক্ষাৎকালে দুদকের কমিশনার শাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেছেন,আইনগতভাবে দণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে কারো সংসদ সদস্যপদ খারিজ হয় না। তেমনিভাবে চূড়ান্ত সাজা না হওয়া পর্যন্ত আইনের দৃষ্টিতে কাউকে দোষী বলে গণ্য করা যায় না। আর তার ব্যাপারে এখনো বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তাছাড়া আমাদের দেশে সাজা চূড়ান্তের একমাত্র মালিক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তাই যতক্ষণ না সাজার বিষয়টি চুড়ান্ত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত মায়ার মন্ত্রী ও সাংসদ পদ বহাল থাকতে আইনী কোন বাধা নেই বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।নিম্ন আদালত বা হাইকোর্টে সাজার উপর নির্ভর করে অতীতে কারো সংসদ সদস্য পদ খারিজ হয়নি বা নির্বাচনের অযোগ্যতা সৃষ্টি হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, তবে নিম্ন আদালত বা হাইকোর্টে দণ্ডের বিরুদ্ধে কারো আপিল গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত ওই ব্যক্তির দণ্ডাদেশ বহাল থেকে যায়। কিন্তু আপিল গৃহীত হলে তাকে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি বলা হয় না। তিনি গণ্য হন বিচারাধীন ব্যক্তি হিসেবে।

দেশ স্বাধীনের পর এখন পর্যন্ত বিচারাধীন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অযোগ্যতার কোনো উদাহরণ সৃষ্টি হয়নি। এমনকি পদে বহাল না থাকারও কোন নজির নেই বলেও জানান তিনি।তবে গত বুধবার মায়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার পর দুদকের আইনজীবী অ্যাড. খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সংসদ সদস্যপদে থাকার কোন বৈধতা নেই। তিনি আর সংসদ সদস্য থাকতে পারবেন না। এ রায়ের পর তার সংসদ সদস্য পদ থাকা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।এ বিষয়ে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, খুরশীদ আলম খান তার ব্যক্তিগত মত থেকে বলতেই পারেন। আমি এখানে আমার ব্যক্তিগতভাবে যা বুঝেছি তাই আপনাদের বললাম। এটা কোন দুদকের বা কমিশনের পক্ষ থেকে মতামত না।

প্রসঙ্গত, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৩ জুন রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৬ কোটির টকারও বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। একই বছরের ২৫ অক্টোবর মায়া, তাঁর স্ত্রী পারভীন চৌধুরী, দুই ছেলে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী ও রাশেদুল হোসেন চৌধুরী এবং সাজেদুলের স্ত্রী সুবর্ণা চৌধুরীকে আসামি করে দুদক চার্জশীট দেয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২ কোটি ৯৭ লাখ ৯ হাজার টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। ৫ কোটি ৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে অর্জন করে ৬ কোটি ২৯ লাখ ২৩ হাজার টাকার সম্পদ নিজেদের দখলে রেখেছেন। পরে ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালত এই মামলায় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করলেও মামলার বাকি আসামিদের খালাস দেন। এ তিনি মামলায় ১৩ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। সেসময় তিনি রায় ঘোষণার পর মায়া পলাতক ছিলেন।এরপর ২০১০ সালের অক্টোবরে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কেবলই আইনি প্রশ্নে ওই রায় বাতিল করেন। একই সাথে মামলাটি হাইকোর্টে নতুন করে শুনানির আদেশ দেন আপিল বিভাগ। দুদক ওই রায়ের এর বিরুদ্ধে আপিল করে। অবশেষে গত ১৪ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে হাইকোর্টে আপিলের পুনঃশুনানির নির্দেশ দেন। এরপর গত বুধবার ২৪জুন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।