ban

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ অক্টোবর ২০১৫: বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে বিদেশিদের এখনো সংশয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন চার দেশের রাষ্ট্রদূত৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে তাঁরা বলেন, ব্যাপারটা (বিদেশি হত্যা) নিয়ে কী হতে যাচ্ছে, তা তাঁরা এখনো বুঝতে পারছেন না৷বুধবার দুপুরে চার দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ সকাল সাড়ে ১০টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন বার্ণিকাট এবং কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনোয়িত পিয়েরে লারামি, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন ও অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনার এইচইমি গ্রেগ উইলক৷ দেড় ঘন্টা ব্যাপী বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, প্রথমত তাঁরা আমাকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছিলেন৷ তবে নিরাপত্তা নিয়ে তাঁদের এখনো সংশয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন৷ তাঁরা বলেছেন, ব্যাপারটা (বিদেশি হত্যা) নিয়ে কী হতে যাচ্ছে, তা তাঁরা এখনো বুঝতে পারছেন না৷ কোন বিষয়ে শঙ্কা রয়েছে, তা জানতে চেয়ে মন্ত্রী রাষ্ট্রদূতদের বলেন, আপনারা তথ্য দেন কোন কোন জায়গায় আপনাদের অনিশ্চয়তা রয়েছে৷ আমাদের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সেসব জায়গা খুঁজে বের করবে৷ এর জবাবে রাষ্ট্রদূতেরা বলেন, যেসব জায়গায় শঙ্কা রয়েছে, সেসব জায়গায় তাঁদের নিজেদের গোয়েন্দারাই কাজ করছেন৷ এ সময় তাঁদের এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি এক সঙ্গে কাজ করি, তাহলে সমস্যাটা বেরিয়ে আসবে৷এ ঘটনার পেছনে আইএসের সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, বৈঠকে এমন আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে যদি আপনাদের কাছে তথ্য থাকে, তাহলে তা আমাদের দেন৷ আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা অত্যন্ত তত্‍পর৷ তারা বিষয়টি খুঁজে বের করবে৷ তবে কোনো বিষয়ে ওই চার রাষ্ট্রদূত তথ্য দিতে পারেননি বলে জানান মন্ত্রী৷

বর্তমানে বিদেশিদের যে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে তা নিয়মিত দেওয়া হবে কি না বৈঠকে রাষ্ট্রদূতেরা এমন প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনাদের যত দিন নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন, তত দিনই নিরাপত্তা দেওয়া হবে৷ বর্তমানে আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে৷ বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে তাঁরা সন্তুষ্ট৷বাংলাদেশের পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার সন্তোষ প্রকাশ করেছে৷সাংবাদিকদের বার্নিকাট আরো বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে না পারলেও বাংলাদেশে এখনো নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা রয়েছে৷বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নেওয়া পদক্ষেপ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তার দেশের পক্ষ থেকে সেদেশের নাগরিকদের কোনো বাধা দেওয়া হয়নি৷মার্কিন এ কূটনীতিক বলেন, আমাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণ ও যাতায়াতে বর্তমানে কোনো বাধা নেই৷ বাংলাদেশে মার্কিনিদের যে বিনিয়োগ রয়েছে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব৷ এজন্য আমরা দু’টি পরামর্শমূলক সতর্কতা জারি করেছি৷এ সতর্কতা অব্যাহত থাকবে৷আমরা কোনো রেড অ্যালার্ট জারি করিনি৷বাংলাদেশ নিয়ে তার অবস্থান তার তাদের দেশের সরকারের পলিসি বলেও বার্নিকাট জানান৷পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কার কথা জানালেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনার৷

তিনি বলেন, তারা অনুমাননির্ভর কথা বরছেন৷ আমি তাদের কাছে তথ্য থাকলে তা খোলাসা করতে বলেছি৷ তারা সুর্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি৷ তবে তারা সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন৷মন্ত্রী বলেন, সরকারের নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা চলমান থাকবে কিনা তা কূটনীতিকরা জানতে চেয়েছেন৷ আমরা বলেছি, চলমান থাকবে৷ দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনায় আইএস কিংবা কোনো মৌলবাদী জঙ্গির কথা তারা বলেননি৷ আমরাও বলেছি এতে আইএস বা জঙ্গিদের জড়িত থাকার কোনো ক্লু পাইনি৷সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, খুব তাড়াতাড়ি বিদেশি হত্যার রহস্য উন্মোচন করা হবে৷ রাপত্তা নিয়ে রাষ্ট্রদূতরা সন্তুষ্ট: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রদূতরা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে৷ ভবিষ্যতেও এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল রাখা সম্ভব হবে কি-না সে ব্যাপারে তারা জানতে চেয়েছে৷তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, কিন্তু ধর্মন্ধ নয়৷ তাই এদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্রয় পাবে না৷স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের বলেছি- দুই বিদেশী হত্যায় আইএস বা কোনো জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি৷ এটি স্রেফ একটি ষড়যন্ত্র৷ এ বিষয়টি আমরা শিগগিরই পরিষ্কার করবো৷

এক প্রশ্নের তিনি বলেন, আমরা তাদেরকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করেছি৷ নিরাপত্তার জন্য যা যা দরকার সরকার তা তা করতে প্রস্তুত৷আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, তাদেরকে বলেছি- দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডে আপনাদের কাছে যদি কোনো সুনির্দষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকে তাহলে আমাদেরকে তা সরবরাহ করুন৷ তারা আমাদেরকে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি৷তিনি জানান, তারা বলেছেন- আমাদের সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো তথ্য দেয়ার বিধান নেই৷ বৈঠকে দুই বিদেশী হত্যা মামলার অগ্রগতি নিয়েও আলাপ হয়েছে৷ তবে খুব শিগগিরই দুই বিদেশী হত্যার রহস্য বের হবে৷প্রসঙ্গত, গত ৩ অক্টোবর রংপুরে মুখোশধারী দুবর্ৃত্তরা গুলি করে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে হত্যা করে৷ এর ছয় দিন আগে ঢাকার কূটনীতিক এলাকা গুলশানে একইভাবে খুন হন ইতালির নাগরিক সিজারি তাভেল্লা৷