2015_12_18_15_25_35_U5TlHKfRKQIowDEaKBTjNiQIGRpwW4_original

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫: আগামী ২৬ মার্চ ১৯৫ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর প্রতীকী বিচারের আয়োজন চলছে।সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনতার সামনে এ বিচার হবে বলে জানিয়েছেন নৌ-মন্ত্রী শাজাহান খান।শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির তৃতীয় তলায় আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার’র সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান। মন্ত্রী এ কমিটির আহ্বায়ক। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচার স্বাধীনতা হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শাজাহান খান এসব কথা বলেন। ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সেনাদের প্রতীকী বিচারে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার’-এর আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

১৯৭১ সালে নরঘাতক ১৯৫ পাকিস্তানি সেনার বিচারের অঙ্গীকার করে ফিরিয়ে নেয় দেশটি। সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টিতে জনমত গড়া কমিটির প্রধান লক্ষ্য।গণবিচারের আগে আগামী ১৯ থেকে ৩১ ডিসেম্বর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় হবে বলে জানান তিনি।মন্ত্রী বলেন, আগামী ২৬ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ জনতার সামনে ১৯৫ পাকিস্তানি ঘাতকের প্রতীকী গণবিচার করা হবে।তিনি বলেন, পাকিস্তানি নরঘাতক সেনাবাহিনীর ৯৫ হাজার সদস্য ও তাদের সহযোগী আল-বদর, আল-শামস, রাজাকাররা বিশ্বের ইতিহাসে নৃশংসতম বর্বরোচিত গণহত্যা চালিয়েছিল। তারা লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছিল। এই মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্যতম অপরাধে তাদের বিচার করা হবে।

শাজাহান খান জানান, মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৫ জন সেনাকর্মকর্তার যুদ্ধাপরাধের বিচার করার অঙ্গীকার করে তাদের দেশে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও পাকিস্তানি সরকার তাদের বিচার করেনি।তিনি বলেন, এজন্য আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি ওইসব সেনা কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে আনা হবে এবং এদেশে তাদের সহযোগিদের বিচার করা হবে।আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, প্রতীকী বিচারের মাধ্যমেই আমাদের এই আন্দোলন শুরু হবে। যতদিন তাদের নির্মূল করতে না পারব ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে। আমার বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এ আন্দোলনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে এনে বিচারের এই আওয়াজ এবং জাগরণ একদিন বাস্তবে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্তি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে শাজাহান খান ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৯ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর গণসংযোগ, ৩ জানুয়ারি ২০১৬ মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশ এবং ৬ জানুয়ারি সকাল ১০টায় যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ বহাল ও কার্যকর করার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি।সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক আবেদ খান, জাসদ নেত্রী শিরিন আখতার এমপি, মুক্তিযোদ্ধা ইসমত কাদির গামা, শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের কন্যা অভিনেত্রী শমী কায়সার প্রমুখ।

ঢাকার পাকিস্তান দূতাবাস এখন ষড়যন্ত্রের আখড়া ও নব্য কাশিমবাজার কুঠিতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিরা পরাজয়ের গ্লানি এখনো ভুলতে পারেনি। তারা বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করার যড়যন্ত্রে এখনো লিপ্ত রয়েছে।’সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার ৫০১ জনকে নিয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে আহ্বায়ক পদে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক সাংবাদিক আবেদ খানসহ নয়জন এবং সদস্যসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান আলী, সাংবাদিক অঞ্জন রায় ও কামাল পাশা চৌধুরী; সহকারী সদস্যসচিব শমী কায়সার ও কামরুল আলম রয়েছেন।সংগঠনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে লিখিত বক্তব্যে শাজাহান খান ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সেনার বিচার ও দেশটির কাছে বাংলাদেশ সরকারের পাওনা আদায়ে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি, পাকিস্তানি যারা বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, তাদের দ্রুত পাকিস্তানে ফেরত, পাকিস্তান দূতাবাসের ষড়যন্ত্রকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিবেচনা, যেসব চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর কবর সরকারি স্থানে আছে, তা স্থানান্তর এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গঠনের মাধ্যমে গণজাগরণ সৃষ্টিসহ আরও কয়েকটি লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ঢাকার পাকিস্তানি দূতাবাসের ভিসা কর্মকর্তা মাজহার খান ও তারপর সেকেন্ড সেক্রেটারি ফারিনা আরশাদ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জঙ্গি নেটওয়ার্ক মনিটর করছেন এবং জাল মুদ্রার ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। যাতে বাংলাদেশ স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয় ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করা যায়।সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সেনার প্রতীকী বিচারের প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করেন আবেদ খান। তিনি বলেন, সরাসরি আদালত গঠনের এখতিয়ার এবং বিদেশি নাগরিকের বিচারেরও অধিকার তাদের নেই। এ জন্য শহীদ জননী জাহানারা ইমামের গণ-আদালতের আদলে বিচারপদ্ধতি তারা অনুসরণ করবেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে বিচারকদের সমন্বয়ে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করব এবং তাদের পক্ষে কথা বলার জন্যও আইনজীবীও নিয়োগ করা হবে। অর্থাৎ, একটি ট্রাইব্যুনালের স্বাভাবিক যে চরিত্র থাকে, সেটা অবিকৃত রাখতে চাই। সেখানে ১৯৫ জন পাকিস্তানি নাগরিকের প্রতীকী বিচার সম্পন্ন করতে চাই।’ এ সময় শাজাহান খান যোগ করেন, ‘জাহানারা ইমাম যে প্রতীকী বিচার করেছিলেন, তা আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। সুতরাং আমাদের এই জাগরণ ও আওয়াজ একদিন বাস্তবে পরিণত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।