21-07-16-Khetab Prapto Muktijuddha Association_Press Confe-3

সরকার উৎখাত করে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করাই গুলশানের হলি আর্টিজান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলাকারী জঙ্গিদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বলে মন্তব্য করেছেন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাসোসিয়েশনের ক্যাপ্টেন সাহাব উদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম।বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।সাহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, হামলাকারী জঙ্গিদের মূল উদ্দেশ্য ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহার করে এবং ধর্মের অপব্যাখা দিয়ে জঙ্গি হামলা ও নাশকতার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ দ্বারা পারিচালিত সরকারকে উৎখাত করে সকল যুদ্ধাপরাধীকে রক্ষা করা।তিনি বলেন,১৯৭১সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন একশ্রেণির বেঈমান ও বিশ্বাসঘাতকদের অপচেষ্টা বিজয় কিছুটা ব্যহত হলেও সাধারণ জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির নিকট তা পরাজিত হয়। এবারও তারা পরাজিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, স্বাধীনতা বাঙ্গালীর সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙ্গালীর শ্রেষ্ঠ গৌরব। মহান মুক্তিযুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী সাংবাদিকবৃন্দের অবদান ও সকল শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ কওে উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। হাজার বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ বাঙ্গালী জাতি প্রায় দুইশত বছর বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও লড়াই করার ফলে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। শুরু থেকে বাঙ্গালীদের উপর পাকিস্তান শাসকগোষ্টির শাসন, শোষন, অত্যাচার, নিপিড়ন ও বৈশম্যমূলক আচরনে বাঙ্গালী জাতি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীকার আন্দোলনের যে সূচনা হয়েছিল, তা পরিনতি প্রাপ্তি ঘটেছিল এই সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে, যেখানে দাড়িয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, ইতিহাসের সবচেয়ে সাহসী অগ্নিপুরুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উচ্চারন করেছিলেন এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর সেই দীপ্ত ও বলিষ্ঠ কন্ঠের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেদিন রণক্ষেত্রে ঝাপিয়ে পড়েছিল এদেশের প্রায় দুই লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা। ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রোমের বিনিময় এবং মুক্তিযোদ্ধরা প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী লড়াই করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র অর্জন করে।

লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, স্বাধীনতার উত্তরকালে ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ পুর্নগঠনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যখন সমস্ত জাতি ব্যস্ত ছিল ঠিক তখনই স্বাধীনতা বিরোধী সম্রাজ্যবাদী ও মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত অপশক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা কওে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা পাকিস্তানের ধ্যান ধারনায় রাষ্ট্র পরিচালণা করতে শুরু করে। ৭৫ পরবর্তীকালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে অর্জিত বাঙ্গালী জাতি স্বত্তাকে বিসর্জন দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক উগ্র মৌলবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠী তৎকালীন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে স্বাধীনতা বিরোধী এই অপশক্তির পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অব্যহত থাকে।সূদীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যথারীতি নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের সরকার গঠিত হওয়ার ফলে বহুল প্রতিক্ষিত যুদ্ধারাধীদের বিচার কার্য পরিচালনা ও রায় বাস্তবায়ন সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম যখন এগিয়ে চলছে এবং দেশ যখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে ঠিক সেই মুহুর্তে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রান্তকারীদের উষ্কানী ও মদদে ধর্মান্ধ উগ্রপন্থি জঙ্গিরা গত ১ জুলাই পবিত্র রমজান মাসে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ যখন তারাবীর নামাযে ব্যস্ত ঠিক তখনই গুলশান “হলি আর্টিজান রেস্তোরায়” আত্মঘাতি হামলা চালিয়ে পুলিশসহ দেশী-বিদেশী মানুষকে জিম্মি করে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া দেশের সর্ববৃহৎ পবিত্র ঈদুল ফিতরের ঈদের জামাতের পূর্বক্ষনে আত্মঘাতি হামলায় পুলিশসহ একজন গৃহবধু নিহত হয়। এর ফলে দেশের শান্তিকামী মানুষসহ গোটা বিশ্বাসী স্তম্ভিত হয়ে পড়ে।

বক্তব্যে বলা হয়, হামলাকারী জঙ্গিদের মূল উদ্দেশ্য ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহার করে এবং ধর্মের অপব্যখ্যা দিয়ে জঙ্গি হামলা ও নাশকতার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত সরকারকে উৎখাত করে সকল যুদ্ধাপরাধীদেরকে রক্ষা করা। উল্লেখিত স্থানে জঙ্গি হামলার পরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সরকার দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে জিম্মিদের উদ্ধারসহ উগ্র-জঙ্গীদের মোকাবেলা করায় বিশ্বের নেতৃবৃন্দ জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে।

ইতিমধ্যে সরকার এইসব উগ্র ধর্মান্ধ জঙ্গিদের উৎপাটনের লক্ষে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী ঘোষণা করেছে, আমরা সরকারের এর সমস্ত উদ্যোগকে খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পূর্ন সমর্থনসহ একাত্ত্বতা ঘোষনা করছি এবং একই সাথে নির্মূলে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের সমর্থনসহ জঙ্গি প্রতিরোধ করার জন্য সকল মুক্তিযোদ্ধাসহ সমগ্র দেশবাসীকে উদাত্ব আহবান জানানো হয়।১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় একশ্রেণীর বেঈমান ও বিশ্বাসঘাতকদেও অপচেষ্টায় বিজয় কিছুটা ব্যহত হলেও সাধারন জনগনের ঐক্যবদ্ধ শক্তির নিকট তা পরাজিত হয়। আসুন আমরা ৭১’ এর চেতনা বুকে ধারন করে জাতির ও ধর্মের দুষমন এই ধর্মান্ধ উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই।পরিশেষে আপনাদেও সকলের সুখ, শান্তি, দীর্ঘায়ু এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও উন্নতি কামনা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল হারুনুর রশিদ বীর প্রতীক, সংগঠনের মহাসচিব আলহাজ মোঃ শাহজাহান কবির বীর প্রতীক, সৈয়দ রফিকুল হক বীর প্রতীক, বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর অবসর প্রাপ্ত মেজর জেনারেল জামিল ডি আহসান বীর প্রতীক, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর অবসর প্রাপ্ত কমোডর আবদুল ওয়াহিদ চৌধুরী বীর উত্তম ও বীর বিক্রম, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অবসর প্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লীডার লেয়াকত আলী খান বীর উত্তম, বাংলাদেশ বিমানের সাবেক বৈমানিক ক্যাপ্টেন সাহাব উদ্দিন আহম্মদ বীর উত্তমসহ প্রমুখ।