06-12-16-pm_ecnec-meeting-3

অনুমোদন পেল বহুল আলোচিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প। এটি দেশের ইতিহাসে এযাবৎকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প।পামাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে রাশিয়া দিচ্ছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। চলতি বছর থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন।মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়।রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প হিসেবে এটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় পরিকল্পনাসচিব তারিক-উল-ইসলাম, আইএমইডি সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভিভিইআর ১২০০ (এইএস ২০০৬) রিঅ্যাক্টরের দুটি বিদ্যুৎ ইউনিট (ইউনিট ১ ও ২) এর সমন্বয়ে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। সেই সঙ্গে এটি পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভৌত অবকাঠামো তৈরি, বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য পরমাণু প্রযুক্তিসংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্য ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা এবং কার্বনমুক্ত ও বেইসলোড বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা সম্ভব হবে।সভার পর সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন,“বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় থাকার সময় ছোট পরিসরে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তখন এটি ছিল ২০০ মেগাওয়াটের। সে সময় পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়াকে প্রকল্প পরিচালকও করেছিলেন। তিনি (বঙ্গবন্ধু) মারা যাওয়ার পর প্রকল্পটা থমকে যায়। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও আর্থিক অসঙ্গতির কারণে সম্ভব হয়নি। এখন রাশিয়ার সহযোগিতায় এটি করা হচ্ছে।এটি হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রকল্প, বলেন মন্ত্রী।

বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড ব্যয়ের এই প্রকল্পে দুটি ইউনিটের মাধ্যমে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল পর্বের কাজ বাস্তবায়নে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে রাশিয়া ৪ শতাংশ হারে সুদে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে। ১০ বছরের রেয়াতকালসহ ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে বাকি ২২ হাজার কোটি টাকা।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গৃহীত প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত ২৬ জুলাইয়ে রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মধ্যে একটি ‘স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কমিশনিং,পরিচালন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে দুই হাজার ৫৩৫ জন কাজ করবে। এছাড়াও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিটে বিভিন্ন পর্যায়ে ৩৬৯ জন লোক নিয়োজিত থাকবে।এর আগে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রস্তুতি হিসেবে ২০১৩ সালে পাঁচ হাজার ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম পর্যায় প্রকল্প’ অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। ওই প্রকল্পেও রাশিয়া চার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়।প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ বাস্তবায়নে রুশ ফেডারেশনের পক্ষে এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট এবং বাংলাদেশের মধ্যে পরমাণু শক্তি কমিশনের মধ্যে চারটি চুক্তি হয়েছে।