দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান আরও জোরালো করার লক্ষ্যে সরকার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জন্য ১০১ কোটি ৭১ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে।জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় দুদকের জন্য এ বরাদ্দের প্রস্তাব করেন।বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক অব¯’া উন্নয়নের জন্য একটি সুশাসনভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করা আমাদের সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। এর অংশ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০১৬ সংশোধন করা হয়েছে।তিনি বলেন, দুর্নীতির অভিযোগসমুহ সরাসরি গ্রহণের উদ্যোগ হিসেবে দুদকে হটলাইন চালু করা হয়েছে।অর্থমন্ত্রী বলেন, শুদ্ধাচার কৌশলের নিবারণমূলক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দুর্নীতি প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন গণশুনানি পরিচালনা করছে। ভবিষ্যতে এ কার্যক্রমকে আরো বিস্তৃত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছেদুদকের মোট বরাদ্দের মধ্যে অনুন্নয়ন খাতে ৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং উন্নয়ন খাতে ২০ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ।বিদায়ি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য মোট ৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে বিদায়ি বছরের চেয়ে ১০ কোটি ৭১ লাখ টাকা বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে।উল্লেখ্য, বিদায়ি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে দুদক-এর জন্য ৮৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল।

এদিকে, আগামী অর্থ বছরের জন্য বৃদ্ধ, বিধবা, পরিত্যাক্ত নারী এবং আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীসহ দরিদ্র লোকদের জন্য বরাদ্দ আরো বাড়ানো হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আজ জাতীয় সংসদে আগামী অর্থ বছরের জন্য পেশকৃত প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কমসূচীতে বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন।অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় এই কর্মসূচীর অধিনে আরো দরিদ্র মানুষকে নিয়ে আসতে নিরাপত্তা বেষ্টনি আরো সম্প্রসারনের প্রস্তাব করেন। তিনি বাজেট বক্তৃতায় দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তায় বৃদ্ধ ও অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য মাসিক ভাতা আরো বৃদ্ধি করার সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির সুফল সমাজের সকলেই পাবে।বাজেটে দরিদ্র লোক এবং বিধবা ও পরিত্যাক্ত নারীর মাসিক ভাতা জনপ্রতি বর্তমান বরাদ্ধ ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বয়স্ক ভাতা এবং বিধবা, অসহায় ও পরিত্যাক্ত নারীদের সুবিধা ভোগিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৩৫ লাখ ও ১২.৬৫ লাখ। বর্তমানে এই সংখ্যা আছে ৩০.৫০ লাখ বৃদ্ধ ও ১১.৫০ লাখ সুবিধা বঞ্চিত নারী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর অধিন মাসিক ভাতা পা”েছন।

বাজেটে আগামী অর্থ বছরে ৬ লাখ দরিদ্র নারীকে মাসিক ৭০০ টাকা মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমান অর্থ বছরে ৫ লাখ ৫০০ টাকা করে মাসিক ভাতা পাচ্ছেন। অস্বচ্ছছল প্রতিবন্ধ দের জন্য মাসিক ভাতা বৃদ্ধি করে ৬০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৭০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সুবিধা ভোগি অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধির সংখ্যা বর্তমান ৭.২৫ লাখ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৮.২৫ লাখ।অর্থমন্ত্রী তার প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা বৃত্তি ভাতার সুবিধা ভোগির সংখ্যা প্রত্যেক পযার্য়ে ৫০০০ থেকে বাড়িয়ে ১০,০০০ করার প্রস্তাব করেন। তিনি তৃতীয় লিঙ্গের লোকদের আথির্ক সহায়তা বৃদ্ধির সুপারিশ করে তাদের জন্য ১১.৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন।বাজেটে বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধি করে ৬.৩২ কোটি টাকা থেকে ২৭ কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বাজেটে চা শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে খাদ্য সহায়তায় ভর্তুকি হিসাবে এক কালিন ৫০০০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন। তিনি বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাসিক ভাতার অতিরিক্ত প্রত্যেকের জন্য ১০ হাজার টাকা করে উৎসব ভাতা দেয়ারও সুপারিশ করেন। তিনি কর্মজীবি মাদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা সুবিধা ভোগির সংখ্যা বর্তমান ১.৮০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ করার প্রস্তাব করেছেন।এদিকে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন খাতে মোট ২০ হাজার ৬৫২ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন।বৃহষ্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশকালে অর্থমন্ত্রী এই প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উন্নয়ন ব্যয় ৭ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা ও অনুন্নয়ন ব্যয় ৮ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার ক্যলাণ বিভাগের উন্নয়ন ব্যয় ধারা হয়েছে ১ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা ও অনুন্নয়ন ব্যায় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।স্বাস্থ্যখাতে বিগত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ বেড়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ হয়েছিলো ১৭ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা।বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, দরিদ্র গ্রামীন ও প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক চালু এবং মাতৃ-স্বাস্থ্য ভাউচার কর্মসূচি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে ১৩ হাজার ৩৩৯ টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। বর্তমানে আরো ৩৯২ টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।এছাড়াও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টেলিমেডিসিন সেবা কেন্দ্র এবং ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রতিবন্ধীদেও জন্য এসব ক্লিনিকে বিশেষ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান তিনি। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, দেশের সকল মানুষের জন্য মানসম্মত ও সহজলভ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পূর্বেও ধারাবাহিকতায় ৪৩ হাজার ৪ শত ৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ বছর মেয়াদি স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচি আমরা গ্রহণ করেছি। এর মাধ্যমে মা ও শিশুর জন্য উন্নত স্বাস্থ্য সেবা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নত প্রজনন স্বাস্থ্য, বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা সংক্রামক ও অসংক্রামক ব্যাধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন জনিত নতুন আবির্ভূত রোগ নিয়ন্ত্রন,পুষ্টিরমানসম্পন্ন নিরাপদ খাদ্য এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।