লালমনিরহাটের স্থানীয় হাটগুলোতে কোরবানির পশুর ব্যাপক আমদানি হলেও বেচা-কেনা জমে ওঠেনি। গরু-ছাগলের ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ খামারি ও গবাদিপশু পালনকারীরা। চাহিদার তুলনায় বেশি পশু থাকলেও জেলায় চলমান ভয়াবহ বন্যার কারণে এ দুর্দশা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

সরেজমিনে জেলার পশু বেচা-কেনার সবচেয়ে বড় হাট বড়বাড়িহাট, পাটগ্রামহাট, চাপারহাট, দইখাওয়াহাট, হাতীবান্ধাহাট, বড়খাতাহাট, বুড়িরহাটে গিয়ে দেখা গেছে, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার গবাদিপশুর আমদানি অনেক বেশি। প্রচুর গৃহপালিত গরু-ছাগলের পাশাপাশি এসেছে ভারতীয় গরুও। তবে বেচা-বিক্রি কম।

স্থানীয়রা জানান, প্রধান প্রধান নদীর বাঁধ ভেঙে জেলার ৫টি উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকার রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর পানির নিচে ডুবে আছে। বাড়ি-ঘর ছেড়ে গবাদিপশু নিয়ে নদীর বাঁধ, বিদ্যালয় ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন বানভাসিরা। এ অবস্থায় গবাদিপশুগুলো পালন করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়েই অনেকে বিক্রি করে দিচ্ছেন সেগুলোকে।

গরু বিক্রি কেতকীবাড়ী এলাকার খামারি মোজাহার আলী জানান, হাটে পশু আমদানি বেশি। কিন্তু সে তুলনায় পাইকারি ব্যবসায়ী না থাকায় কম দামেই বেচা-কেনা হচ্ছে। গরুর খাবার সংগ্রহ ও রাখার জায়গার অভাবে বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ কম দামে হলেও বিক্রি করে দিচ্ছেন।

বিক্রেতারা জানান, মাঝারি আকারের গরু বিক্রি হলেও বড় গরু নিয়ে আতঙ্কিত তারা। চলতি বাজারে একেকটি মাঝারি গরু ৪০ হাজার টাকা থেকে ৫৫ হাটার টাকা ও বড় গরুর দাম হাকা হচ্ছে ৭০ হাজার টাকা থেকে ৯০ হাজার টাকায়। এতো কম দামেও বেচা-কেনা কম।

তারা আরো জানান, গত বছর যে আকারের গরু বিক্রি হয়েছে লক্ষাধিক টাকায়, এবার সে আকারের গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা। গরুপ্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা কম।

আদিতমারীর কুমড়ীরহাট এলাকার আব্দুল কাদের জানান, ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবারের মতো এবারও ১৬টি গরু পালন করেছেন তিনি। তার খামারের প্রতিটি গরুর মূল্য ৫৮ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু এবার বন্যার কারণে প্রতিটিতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা কমে গেছে। ফলে দারুন ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি।

স্থানীয় অন্য খামারিরাও একই অবস্থায় পড়েছেন বলে জানান আব্দুল কাদের।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সুত্রে জানা যায়, এ বছর কোরবানির জন্য জেলায় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩৬৮টি পশু প্রস্তুত করা রয়েছে। এর মধ্যে ৪০হাজার ৯৩২টি ষাঁড়, ২৩ হাজার ৪৩৮টি বলদ, ৫৮ হাজার ৫৯৯টি খাসি-ছাগল ও ১৬ হাজার ৩৯৮টি ভেড়া।

অবে অনেকেই মনে করেন, ঈদের আরো কয়েকদিন বাকি আছে। পুরোপুরি বিক্রি শুরু হলে কিছুটা দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে পশুপালনকারীরা লাভবান হবেন বলে আশা করছি’।