সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতিতে দেখতে যাবেন ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকরা।চলমান এই সঙ্কট নিয়ে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, আগামী বুধবার কূটনীতিকদের কক্সবাজার নিয়ে যাওয়া হবে।চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট ও এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান বিদেশি কূটনীতিকদের জানানোর ধারাবাহিকতায় সোমবার এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডাকা হয়।রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এই বৈঠক হয়।এর আগে রোববার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের এই সঙ্কট সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। সহিংসতার মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ঢল সামালানো নিয়ে সঙ্কটময় মুহূর্তে প্রতিবেশী ভারত ও চীন বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানাতে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার দ্বিতীয় দফায় সোমবার এশিয়ার কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক হয়।

দশকের পর দশক ধরে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশে সম্প্রতি আরও তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগের রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আহ্বান জানিয়ে আসা হলেও তাতে কোনো গা করছিল না মিয়ানমার।নতুন করে রোঙিঙ্গা ¯্রােত আসার পর বাংলাদেশ মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ‘সেইফ জোন’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে। পাশাপাশি সন্ত্রাস দমনে সীমান্তে যৌথ অভিযান চালাতেও মিয়ানমারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারের আচরণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ মন্তব্য করে দেশটিকে থামাতে চীন ও ভারতের দ্বারস্ত হতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, চীন ও ভারত আমাদের ভাতৃপ্রতিম দেশ। এই দুঃখকালীন, কষ্টকালীন সময়েও তারা আমাদের পাশে থাকবে, আগে যেভাবে থেকেছে।এর আগে রোববার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের এই সঙ্কট সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।

এদিকে, চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে সোমবার সংসদে সাধারণ আলোচনা হবে।সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় এই বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।সংসদের সোমবারের কার্যসূচিতে আলোচনার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারি দলের সদস্য দীপু মনি বলেছেন, সংসদের অভিমত এই যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর অব্যাহত নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ, তাদেরকে তাদের বাসভূমি থেকে বিতাড়ন করে বাংলাদেশে পুশইন করা থেকে বিরত থাকা এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে নাগরিকত্বের অধিকার দিয়ে নিরাপদে বসবাসের ব্যবস্থা গ্রহণে মিয়ানমার সরকারের উপর জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের জোরালো কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের আহবান জানানো হোক।মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নিপীড়ন চলে আসছে কয়েক দশক ধরে। বিভিন্ন সময়ে সহিংসতার মুখে সেখান থেকে পালিয়ে এসে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে।তাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বার বার আহ্বান জানানো হলেও মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি। গত ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে নতুন করে সেনা অভিযান শুরু হয়। নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর এই পর্যন্ত ৩ লাখের মতো রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।শরণার্থীদের এই ¯্রােত ঠেকাতে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মতো কোনো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে একাধিক নিরাপদ এলাকা (সেইফজোন) গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।এর আগে রোববার দশম সংসদের সপ্তদশ অধিবেশন শুরুর পর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী সংসদে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে অনির্ধারিত আলোচনা শুরু করলে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া তাকে থামিয়ে দেন। ডেপুটি স্পিকার এই স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যকে নোটিস নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় এই বিষয়ে আলোচনার কথাও বলেন।