বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে দলে বিভেদ সৃষ্টির যে চেষ্টা সরকার করছেÑ তা বাস্তবায়ন হতে দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়াসহ সকল নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলনকে রিমান্ডের নামে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছেÑএ অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার দেশটাকে পৈতৃক সম্পত্তি মনে করছে আর রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা বিএনপির ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে।গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আবারো শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপিতে ভাঙন সৃষ্টি করতে সরকার বিভিন্ন কৌশলে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তিনি বলেন, আজকে আমাদের বিরুদ্ধে চতুর্দিক থেকে সরকার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করাচ্ছে। ফেসবুকে দেখবেন, বিভিন্ন রকম অপপ্রচার চালাচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে ভাঙন সৃষ্টি করার জন্য যে, বিএনপির নেতৃত্বে মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি হোক।আমি বলতে চাই- জনগণের শক্তিকে ভয় পাচ্ছে বলেই আজকে তারা বিভিন্ন কৌশল আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, অপপ্রচার চালাচ্ছে। এতে লাভ হবে না। আমাদের দেশে একটা কথা আছে শকুনের দোয়ায় গরু মরে না।শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথেই আন্দোলনে সফলতা আসবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, অনেকে প্রশ্ন করেন আপনারা এই শান্তিপুর্ণ শান্তিপূর্ণ করছেন, লাভ কী হচ্ছে। আমি বলতে চাই, এটাই একামাত্র পথ। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণের সম্পৃক্ততা নিয়ে এসে যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনকে সরকার ভয় পাচ্ছে।খালেদা জিয়াকে সরকার ছলচাতুরি’ করে আটকে রাখতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আমাদের দেশনেত্রী, আমাদের মাদার অব ডেমোক্রেসি তাকে ছলচাতুরি করে আটকে রাখার চেষ্টা করছেন । এতো ভয় পান যে বেগম জিয়া যদি আজকে বের হন তাহলে আপনারদের ওই যে মসনদ, এই মসনদ জনগনের ¯্রােতে ভেসে চলে যাবে। এই কারণে আপনারা তাকে আটকিয়ে রাখছেন।আমরা বলতে চাই, দেশনেত্রী বেশি দিন কারাগারে থাকবেন না, জনগণ তাকে মুক্ত করবে। আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করবো অতি দ্রুত ইনশাল্লাহ।বিরোধী দলকে নির্মূল করতে সরকার বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মামলা-মোকাদ্দমা’ ও ‘অত্যাচার-নির্যাতন’ চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।ক্রমান্বয়ে গণতান্ত্রিক সমস্ত পরিসরটা ছোট হতে হতে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সভা-সমাবেশ করার জায়গা দেওয়া হয় না। আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করতে চেয়েছিলাম, জায়গা দেয়া হয়নি।

একই সঙ্গে আগামী ১৫ মার্চ চট্টগ্রামে, ১৫ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, ২৪ মার্চ বরিশালে ও ৩১ মার্চ রাজশাহীতে জনসভার করার কথাও জানান বিএনপি মহাসচিব।

ছাত্র দলের তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিজানুর রহমান মিলনকে পুলিশি নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।আজকে মিলনকে হত্যা করেছে। মিলনের মা, তার বোন আহজারি করছেন যে আমার ছেলেটা ভালোভাবে সুস্থ অবস্থায় আটক হলো। তিনদিন রিমান্ডে নিয়ে তারা (পুলিশ) কী করলো যে, সে লাশ হয়ে ফিরল? মিলনকে নির্যাতন-নিপীড়ন করে হত্যা করা হয়েছে। এরপর তাকে তারা জেলে পাঠিয়ে বলেছে যে, সে জেলে মারা গেছে।এই ছেলেটি জীবন দিয়ে দিয়েছে শুধুমাত্র গণতন্ত্রকে ভালোবাসবার জন্য, গণতন্ত্রের রাজনীতি করবার জন্য, দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনবার জন্য। আজকে একা মিলন নয়, এরকম কয়েক বছরের আমাদের অনেক মিলন চলে গেছে। ২০১৩ সাল থেকে আমাদের কতজন নিখোঁজ হয়ে গেছে, এখন পর্য়ন্ত কেউ ফিরে আসেনি।বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আমরা বার বার বলছি যে, আমরা নির্বাচন করতে চাই। আমরা নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কিন্তু সেই নির্বাচনটা কীভাবে হবে?একটা নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছেন তা আপনাদের (ক্ষমতাসীন) লোকজন দিয়ে। আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবে কাজ করবে। ইতিমধ্যে তা প্রমাণিত হয়ে গেছে। আপনারা আমাদের দেশনেত্রীর কারাগারে যাবার পর থেকে আমাদের সাড়ে ৫ হাজার নেতা-কর্মীকে জেল দিয়েছেন। আপনারা ক্ষমতায় আসার পর থেকে ৭৮ হাজার মামলা দিয়েছেন আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে, সাড়ে ১৮ লক্ষ আসামী বানিয়েছেন। এই হচ্ছে রাষ্ট্রের অবস্থা।দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ নেতা-কর্মীরা আইনি প্রক্রিয়া কারামুক্ত হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল।২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমানসহ ১০ জন নেতার গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তাদের মুক্তির দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই আলোচনা সভা হয়।

সংগঠনের আহ্বায়ক গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও অমলেশ দাস অপুর পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, জন গোমেজ, অপর্ণা রায়, নিপুন রায় চৌধুরী, সুশীল বড়ুয়া, দেবাশীষ রায় মধু ও জয়দেব জয় বক্তব্য দেন।