গাজীপুরে চুরির ঘটনায় কর্মকর্তাদের মারধরে পোশাক কারখানার এক শ্রমিক নিহতের গুজবে বৃহষ্পতিবার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। এসময় তারা আশেপাশের বেশ কয়েকটি কারখানাসহ গাড়ি ভাংচুর করেছে। উত্তেজিত শ্রমিকদের হামলায় আনসারের এক সদস্য নিহত ও তিনজন আহত হয়েছে। আত্মরক্ষার্থে আনসার সদস্যরা ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে বেশ কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। নিহত আনসার সদস্যের নাম ভৈরব চন্দ্র সরকার (৩৫)। তিনি গাইবান্ধা জেলার গোয়ালবাড়ি এলাকার তপন কুমারের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুরের হাতিমারা এলাকায় মিতালী ফ্যাশন লিমিটেড পোশাক কারখানার কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর মেহেদী হাসানকে ১৫ পিস টিশার্ট চুরির অভিযোগে গত সোমবার (২৯ অক্টোবর) কারখানার কয়েক কর্মকর্তা মারধর করে। এতে ওই শ্রমিক আহত হয়। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে ওই কারখানার শ্রমিকরা বুধবার বিকেলে বিক্ষোভ শুরু করে। এ ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজে যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় আশপাশের আরো কয়েক কারখানার শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। এক পর্যায়ে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা ওই কারখানা এবং মুনটেক্স, মাল্টি ফ্যাব্রিক্স, ডেলটা কম্পোজিট, যমুনা গামেন্টস, তুসুকা ও কেয়া স্পিনিংসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি কারখানায় হামলা চালিয়ে দরজা- জানালার কাঁচসহ বিভিন্ন মালামাল এবং গাড়ি ভাংচুর শুরু করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পার্শ্ববর্তী ডেল্টা স্পিনিং মিলে যায়। তারা গেইট ভেঙ্গে ওই কারখানার কর্মরত শ্রমিকদের বের করে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে আনার চেষ্টা করলে আনসার সদস্যরা বাধা দেয়। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা আনসার সদস্যদের উপর হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। হামলাকারীরা কারখানার বিভিন্ন মালামালসহ কয়েকটি গাড়িও ভাংচুর করে। শ্রমিকদের হামলায় কারখানার আনসার সদস্য ভৈরব চন্দ্র সরকার, সাজু মিয়া, আবুবকর, রহিজুল ইসলাম ও প্লাটুন কমান্ডার গিয়াস উদ্দিন মোল্লা আহত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে আনসার সদস্যরা আত্মরক্ষোর্থে ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে গুরুতর আহত আনসার সদস্য ভৈরব চন্দ্র সরকার ও সাজু মিয়াকে দুপুরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভৈরব চন্দ্র সরকারকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের মাথা, বুক, কপাল, হাত ও মুখসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। আহত অন্য আনসার সদস্যদের স্থানীয় হাসপাতালে গ্রেরণ করা হয়। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ও গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ওই এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিকেলে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

ডেল্টা স্পিনিং মিলের প্লাটুন কমান্ডার গিয়াস উদ্দিন মোল্লা জানান, উত্তেজিত শ্রমিকরা এসে এ কারখানার কর্মরত শ্রমিকদের বের করে নেয়ার চেষ্টা করলে আনসার সদস্যরা বাধা দেয়। এ সময় শ্রমিকরা আনসার সদস্যদের উপর হামলা চালিয়ে মারধর শুরু করে। তারা কারখানার বিভিন্ন মালামাল ও গাড়ি ভাংচুর করে। শ্রমিকরা সিকিউরিটি রুম ও অস্ত্রাগারে হামলা চালায়। তাদের হামলায় তিনিসহ আনসার সদস্য ভৈরব চন্দ্র সরকার, সাজু মিয়া, আবুবকর ও রহিজুল ইসলাম আহত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে আনসার সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়লে হামলাকারীরা পিছু হটে। পরে দুপুরে আহত আনসার সদস্য ভৈরব চন্দ্র সরকার ও সাজু মিয়াকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভৈরব চন্দ্র সরকারকে মৃত ঘোষণা করেন।

গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের কাশিমপুর থানার ওসি আকবর আলী খান ও শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর সেলিম রেজা জানান, গত ২৯ অক্টোবর ১৫ পিস টিশার্ট চুরির ঘটনায় কারখানার কয়েক কর্মকর্তা এক শ্রমিককে মারধর করে। তাকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে ওই শ্রমিক বৃহষ্পতিবার সকালে ওই শ্রমিক কারখানায় এসে আবার চলে যায়। কিন্তু আহত ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে কিছু শ্রমিক গুজর ছড়িয়ে পরিবেশ অস্থিতিশীল করে তোলে। বৃহষ্পতিবার তারা কারখানা এলাকায় বিক্ষোভ করে। তাদের সঙ্গে আশেপাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরাও যোগ দেয়। একপর্যালে উত্তেজিত শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানায় হামলাচালিয়ে ভাংচুর এবং ডেল্টা স্পিনিং মিলের আনসার সদস্যদের মারধর করে। এতে আনসারের সদস্য একজন নিহত ও ৩জন আহত হয়েছে।