কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই তারপরও দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যের কারুশিল্পী সুপ্রিয় চাকমা । তার আছে হাতুড়ি আর বাটালি। এগুলা দিয়েই কাঠের ওপর ফুটিয়ে তুলেন মানুষ, জীবজন্তুসহ বিভিন প্রতিকৃতির জীবজন্তুর ছবি। কাঠ দিয়ে মানুষ ও জীবজন্তুর প্রতিকৃতির কারুশিল্পী হলেন, খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার মুবাছড়ি ইউনিয়নের মধ্য আদাম খামারপাড়া গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধি সুপ্রিয় চাকমা। কাঠ দিয়ে তৈরিকৃত প্রতিকৃতি খোদাইয়ের নৈপুণ্যতা দেখলে যে কারোর মন ভরে যায়।

হঠাৎ করেই সুপ্রিয় চাকমা’র বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বাড়ির উঠানেই চটের বস্তার উপড় বসে কাঠের ওপর বনরুই নামের এক বন্য প্রাণীর ছবি খোদাই করছেন। এ সময় কাঠের উপড় খোদাই করে তৈরি করা আরো অনেকগুলা প্রতিকৃতি দেখালেন সুপ্রিয় চাকমা। এরমধ্য জাতীয় ফুল শাপলার উপড় বাংলাদশের মানচিত্র, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর নির্বাচনী প্রতিক নৌকা, বুদ্ধ মূর্তি, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা’র ভাস্কর্যসহ বিভিন জীবজন্তুর প্রতিকৃতি রয়েছে। কাজ করার এক ফাঁকে সুপ্রিয় চাকমার সাথে কথা হলে তিনি জানান, ছোটকাল থেকে তাঁর ছবি আঁকার প্রতি বেশ জোঁক ছিল। অভাবের কারণে লেখাপড়াও করতে পারেননি তিনি। তারপরও তিনি ছবি আঁকার হাল ছাড়েননি। লেখাপড়া করতে না পারলেও তিনি নিজেই কাপর বুনতেন এবং কাপড়ের উপড় বিভিন্ন ছবি আঁকতেন। মাঠ গরু চরাতে গেলে হাতপাখা তৈরি করে হাতপাখার উপড় বিভিন্ন ছবি আঁকতেন। এমন এক সময় স্থানীয় এক বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ শ্রীমৎ প্রজ্ঞারত ভিক্ষু নামের এক ভান্তে কাঠ দিয়ে একটি হাঁসের প্রতিকৃতি তৈরি করতে দিয়ে সাহস যোগান। এরপর থেকে তিনি বিভিন্ন পশু-পাখির প্রতিকৃতি তৈরি করার কাজ শুরু করেন। সংসার জীবন শুরু করার পর পারিবারিক চাহিদা মেটাতে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কৃষিকাজ করতেন। বর্তমানে নবম শ্রণিতে পড়ূয়া এক সন্তানের জনক তিনি। কৃষিকাজের পাশাপাশি ভাস্কর্য তৈরির কাজ করেন। একেকটি ভাস্কর্য, ছবি আকারভেদে তিনি হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। কৃষিকাজের পাশাপাশি কাঠের ভাস্কর্য তৈরি করে কোন রকম সংসার চলছে বলে জানান সুপ্রিয় চাকমা। যদি আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকত, তাহলে ভাস্কর্য তৈরির কাজ আরো অনেক সুবিধা হতো বলে জানান তিনি।

সুপ্রিয় চাকমা’র ব্যাপার সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বাপ্পী খীসা বলেন, সুপ্রিয় চাকমার প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা না থাকা আর বর্তমান দৃষ্টি প্রতিবন্ধি হয়েও কাঠ দিয়ে বিভিন ভাস্কর্য তৈরিতে প্রতিভার যে নৈপুন্যতা দেখাচ্ছে তা সত্যিই অতুলনীয়। আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলে সুপ্রিয় চাকমা আরো প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারতেন বলে মনে করেন তিনি।

মিল্টন চাকমা কলিন, মহালছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি