বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বারবার বিএনপির ওপর আঘাত এসেছে। বহু ষড়যন্ত্র চলছে। দলকে ভেঙে ফেলা ও ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু বিএনপির অগ্রযাত্রা থামানো যায়নি। কারণ বিএনপি হলো স্রোতস্বিনী ও প্রবাহমান নদী। এখানে কেউ এসেছে, কেউ চলে গেছে।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে দলের সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে যৌথসভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী নির্বাচনে বিরোধীদলের মাঠ শূন্য করতে আবারও চক্রান্ত চলছে। একই কায়দায় গত পরশুদিন রাতে আমাদের দলীয় কার্যালয়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে। অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। গত শনিবার হবিগঞ্জে সাবেক মেয়র জি কে গউছের বাড়িতে গুলি করেছে। তিন শতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রোববার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেখানে দলীয় কার্যালয়ে হামলা ও গুলি করেছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যে ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন তাতে বিরোধীদলশূন্য নির্বাচন করতে চায়।

তিনি বলেন, এখন শুরু হয়েছে মেগাপ্রকল্প চালু করা। কার জন্য? কীসের জন্য? এগুলোর লক্ষ্য হলো তাদের পকেট ভরানো। এগুলো তো জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। সুতরাং এখানে তো বলার কিছু নেই যে আপনি উন্নয়ন করেছেন! আজকে জাতি এদের হাত থেকে মুক্তি চায়।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটা সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের সাজানো নাটক। তারা যেখানে সভা করতে চেয়েছিল সেখানে করেনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের নাম জড়ানো হয়েছে। ২১ আগস্টের ঘটনায় তো পুরো তদন্তের কোথাও তারেক রহমানের নাম উল্লেখ ছিল না। তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কাহার আকন্দ, যিনি পরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন, তার তদন্তেও তারেক রহমানের নাম উল্লেখ ছিল না। একমাত্র মুফতি হান্নানকে ৪৫ দিন আটকে রেখে জোর করে জবানবন্দি নেওয়া হয়। তবে তিনি যেন আদালতে গিয়ে কোনো কিছু বলতে না পারেন সেজন্য অন্য মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। সুতরাং এখানে তারেক রহমান, আব্দুস সালাম পিন্টু ও লুৎফুজ্জামান বাবর কেউই জড়িত নন। তিনি এ ঘটনার আরও সঠিক তদন্ত দাবি করেন।

আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা এখনও রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হইনি। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করি। তাদের নিয়েই আমরা আছি। আজকে দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। সেই বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এ ধরনের কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে আমেরিকার কেউ স্বীকার করেনি। ভারতেরও কেউ স্বীকার করেনি।’

তিনি বলেন, বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জিয়াউর রহমান বীর উত্তম, যিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। তিনি এমন সময়ে দেশের হাল ধরেন যখন তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সকল দলকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। এর প্রেক্ষিতে বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সে সময় দেশ একটি দলের হাতে চলে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমান স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশকে একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার সহধর্মিণী খালেদা জিয়ার যোগ্য নেতৃত্ব বিএনপি এগিয়ে চলেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছরে আমরা সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছি। এই সরকারের দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করেছে। প্রশাসন বলুন আর কিছু বলুন সবকিছু ধ্বংস করেছে। আজকে একটি কোম্পানি ১১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ তাদের নিজেদের লক্ষ্য সেটা।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার লড়াই করে যাচ্ছি। এখানে সবারই ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। সকলকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব বলেন, অন্যান্যবারের মতো আগামী ১ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, সময় মতো আলোচনা সভা করা হবে। পোস্টার প্রকাশ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করা হবে। বিস্তারিত কর্মসূচি আজ সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনায় চূড়ান্ত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক মো. আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু, মো. মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, রাজীব আহসান, ছাত্রদলের রাজিবুল ইসলাম রাকিব, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শ্রমিক দলের মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, মৎস্যজীবী দলের মো. আবদুর রহিম এবং অধ্যক্ষ সেলিম মিয়া, ওলামা দলের শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ ও মজিবুর রহমান, জাসাসের হেলাল খান ও জাকির হোসেন রোকন প্রমুখ।