MV Pinak-6

দৈনিক বার্তা- মুন্সীগঞ্জ,৬আগষ্ট : সময় যত গড়াচ্ছে, ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে মুন্সীগঞ্জে পদ্মায় ডুবে যাওয়া লঞ্চ পিনাক-৬ উদ্ধারের সম্ভাবনা৷ মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় লঞ্চডুবির দুদিন পর পদ্মা নদীর ভাটিতে ও বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছিমেঘনার বিভিন্ন স্থানে ভেসে উঠছে  লাশ৷দুর্ঘটনাস্থল থেকে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ভোলা সদর ও চাঁদপুরের হাইমচরের মেঘনা, শরীয়তপুরে পদ্মা এবং বরিশালের ছোট কালাবদর নদী থেকে বুধবার ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ৷ এর আগে সোমবার সকালে লঞ্চডুবির পর বিকেলে দুটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়৷  উদ্ধার ১৭টি মরদেহের মধ্যে সাতটি তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে৷ বাকি ১০টি শনাক্ত না হওয়ায় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা যায়নি৷এদিকে,মাদারীপুরের কাওরাকান্দী ঘাট ও কাঠাল বাড়ি ঘাটে নিখোঁজ স্বজনদের প্রতীক্ষা৷কারো বাবা কারো মা, কারো ভাই প্রতীক্ষা নিয়ে  বসে আছে, হয়তো জীবিত ফিরে আসবেন তাদের স্বজনেরা৷অপেক্ষমাণদের স্বজনেরা মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথে পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছে৷

৩ শতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি নিমজ্জিত হলেও ৪০/৫০ জন যাত্রী সাঁতার কেটে তীরে উঠতে পেরেছে৷ এখনও ২ শতাধিক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে৷ নিখোঁজের স্বজনদের আহাজারিতে কাওরাকান্দী ঘাট ও কাঠাল বাড়ি ঘাটের নদীর তীরের বাতাস ভারী হয়ে উঠছে৷প্রত্যক্ষদর্শীরা  জানায়,সোমবার মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাওড়াকান্দি ঘাট হতে সকাল ৯টা ৩২মিনিটে ২ শতাধিক যাত্রী নিয়ে এমএল পিনাক-৬ নামের একটি ছোট লঞ্চ মাওয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসে৷ পথিমধ্যে কাঠাল বাড়ি ঘাট হতে ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী উঠানো হয়৷ লঞ্চটি মাওয়ার  অংশের উত্তাল পদ্মায় পাড়ি দেওয়ার সময় উত্তাল ঢেউ, দমকা বাতাস ও ঘূর্ণি স্রোতে আক্রান্ত হয়৷  বুধবার উদ্ধার ১৭টি মরদেহের মধ্যে সাতটি তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে৷ বাকি ১০টি শনাক্ত না হওয়ায় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা যায়নি৷এদের মধ্যে সাত জনের লাশ সনাক্ত হওয়ার পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল  হাসান বাদল জানান৷  ভোলা থেকে উদ্ধার হওয়া ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার লুত্‍ফর রহমান আকন্দের ছেলে ফাহাদ আকন্দ (২৪), শরীয়তপুরের নড়িয়ার সুরেশ্বর থেকে উদ্ধার হওয়া মাদারীপুরের শিবচরের নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৫) ও শরীয়তপুরের জাজিরার আব্দুর জাব্বারের  মেয়ে জান্নাত নাঈম লাকী (২০) এবং ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার আব্দুল হাইয়ের মেয়ে রিতা আক্তার (২৫)৷বাকি লাশগুলোও ডুবে যাওয়া লঞ্চ পিনাক-৬ এর যাত্রীদের বলে স্থানীয় পুলিশের ধারণা৷

মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মায় ‘পিনাক-৬ লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার তিন দিন পার হয়েছে৷কর্তৃপক্ষের তল্লাশি ততপরতার পরও সন্ধান মিলছে না লঞ্চটির৷বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবি্লউটিএ), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডবি্লউটিসি), নৌবাহিনী,  ফায়ার সার্ভিস ও কোস্ট গার্ডের সদস্যরা এখনো যৌথভাবে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন৷ ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভীক ও রুস্তম রয়েছে৷  বিআইডবি্লউটিএর চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা খান সাংবাদিকদের বলেন, ডুবে যাওয়া লঞ্চের খোঁজে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে৷কান্ডারি-২ নামের জাহাজটি বিকেল নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছাবে বলে জানান তিনি৷বিআইডবি্লউটিসির মাওয়া অঞ্চলের ব্যবস্থাপক  (বাণিজ্য) আবদুল আলীম বলেন, মঙ্গলবার সারা রাত দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তল্লাশি চালানো হয়৷ বুধবার সকালেও সেখানে তল্লাশি চলেছে৷ বিকেল চারটা নাগাদ ডুবে যাওয়া লঞ্চের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি৷  এদিকে, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত লঞ্চটির সন্ধান না মিললেও এ সময় পর্যন্ত মোট ১৭টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ হস্তান্তর হয়েছে সাতটি, অশনাক্ত রয়েছে ১০টি এবং প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী নিখোঁজের সংখ্যা ১৬৯ জন৷ এ ছাড়া লঞ্চডুবির সঙ্গে সঙ্গে ৪০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা  হয়৷

এর মধ্যে সোমবার মাওয়া এলাকার পদ্মানদী থেকে দুই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়৷ এর পর মঙ্গলবার মাদারীপুরের হাইমচর থেকে আরো দুটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়৷তবে বুধবার সকাল থেকে ভোলা, চাঁদপুর ও শরীয়তপুরে নদী থেকে ১৭ টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ এ সব  মরদেহ লঞ্চ পিনাক-৬-এর যাত্রী বলে ধারণা করা হচ্ছে৷  ভোলা সংবাদাতা জানান, বুধবার দুপুর পর্যন্ত ভোলা সদর থেকে পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷এর মধ্যে ভোলা সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের রামদাসপুর এলাকার মেঘনা নদী থেকে সকাল নয়টায় ফাহাদ (৩০) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয় জেলেরা৷  উদ্ধার হওয়া মরদেহটি পদ্মায় ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ এর যাত্রী বলে জানিয়েছেন ভোলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান৷ তার নাম ফাহাদ, বাড়ি ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলায়৷এরপর সকাল ১১টার দিকে ভোলা সদর উপজেলার কাছিয়া ইউনিয়নের কাঠিরমাথা এলাকার মেঘনা  পাড় থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয় জেলেরা৷  এরপরে দুপুর ১২টার দিকে ভোলা সদর উপজেলারই পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের মেঘনা নদীর মিয়ারহাট লঞ্চঘাট থেকে অজ্ঞাতপরিচয় আরো এক কিশোরীর (১৪) মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা৷দুপুর দুইটার দিকে ভোলা সদর উপজেলারই পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ভাংতির খালে  অজ্ঞাতপরিচয় আরো একটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ৷ প্রথমে জেলেরা মরদেহটি ভাসতে দেখে খবর দিলে পরে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে৷এরপর বিকেল তিনটার দিকে ভোলার ইলিশা ঘাট এলাকায় মেঘনা নদী থেকে অজ্ঞাত-পরিচয় (৩৫) এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেন  কোস্টগার্ডের সদস্যরা৷

অপরদিকে, শরীয়তপুর সদর ও সুরেশ্বর থেকে মোট পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ এর মধ্যে দুটি মরদেহ নারীর৷ এদের একজন শরীয়তপুর জেলার জাজিরার জান্নাতুন মাওয়া লাকি (২০)৷অন্যজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি৷ বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সুরেশ্বর থেকে এলাকা  থেকে এই অজ্ঞাতপরিচয় নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়৷  চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, বুধবার হাইমচর থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারী ও এক কিশোরসহ মোট পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ এর মধ্যে বুধবার তিনটি ও মঙ্গলবার দুটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়৷

মাদারীপুরে:মাওয়াঘাটের কাছাকাছি থেকে মাদারীপুরের দুজনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে৷ এরা হচ্ছেন- মাদারীপুর জেলার শিবচরের হীরা (২২)৷ তিনি গোয়াতলা গ্রামের নুরুল হকের সন্তান৷এছাড়া মাদারীপুরের উতরাইল থানার হাসি বেগমের (৩৮) মরদেহ তার স্বজনদের কাছে  হস্তান্তর করা হয়েছে৷

বরিশালে এক নারী: বরিশাল সদর উপজেলার লাহারহাট ফেরিঘাট সংলগ্ন ছোট কালাবদর নদী থেকে বুধবার দুপুরে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ৷  বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার ওসি রেজাউল করিম জানান, লাশটি পদ্মায় ডুবে যাওয়া এমএল পিনাক-৬ এর যাত্রীর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷আনুমানিক ৪০ বছর বয়সী ওই নারীর পরনে খয়েরি রংয়ের কামিজ ও বোরখা ছিল৷এ বিষয়ে মাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের  সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানান ওসি৷  সোমবার সকালে ঈদের ছুটি শেষে কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়াঘাটে আসার সময় মাওয়াঘাটের কাছে লৌহজং চ্যানেলে আড়াইশ যাত্রী নিয়ে পিনাক-৬ নামে একটি ছোট লঞ্চ ডুবে যায়৷পদ্মানদীতে প্রবল স্রোত ও ঢেউয়ের কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্তে (পানির পাক) পড়ে লঞ্চটি ডুবে যায় বলে  যাত্রী সূত্রে জানা যায়৷  এক যাত্রী অভিযোগ করেন, লঞ্চটি প্রবল স্রোতের মধ্যে সোজাসুজি নদী পাড়ি দিতে গিয়ে পদ্মায় ডুবে যায়৷ঘটনার পর থেকে র্যাব, পুলিশ, নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা উদ্ধার তত্‍পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ বুধবার পর্যন্ত ১৭টি মরদেহ উদ্ধার হলেও লঞ্চটির অবস্থান  শনাক্ত করা যায়নি৷

এদিকে, মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসনের তৈরি তালিকায় বুধবার সকাল পর্যন্ত ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ এর ১৬৯ যাত্রী বর্তমানে নিখোঁজ রয়েছেন৷মাওয়া ঘাটে অবস্থানরত লঞ্চযাত্রীদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ শোকাচ্ছন্ন ও ভারী হয়ে রয়েছে৷ হাজার হাজার মানুষ নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে  অপেক্ষা করছেন, কখন তাদের স্বজন কিংবা পরিচিতদের মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়!  দুর্ঘটনাস্থল থেকে নদীপথে শরীয়তপুরের নড়িয়ার দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার৷ আর মাওয়া থেকে চাঁদপুর সদরের দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার, হাইমচরের দূরত্ব ৬৬ কিলোমিটার এবং ভোলা সদরের দূরত্ব ৯৯ কিলোমিটার৷এরপরই সাগর শুরু হওয়ায় নদীতে ভেসে লাশ সমুদ্রে চলে যেতে  পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ প্রিয়জনকে জীবিত পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন, অন্তত লাশটা যেন পান এই আশায় স্বজনের অপেক্ষা৷

মাদারীপুর জেলার দাশার ইউনিয়ন পরিষদের অসুস্থ চেয়ারম্যান সবুজ কাজীকে ছোট ভাই স্বপন কাজী ও তার ভগ্নীপতি জাহিদ ( চেয়ারম্যানে ) মা হিরণ বেগম (৬৫), স্ত্রী তিশা বেগম (২২) ওদের বছরের শিশু সন্তান তৌফিককে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে এমভি পিনাক-৬ নামে  লঞ্চটিতে যাত্রা করেন৷ কান্না জড়িত কন্ঠে এমনই কথা বলছিলেন চেয়ারম্যানে ছোট ভাই নজরুল কাজী৷  তিনি বলেন, ভাই স্বপন ও ভগ্নীপতি জাহিদ তীরে উঠতে পারলেও বাকিরা এখনো নিখোঁজ রয়েছেন৷ চেয়ারম্যান সবুজ কাজীর পরিবারের মত একই নিয়তি ঘটেছে কালকিনি থানার বালিগ্রাম ইউনিয়নের ধুলপুর গ্রামের বাসিন্দা ওহিদুল সরদারের পরিবারেরও৷ ওহিদুল সরদারের ছোট ভাই  রেজাউল সরদার কাওরাকান্দি ঘাটে বিলাপ করতে করতে বলেন, আমার ভাই তার স্ত্রী হাজেরা বেগম (২১) তার শিশু কন্যা মনি আক্তার (৩) ওই লঞ্চটিতে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন৷ এখনো তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি৷

মাদারীপুর সদর উপজেলার খালাসিকান্দি গ্রামের চার সন্তানকে নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে এসেছিলেন বাবার বাড়ি৷ রাশিদার সেই আনন্দ গুড়ে বালি করে দিয়েছে ঘাতক পদ্মার স্রোত৷ রাশিদা তার দুই কন্যান সন্তানকে নিয়ে তীরে আসতে পারলেও হারিয়েছেন তার মতিঝিল  আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্রী ইমা আক্তার (১৮) ও একই প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া মেয়ে আফরোজা আক্তার (১৬)৷  অপেক্ষামান স্বজনেরা জানায়, মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথে পিনাক-৬ লঞ্চটি সোমবার সকাল ১১টায় দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছিল৷ ৩ শতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি নিমজ্জিত হলেও ৪০ থেকে ৫০ জন যাত্রী সাঁতার কেটে তীরে ওঠেন৷ এখনও ২ শতাধিক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে বলে ধারণা করা  হচ্ছে৷ নিখোঁজের স্বজনদের আহাজারিতে কাওরাকান্দি ও কাঠাল বাড়ি ঘাটের নদীর তীরের বাতাস ভারী হয়ে উঠছে৷  কাঠালবাড়ি লঞ্চঘাটের ইজারাদারের ব্যবস্থাপক মোতালেব বেপারী বলেন,লঞ্চটিতে অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় এ ঘাটের যাত্রীদের লঞ্চে উঠতে বারন করেছিলাম৷তারপরেও ৩০/৩৫ জন যাত্রী লঞ্চে উঠেছিল৷ তাদের অনেকেই এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে৷ তবে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে লঞ্চটি  মাওয়ার কাছে পদ্মার প্রবল স্রোতে কারণে নিম্মজিত হয়৷সময় যত গড়াচ্ছে, ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে মুন্সীগঞ্জে পদ্মায় ডুবে যাওয়া লঞ্চ পিনাক-৬ উদ্ধারের সম্ভাবনা৷

দুর্ঘটনার পর ৪৬ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও ডুবে যাওয়া লঞ্চটির অবস্থান চিহ্নিত করতে না পারায় উদ্ধার অভিযান কার্যত আটকে আছে শুরুর জায়গাতেই৷এর মধ্যেই মঙ্গলবার রাতভর কয়েকটি নৌযান নিয়ে চলে সমন্বিত তল্লাশি অভিযান ল্যাডার স্ক্যানার সার্চ, বুধবার সকাল থেকেও তা  চলছে৷ কিন্তু কোনো ফল আসেনি৷  নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যে স্থানে লঞ্চটি ডুবেছিল, আমরা তার আশপাশে ৩৬ কিলোমিটার জায়গায় তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত সিগনেফিকেন্ট কোনো অবজেক্ট আমরা পাইনি৷ সেরকম কিছুই আমাদের নজরে আসেনি৷উদ্ধারকারী জাহাজ  রুস্তমের পর নির্ভীকও মঙ্গলবার দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে৷এর বাইরেও বিআইডবি্লউটিএর জাহাজ, টাগ বোট, স্পিডবোট মিলিয়ে উদ্ধার অভিযানে রয়েছে ১৫টি নৌযান৷  বর্ষার প্রবল স্রোতের মধ্যেও সনাতনি পদ্ধতিতে দড়িতে বেঁধে নোঙর ফেলে পিনাক-৬ এর অবস্থান জানার চেষ্টা করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স৷ এতে অংশ নিচ্ছেন ২৭ জন ডুবুরি৷ আর আকাশে টহল দিচ্ছে নৌবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের হেলিকপ্টার৷  তারপরও উদ্ধার কার্যক্রমে কোনো পজেটিভ আউটকাম আসেনি বলে জানিয়েছেন বিআইডবি্লউটিএর চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা খন্দকার৷সোমবার দুজনের লাশ পাওয়ার পর আর কোনো মৃতদেহ পাননি উদ্ধারকর্মীরা৷ স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে লৌহজং থানার করা তালিকা অনুযায়ী  নিখোঁজ রয়েছেন ১৬৯ জন৷

এই পরিস্থিতিতে সবাই অপেক্ষা করছেন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সমুদ্র জরিপে ব্যবহৃত সাইড স্ক্যান সোনার, ‘গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম’ ও সাব বটম প্রোপেলার আসার জন্য৷এসব যন্ত্রপাতি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সার্ভে ভেসেল জরিপ-১০ মঙ্গলবার দুপুরে মাওয়ার পথে রওনা হলেও বৈরি  আবহাওয়ার কারণে সন্দ্বীপ চ্যানেলের কাছাকাছি এলাকা থেকেই ফিরে যায় নৌযানটি৷পরে চট্টগ্রাম বন্দরের টাগবোট কাণ্ডারী-২ এসব যন্ত্রপাতি নিয়ে মুন্সীগঞ্জের পথে রওনা হয় বলে বন্দর কর্মকর্তারা জানান৷লঞ্চ ছোট এবং কাঠের তৈরি বলে খরস্রোতা নদীতে তলিয়ে গেলে এর ওপর পলি  জমতে পারে বলে ক্যাপ্টেন নজরুলের ধারণা৷তাহলে সাইড স্ক্যান সোনারে এটি নজরে আসার কথা নয়, বলেন তিনি৷