সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম

দৈনিকবার্তা- ঢাকা,১৭আগষ্ট : স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, বিএনপি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের একটি সহযোগী সংগঠন৷ এ দলটি যেন কখনো ক্ষমতায় না আসতে পারে সেজন্য দেশবাসী ও নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে৷রোববার বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সংগঠনের এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন৷ ১৭ আগস্ট সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ৷ 

তিনি বলেন,প্রমাণ রয়েছে ১৭ ও ২১ আগস্টেও বোমা হামলার বিষয়ে খালেদা জিয়া আগ থেকে জানতেন৷ রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় এ হামলা হয়েছে৷এ হামলায় তিনি পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন৷ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, তিনি রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন৷তিনি আরো বলেন, মির্জা ফখরুলকে মুলা ঝুলিয়ে রেখেছেন খালেদা জিয়া৷ ফখরুল সাহেব কখনো দলের মহাসচিব হতে পারবেন না৷ তারেক দেশে ফিরলে মা- ছেলে দলের নেতৃত্ব দেবেন৷ আসলে ফখরুল সাহেব কিছুই পাবেন না৷ তিনি অযথা দৌঁড়াচ্ছেন৷ 

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা সম্পর্কে শুধু জানতেনই না; ওই হামলায় তিনি সহায়তাও করেছিলেন বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম৷ওই বোমা হামলা সম্পর্কে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া শুধু জানতেনই না, যারা বোমা হামলা করেছে, তাদের পূর্ণ সহায়তাও করেছেন৷ 

আশরাফ আরও বলেন, খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন, বাংলাদেশে তালেবান ও আল-কায়েদার মতো জঙ্গিগোষ্ঠী গড়ে তুলতে৷ এরই ধারাবাহিকতায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়৷লড়িছ না তোরে সারেং বানাব: বিএনপিকে উদ্দেশ করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, হুমকি-ধমকি দিয়ে লাভ নাই৷ ওটা হুমকি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে৷ 

তিনি বলেন, ফখরুলের সামনে মুলা ঝুলাইয়া রাখা হয়েছে৷ এটা একটা জাহাজের গল্পের মতো৷ এই লড়িছ না তোরে সারেং বানাব৷ কিন্তু ফখরুল সাহেবকে সারেং বানানো হবে না৷ তাঁর (খালেদা জিয়া) ছেলে দেশে না আসা পর্যন্ত কাউকেই মহাসচিব করা হবে না৷ তারেক দেশে এলে মা হবে চেয়ারম্যান, ছেলে হবে মহাসচিব৷ 

বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে সৈয়দ আশরাফ আরও বলেন, তাঁর সঙ্গে আমার অনেক রাজনৈতিক আলাপ হয়৷ তিনি একজন ভদ্র মানুষ৷ ফখরুলের জন্য দুঃখ হয়৷ তাঁর জন্য কষ্ট পাই৷ তিনি কিসের আসায় এত দৌড়াদৌড়ি করেন? আপনি যতই দৌড়াদৌড়ি করেন না কেন, কোনো লাভ হবে না৷ খালেদা ও তাঁর ছেলে আপনাকে কিছুই দেবে না৷ তারেক রহমান দেশে এলে সেই হবে বিএনপির মহাসচিব৷ এর আগে কাউকে বিএনপির মহাসচিব করা হবে না৷আশরাফুল ইসলাম বলেন, আজকে কেন এ দিবস পালন করছি! এ দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন৷ এ দিনে সারা দেশে ৫০০ জায়গায় বোমা ফাটানো হয়৷ জঙ্গিগোষ্ঠী জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল৷ 

তিনি বলেন, সারা দেশে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করে তালেবান বা আল-কায়েদার একটা সুরক্ষিত ঘাঁটি হিসেবে তৈরির চেষ্টা করেছে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী৷ তখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, তিনি তাঁদের পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন৷ তিনি চেয়েছিলেন, আফগান ইরাক সিরিয়ার মতো তালেবান, আল-কায়েদা বা আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠন গড়ে তুলতে৷আশরাফ বলেন, সে দিন শেখ হাসিনা অত্যন্ত দৃঢ় সিদ্ধান্ত না নিলে এখনো বাংলাদেশে যুদ্ধ চলত৷ বেগম জিয়া ও বিএনপি সব সময় জঙ্গিদের আড়াল করে সহযোগিতা ও রাষ্ট্রীয় শক্তির ক্ষমতা দিয়েছে৷ নতুবা তাদের কোনো সাহস ছিল না, এত জায়গায় বোমা হামলা করার৷ 

জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জিয়ার উত্থানের ধারাবাহিক ইতিহাস তুলে ধরেছেন অ্যান্থনি মাসকারানহাস তাঁর লিখিত একটি বইয়ে৷ শনিবার ডেইলি স্টার তার অংশবিশেষ প্রকাশ করেছে৷ সবাই জানে চ্যানেল-৪ এ অ্যান্থনি মাসকারানহাস এক সাক্ষাত্কার দেন,সেখানে রশিদরা স্পষ্ট স্বীকার করেছে জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনের সঙ্গে জড়িত৷ জিয়ার উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার হত্যা করে আরেকটা রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা৷ দুর্ভাগ্য খালেদা জিয়ার৷ সে দিন শেখ হাসিনা ও রেহানা বিলাতে থাকায় জিয়ার ওই অভিলাষ ১০০ ভাগ বাস্তবায়ন হয়নি৷ জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জিয়ার উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার হত্যা করে আরেকটা রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা৷ দুর্ভাগ্য খালেদা জিয়ার৷ সেদিন শেখ হাসিনা ও রেহানা বিলাতে থাকায় জিয়ার ওই অভিলাশ একশ ভাগ বাস্তবায়ন করতে পারেনি৷ 

তিনি বলেন,কোনো দিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে পারলে আবারও বাংলাদেশকে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য বানাতে পারে৷ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে তারা কোনোভাবেই আর ক্ষমতায় আসতে না পারে৷ আওয়ামী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে তারা আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না৷আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ক্ষমতায় থাকতেও তারা (বিএনপি) বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করেন, ক্ষমতায় না থাকলেও তাদের সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে৷ জীবনপ্রাণ লড়াই করবো, তবুও তাদের ক্ষমতায় আসতে দেব না৷ যতদিন দেহে আছে প্রাণ এ জঞ্জাল সরাবই৷ 

খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে মতিয়া বলেন, আপনার পেয়ারে পাকিস্তান ডুবছে৷ আরও ডুববে৷ কিন্তু আমরা তা চাই না৷ তারা যে খেলায় মাতছে, সেই খেলায় কখনো আওয়ামী লীগ পড়বে না,খেলবে না৷ আপনার দলই এ খেলায় পড়বে৷তিনি বলেন, এদেশে যার যার ধর্ম তার তার কাছে৷ এখানে কেউ নিপীড়ক হবে না৷ ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার৷ 

১৫ আগস্ট খালেদা জিয়া জন্মদিন পালনের কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এই নেত্রী বলেন, বিকৃত মানসিকতা নিয়ে তিনি নকল জন্মদিন পালন করে আসছেন৷ আমাদের অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি সৈয়দ আশরাফ অনুরোধ করে মানা করলেন৷ কিন্তু চোরায় না শুনে ধর্মের কাহিনী৷ বৈধ জন্মদিন হলে একটা হয়৷আর ডাস্টবিনের তোয়ালে পেঁচানো শিশুর একাধিক জন্মদিন থাকতে পারে৷শক্তিধর দেশের সমালোচনা করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, আপনারা এর বিরুদ্ধে ওর বিরুদ্ধে একে ওকে লেলিয়ে দেন৷ মধ্যপ্রাচ্যে আপনারা কী করতেছেন, সেটা আমরা দেখতেছি৷ কিন্তু এদেশে শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে থাকবে, এই চক্রান্ত সফল হতে দেওয়া হবে না৷ 

২০ দলীয় জোট বিষধর সাপের মতো অশুভশক্তির জোট৷ এরা যাতে তাদের বিষবাষ্প না ছড়াতে পারে সেজন্য তাদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ৷হানিফ বলেন, ২০ দলীয় জোট বিষধর সাপের মতো অশুভ শক্তির জোট৷ এদের মতো বিষধর আর কেউ নেই৷ ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত তাদের বিষবাষ্প বাংলার মানুষ দেখেছে৷ আর যেন তারা বিষ ছড়াতে না পারে আমরা তাদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলবো৷ আর যেন মাথা চাড়া দিয়ে না দাঁড়াতে পারে৷ 

নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, নগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. সেলিম এমপি, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সাঈদ খোকন,ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ প্রমুখ৷