image_1821_228663

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি: জামায়াতের নায়েবে আমীর আব্দুস সুবহানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় বুধবার ঘোষণা করা হবে।আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল মঙ্গলবার রায় ঘোষণার দিন ধার্যের এ আদেশ দেয়। বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ।বিচারক কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় গত বছর ৪ ডিসেম্বর মামলাটির রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি) তালিকায় ছিল। এটি হবে ট্রাইব্যুনালের ১৬ তম রায় এবং ট্রাইব্যুনাল-২এ ঘোষিত ৯ম রায়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটি সপ্তম রায়।

এ মামলায় সমাপনী যুক্তিতর্কে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আসামি সুবহানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। প্রসিকিউশন এই আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি ও তার দ্বারা নির্যাতিত-ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের আর্জি পেশ করেন। অন্যদিকে সুবহানের বিরুদ্ধে আনীত কোনো অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি দাবি করে তার খালাস চান ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী।এর আগে সুবহানের পক্ষে ৯ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী মিজানুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী। অপরদিকে আট কার্যদিবস সুবহানের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন। এর আগে সুবহানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলায় দুই তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মতিউর রহমান ও মো. নূর হোসাইনসহ প্রসিকিউশনের ৩১ জন সাক্ষী।

মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ষড়যন্ত্রসহ ৮ ধরনের ৯টি মানবতাবিরোধী অপরাধে সুবহানের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠন করা হয়। ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সুবহানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সুবহানকে একটি মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্তের স্বার্থে মানবতাবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে আটক রাখার আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে সুবহানের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত শুরু হয়। ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে তদন্ত সংস্থা। তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও মো.নূর হোসাইন এ মামলার তদন্ত করেন। ওই দিনই তদন্ত সংস্থা তদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেন।

জামায়াতের নায়েবে আমীর আব্দুস সুবহানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সুনির্দিস্ট ৯ টি অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন।সুবহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ-১: মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি তার সহযোগী জামায়াতে ইসলামের নেতা ও বিহারীদের নিয়ে মসজিদে আশ্রয় নেয়া স্বাধীনতাকামী লোকদের অপহরণ করে হত্যা করেন।অভিযোগ-২: ৭১ সালের ১৩ এপ্রিল তার নেতৃত্বে ও উপস্থিতিতে ঈশ্বরদী যুক্তিতলা গ্রামে অভিযান চালিয়ে লুটপাটসহ ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে ৫ জন নিরীহ-নিরস্ত্র লোককে হত্যা ও ৩ জনকে গুরুতর আহত করা হয়।

অভিযোগÑ৩: ১৬ মে ঈশ্বরদী অরণখোলা গরুরহাট থেকে ২ লোককে অপহরণ করে জেলা পরিষদ ডাক বাংলোয় (ঈশ্বরদী, পাবনায়) নির্যাতন।অভিযোগ-৪. ’৭১ সালে ২ মে তার নেতৃত্বে পাকিস্তানী আর্মি ঈশ্বরদী সাহাপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে অসংখ্য বাড়িঘরের মালামাল লুটপাট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং বেশ কয়েকজন লোককে হত্যা করে।অভিযোগ-৫. ৭১ সালের ১১ মে সুবহানের নেতৃত্বে ও উপস্থিতিতে পাকিস্তানী আর্মি পাবনা সদর থানার কুলনিয়া ও দোগাছি গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে ৭ জন নিরীহ-নিরস্ত্র ও স্বাধীনতাকামী লোককে হত্যা করে এবং কয়েকটি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে ।অভিযোগÑ৬. ৭১ সালের ১২ মে সুবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তানী আর্মির একটি বিরাট বহর সুজানগর থানাধীন সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে জ্ঞাত-অজ্ঞাত ৩/৪ শত জন লোককে গণহত্যা করে। বিভিন্ন লোকজনের বাড়িঘরের মালামাল লুটপাট করে বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।

অভিযোগÑ৭. ২০ মে তার নেতৃত্বে পাকিস্তানি আর্মি পাবনা সদর থানাধীন ভাড়ারা গ্রামে অভিযান চালিয়ে ১৮ জন নিরীহ লোককে অপহরণ করে। তাদের মধ্যে একজনকে গ্রামের একটি স্কুলে হত্যা করা হয়। অপর ১৭ জনকে পাবনা সদর নূরপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিয়ে আটক করে নির্যাতন করা হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে আটঘরিয়া থানাধীন দেবত্তোর বাজারের পাশে বাঁশবাগানে গুলি করে হত্যা করা করা হয়।অভিযোগÑ৮. ৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সুবহান রাজাকারদের নিয়ে আতাইকুলা থানার (সাবেক পাবনা সদর থানা)দুবলিয়া বাজার থেকে ২ জন স্বাধীনতাকামী লোককে অপহরণ করে কুচিয়ামাড়া গ্রামে একটি মন্দিরের ভেতরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।অভিযোগÑ৯. ৭১ সালে ৩০ অক্টোবর রাজাকারদের নিয়ে সুবহান ঈশ্বরদী থানাধীন বেতবাড়িয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে কয়েকটি বাড়িতে লুটপাটসহ বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং ৪ জন লোককে অপহরণের পর হত্যা করে।