DoinikBarta_দৈনিকবার্তা_kaptai -12-4-pic===1 copy_87748

দৈনিকবার্তা-খাগড়াছড়ি, ১০ এপ্রিল: পাহাড়ে প্রত্যন্ত পাহাড়ে আনাচে-কানাচে বৈসু-সাংগ্রাইং-বিজু-বিষু-বিহু’কে ঘিরে পাড়ায় মহল্লায় মাসব্যাপী এখন চলছে উৎসবের আমেজ। পার্বত্যাঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি বা আদিবাসীর ঐতিহ্যবাহী সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব বৈসাবি বৈসু-সাংগ্রাই-বিজু ও বাংলা নববর্ষ(পহেলা বৈশাখ) প্রতিবছর ন্যায় এ বছরও পালনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে খাগড়াছড়ি পাশাপাশি অন্য তিন জেলা রাংগামাটি ও বান্দরবান এবং ক´বাজার। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সামাজিক উৎসবের আয়োজন করছে বলে জানা গেছে। এই ব্যাপারে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ১১ই মার্চ ২০১৪খ্রিঃ সম্মিলিত ভাবে বৈসাবি ও বাংলা নববর্ষ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে মারমা উন্নযন সংসদ ও মারমা সংগঠন ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞলিক ক-শাখা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যান সংসদ ও বাংলাদেশ ত্রিপুরা ষ্টুডেন্ট ফোরামসহ পৃথক পৃথক ভাবে বিভিন্ন কর্মসুচী গ্রহন করেছে। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে মূল উৎসব শুরু হবে।

খাগড়াছড়ি আটটি উপজেলায় চাক্মা, মারমা, ত্রিপুরা ও বাঙ্গালী সম্প্রদায় সম্মিলিত ভাবে পাহাড়ে বর্ষবরণ করার প্রস্তুতি গ্রহন করেছে। যেন মনে হয় বৈসাবির আমেজে পাহাড় এখন নতুন ভাবে সেজে উঠেছে। গত সোমবার সকালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ মিলনায়তনে যৌথভাবে সকল জনগোষ্টির সম্মলিত প্রস্তুতি সভায় পাজেপ নবাগত চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীর সভাপতিত্বে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে । সভায় ১৪নবাগত সদস্যগন খাগড়াছড়ি রিজিয়নের প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন ।খাগড়াছড়ি পাজেপ’র ব্যাপক প্রস্তুতি মাধ্যমে শুরু হবে ৬দিনের বৈসাবি মেলা বৈসু-সাংগ্রাইং-বিজু(বৈসাবি) ও বাংলা নববর্ষ ১৪২২বংগাব্দ উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নিয়েছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ । পাহড়ে প্রাণের উৎসব বৈসাবি ও বাংলা নববর্ষ একসাথে আনন্দমুখর পরিবেশে পালনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে পূর্ব নির্ধারিত গত বৃহষ্পতিবার প্রস্তুতি সভা করেছে পাজেপ ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন পাজেপ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন আহম্মেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোঃ আব্দুল খালেক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কানন আচার্য্য দেবনাথ, পাজেপ নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রহমান তরফদার, সদর উপজেলা চেয়াম্যান চন্চুমনি চাকমা, প্রেস ক্লাবে’র সভাপতি জীতেন বড়–য়াসহ বিভিন্ন এলাকার গন্যমান্যরা উপস্থিত ছিলেন । ১লা এপ্রিল থেকে মাস ব্যাপী খাগড়াছড়ি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন কমিটি’র উদ্যোগে আদিবাসীদের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলাধুলা ব্যাপক আয়োজন ছিল চোখে পড়ারমত । মারমাদের সামাজিক সংগঠন মারমা উন্নয়ন সংসদ ও ১২ এপ্রিল থেকে ৪দিন ব্যাপী মারমাদের ঐতিহ্যবাহী জলকেলী উৎসবসহ বিভিন্ন খেলার আয়োজন করেছে। তাছাড়া প্রত্যেক আদিবাসী গ্রামে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ক্লাব ও সমিতি’র উদ্যোগে বিভিন্ন এতিহ্যবাহী খেলাসহ জাতীয় খেলায়ও আয়োজন করে উৎসবকে আরো আনন্দময় করে তোলার ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহন করছে। পাজেপ সূত্রে জানা যায, ১১এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টায় পরিষদ প্রাংগন হতে র‌্যালি শোভা যাত্রা শুরু হয়ে খাগড়াছড়ি সরকারী হাইস্কুল মাঠে গিয়ে শেষ হবে এবং আনুষ্ঠানিক মেলা উদ্ভোধন করা হবে । ১১,১২,১৩,১৪,১৫,১৬এপ্রিল পর্যন্ত হাইস্কুল মাঠে ৬দিন ব্যাপি বৈসাবি ও পহেলা বৈশাখি মেলা অনষ্ঠিত হবে । এ ছাড়া ১৭এপ্রিল একই স্থানে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের আয়োজনে স›দ্ধ্যায় ”আনন্দ কনসার্ট” হবে । তাছাড়া ক্ষুদ্র নৃÑগোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইনষ্টিউটের অনুষ্ঠানমালা পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুষ্ঠামালার সাথে সমন্বয় করে পরিচালনা করারও নিদের্শনা দেয়া হয় ।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞলিক ক-শাখা ও খাগড়াছড়ি গোলাবাড়ী মহিলা সমিতিঃ বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞলিক ক-শাখা ও খাগড়াছড়ি গোলাবাড়ী মহিলা সমিতি যেীথ উদ্দ্যোগে বুধবার সকালে শাপলা চত্বর এলাকায় আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পার্বত্য শান্তিচুক্তি’র দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বৈসু-সাংগ্রাইং-বিজু-বিষু-বিহু’র আগাম শুভেচ্ছা’র মানবব›দ্ধন পালন করেছে ।খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি’র সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউটঃ খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি’র সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট আয়োজনে ৩(তিন) দিন ব্যাপী বৈসু-সাংগ্রাইং-বিজু(বৈসাবি) উৎসব-২০১৫খ্রিঃ বুধবার আনুষ্ঠানিক শুরু হয়েছে । উৎসব মেলায় নানান রকমের আদিবাসীদের ঐতিবাহী পোষাক-আষাক, খাদ্য সামগ্রী পিঠাসহ ইত্যাদি ষ্টল বসানো হয়েছে । স›দ্ধ্যায় আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন রয়েছে । ০৮, ০৯, ১০এপিল’১৫খ্রিঃ তিন দিন ব্যাপী উৎসবটি শুক্রবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিক শেষ হবে ।মারমা উন্নয়ন সংসদ ও বাংলাদেশ মারমা সংগঠন ঐক্য পরিষদঃ বাংলাদেশ মারমা সংগঠন ঐক্য পরিষদ ১৩এপ্রিল সকাল ৮টায় মহিলা কলেজ সংলগ্ন হতে র‌্যালী উত্তর শহরের প্রদক্ষিণ করার পর ঐতিহ্যবাসী ”রিইঃ আকজা”/জল কেলী উৎসব/পানি খেলায় নারী-পুরুষরা মেতে উঠবে । মারমা উন্নয়ন সংসদ উদ্দ্যোগে ১৪এপ্রিল সকাল ৮টায় পানখাইয়া পাড়া বটতলা থেকে র‌্যালী শোভা যাত্রা বের করবে । মারমা আদিবাসী বিভিন্ন সাজে সজিত্ব হয়ে পুরাতন বছরকে গ্লানি মুছে ফেলে নতুন বছরকে বরন করে জেলা ১১টি শাখার নেতৃবৃন্দরা অংশ গ্রহন করবে । র‌্যালী শেষে দুপুরে বাংলাদেশ মারমা ষ্টুডেন্টস কাউন্সিল(বিএমএসসি)’র আয়োজনে পানখাইয়া পাড়া মাউস সদর শাখার প্রাংগনে ঐতিহ্যবাসী ”রিইঃ আকজা”/জল উৎসব/পানি খেলায় যুবক-যুবতীরা মেতে উঠবে ।

বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যান সংসদ ও বাংলাদেশ ত্রিপুরা ষ্টুডেন্ট ফোরামঃ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় ত্রিপুরাদের ’বৈসূ’ র‌্যালী দিয়েই শুরু হলো বৈসাবি উৎসবের সূচনা । পার্বত্যঞলের তৃতীয় বৃহত্তম ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির ’বৈসু’ র‌্যালীর মধ্য দিয়ে আদিবাসীরা জেলা খাগড়াছড়িতে শুরু হলো চাকমা-মারমা-ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির সর্ববৃহৎ ও বর্ণ্যাঢ্য বৈসাবি উৎসব । শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের ব্যানারে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে বেলূন ও শান্তির পায়রা কবুতর উড়িয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্ভোধন করেন খাগড়াছড়ির থেকে নির্বাচিত ২৯৮নং আসনে জাতীয় সংসদ ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী । এসময় ত্রিপুরা সম্পাদায়ের বর্ণাঢ্য এ শোভাযাত্রায় খাগড়াছড়ির ৬টি আঞলিক ও ৯টি উপজেলা শাখার বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যান সংসদ ও বাংলাদেশ ত্রিপুরা ষ্টুডেন্ট ফোরামসহ প্রান্তিক ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ গ্রহন করে ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরে পানখাইয়া পাড়া, গোলাবাড়ী, রাজ্যমনি পাড়া, আপার পেরাছড়া, খাগড়াপুর, আড়াই মাইল, খবংপড়িয়া, নারানখাইয়া, স্বর্নিভর, ঠাকুরছড়া, পেরাছড়াসহ জেলার ৮টি উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ী পল্লীগুলোতে বৈসাবি উৎসব পালনের জন্য চাক্মা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন ব্যাপক প্রস্তুতি ও তাদের কেনাকাটা শুরু করেছে। প্রতিটি গ্রামে আদিবাসীদের অথিতিয়তা আপ্যায়ন ও খেলাধূলা আয়োজন চলছে। প্রতি বছরের মত এবারও জেলার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন তাদের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান সাংগ্রাই পালনের সামাজিক ও ধর্মীয় ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। জেলার সর্ববৃহৎ মন্দির য়ংড বৌদ্ধ বিহার, ধর্মপুর বন বিহার, পানখাইয়া পাড়া ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহার ও পালিটোল বৌদ্ধ বিহারসহ অন্যান্য বিহারে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এ উৎসবকে গিরে হাট-বাজারে প্রচুর কেনাকাটা ধুম পড়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চাকুরীজীবি ও স্কুল,কলেজ ও ইউনির্ভাসিটি ছাত্র/ছাত্রীরা নিজ গ্রামে মা-বাবা,আতœীয়-স্বজনদের সাথে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগী করতে ছুটে আসছে। খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার শেখ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, পাহাড়ে বর্ষ বরণ উৎসবকে প্রানবন্ত করার জন্য পুলিশ প্রশাসন নিছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। পাহাড়ীদের এই উৎসব এই বছরও জাঁকজমকভাবে পালন করবে।

আদিবাসীদের বৈচিত্রময় আপ্যায়নতার তিনটি দিন ঃ আদিবাসীদের প্রধান অন্যতম উৎসব বৈসাবি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসবে যেমন ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে তেমনি উৎসবে তিনটি দিনের নামও আলাদা। ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাই আর চাকমার বিজু এই তিন ভিন্ন ভিন্ন চেতনার উৎসবের নামের আদ্যক্ষর নিয়ে বৈসাবি। যেন একই আলো, একই আবেদন, একই চিন্তা চেতনায় উদ্দীপ্ত এক অনুষ্ঠানে যোগ হল বাঙ্গালীদের (বড়–য়া হিন্দু মুসলিম) পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণ ভুলে নাই দাওয়াত ও শুভেচ্ছা। শহর থেকে প্রত্যান্ত অঞ্চলে জীর্ণ কুটির পর্যন্ত প্রতিটি আদিবাসীদের মানুষের ঘরে ঘরে কিছুটা আতংকের স্বস্তি পেলে বর্ষ বরন ও বর্ষ বিদায় উৎসবের আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করেছে।

মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব ঃ মারমারা সাংগ্রাই ১ম দিনকে পেইংছুয়ে (১৩ এপ্রিল)-২য় দিনকে আকেই মুল সাংগ্রাই(১৪ এপ্রিল) ৩য় দিনকে(১৫ এপ্রিল)আক্যে ও ৪র্থ দিনে-আপ্যেইং(১৬ এপ্রিল) আতাদা হিসেবে পালন করে পুরানো বছরকে মুছে ফেলে নতুন বছর গ্রহণের ঐতিহ্যবাহী মৈত্রী পানীয় উৎসব বা জলকেলী উৎসবের মাধ্যমে তারা যুবক-যুবতীদের একে অপরকে বর্ষ বরণ ও বিদায় বৃষ্টিতে সিক্ত করে। সাংগ্রাই প্রধান উৎসবে কেন্দ্রস্থল মন্দির বা ক্যায়াং ঘরে প্রথম দিনে ভালভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় মেতে উঠে। দায়ক-দায়িকারা টানা তিনদিন অবস্থান নিয়ে দীক্ষায় অভিভূত হয়ে বুদ্দ মূর্তির সামনে ফুল রেখে ও মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রনাম করে। পাড়ার লোকজন ক্যায়াং ঘরে গুরু ভিক্ষু,শ্রমন, সাধু-সাধুমাদের উদ্দেশ্যে ছোয়াইং পুজা প্রদান করে। চন্দনের পানি, দুধ ও ডাবের পানি দিয়ে বুদ্দ মূর্তিকে স্নান করানোর মধ্য দিয়ে সূচনা হয় সাংগ্রাই এর নতুন বছর । ঐ দিন তরুণ-তরুণীরা জলবর্তী পাত্র দিয়ে দলে দলে এসে সাংগ্রাইংতে মিলেমিশে জলকেলি বা পানীয় খেলাতে মেতে উঠে। ভাইবোন সকলেই এসে একত্রে আনন্দ করে কুস্তি খেলা নৌকাবাইচ, খৈঞাং, আলারী খেলাসহ বিভিন্ন আয়োজন করে থাকে।

চাক্মাদের বিজু উৎসব ঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য আদিবাসীদের তুলনায় চাক্মারা খুব ফূর্তিবাস জাতি। চাক্মারা ১ম দিনে ফুল বিজু, মুল বিজু ও গোজ্যেপোজ্যে উৎসব পালন করে থাকে। উৎসবের প্রথম দিনে ঘরবাড়ী ও আঙ্গিনা পরিস্কার করা ও ফুল দিয়ে সাজানো হয়। এই দিন পাহাড়ী ছড়া, ঝর্ণা বা নদীতে ফুল ভাসিয়ে দিয়ে মা গঙ্গাকে পূজা করে গোসল করা হয়। এই ছাড়াও পাড়ার যুবক যুবতীরা নদী থেকে পানি তুলে প্রবীণদের গোসল করিলে আশীর্বাদ নেয়। অনেক এলাকায় দল বেঁধে বুদ্ধ মূর্তি গুলোকে গোসল করানো হয়। এরপর সারাদিন প্রস্তুতি চলে পরবর্তী দিন বা উৎসবের মূল দিনের খানাপিনা আয়োজন। উৎসবের ২য় দিনে প্রত্যেকের বাড়ীতে নানা মূখরোচক খাবারের আয়োজন করা হয়। এতে ৩০-৩৭ বা তার বেশী আনাসপাতি দিয়ে তৈরী পাচন এবং পানীয় পরিবেশন করা হয়। নানা বয়সী লোকজন সারাদিন দল বেঁধে হৈ-হুল্লা (আনন্দ) আওয়াজ করে ঘুরে বেড়ায়। চাক্মাদের একটা কথা প্রচলন আছে যে ব্যক্তি কমপক্ষে দশটি বাড়ীতে বিজু খাবে না, সে পরবর্তীতে জনমে শুকর হয়ে জন্মাবে। ৩য় দিনে দল বেঁধে মন্দিরে গিয়ে নতুন বছরে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা বা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানাদি পালন করা হয়। এই দিন অনেকে পাড়ার বয়স্ক মুরব্বীদের বাড়ীতে ডেকে ভাল কিছু খাবার দেন। আর অনেকের উৎসবের তিনদিন মন্দির, বাড়ীর আঙ্গীনা, নদীর ঘাট, সবুজ গাছের নীচে এবং গোয়াল ঘরে বিভিন্ন দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে মোমবাতি জ্বালান। উৎসবে চাক্মা, মারমা ও ত্রিপুরাদের কিছু বিশেষ আকর্ষনীয় অনুষ্ঠান থাকে। এরমধ্যে চাক্মাকে বিজু নৃত্য, ত্রিপুরাদের গরাইয়া নৃত্য ও মারমাদের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি উৎসব বা পানি খেলা রয়েছে। তবে একমাত্র মারমাদের পানি খেলা ছাড়া অন্যান্য সম্প্রদায় আর তেমন ভাবে এই সব অনুষ্ঠান আয়োজন করে না। অনেক সময় কিছু এলাকায় এই সব উৎসবের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

ত্রিপুরাদের বৈসু ঃ ত্রিপুরাদের বৈসুক সাধারণত সামাজিক উৎসব। ত্রিপুরারা বাংলা নববর্ষের শেষ দিনটিকে বৈসুমা বা বৈসুকমা, তার আগের দিনটিকে হারি বৈসু এবং নববর্ষ প্রথম দিনটিকে আতাডাক বলে। হরি বৈসুককের দিন তারা বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে ঘর সাজায়, গরু, মহিষ, ছাগলসহ গৃহপালিত পশুদের খুব ভোরে ঘর থেকে ছেড়ে দেয়। ছেলে-মেয়েরা নতুন কাপড় পড়ে এই ঘর থেকে ঐ ঘরে ঘুরে বেড়াই। ত্রিপুরারা তাদের বৈসুমা দিনে তাদের বাড়িতে অতিথিদের মদ, পিঠা, পাচন ও দিয়ে আপায়ন করে ঐ দিন ত্রিপুরা ছেলে-মেয়েরা নুনছড়ি দেবতা পুকুর বা নদী থেকে জল এনে তাদের নানা-নানী, দাদা-দাদীসহ স্থানীয় গুরুজনের স্নান করে তাদের কাছে আর্শীবাদ গ্রহণ করে। বৈসু সময় ত্রিপুরারা গরাইয়া নাচে শিল্পিরা পাহাড়ী পল্লীঘরে ঐতির্য্যবাহী নিত্য পরিবেশন করে।

বৈসাবির বর্ষ বরণের দিনগুলোতে ক্ষুদ্র জাতি উৎসবের মাধ্যমে তাদের কৃষ্টি,সংস্কৃতি ধারণ করে ভবিষ্যত প্রজুকে ধরে রাখার চেষ্টা করে। কাজের ব্যস্ততার আড়ালে সুখ দুঃখ, গ্লানি এই দেশের মাটি উর্বর হোক, ফুলে ফলে ভরে উঠুক শস্য ক্ষেত, পরিমিত বৃষ্টি জল-হাওয়া বর্ষিত হোক, প্রবাহিত হোক এই দেশের মাটিতে বসবাসকারী সব সকল জনগোষ্ঠি ও প্রাণীকূল সমান অধিকারে বেঁচে থাকুক এই প্রার্থনার মধ্য দিয়ে আদিবাসীদের নববর্ষের বর্ণাঢ্য আয়োজন বৈসাবি শুরু ও ইতিবৃত্ত যেন টানা হয়।