commercebank_252399

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ এপ্রিল: আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে সাতজনে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার রাতে জমির উদ্দিন নামের একজন দর্জি ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের শাখায় মঙ্গলবার দুপুরে সশস্ত্র ডাকাতেরা হামলা চালায়। তারা এ সময় গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে এবং কুপিয়ে জখম করে ব্যাংকের ভেতরে ও বাইরে তাণ্ডব সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। ঢাকার পোশাক শিল্প পল্লী আশুলিয়ায় একটি ব্যাংকে ডাকাতের গুলিতে পাঁচজন নিহত হয়। জনতা এক ডাকাতকে ধরে পিটিয়ে মেরেছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া বাজার শাখায় মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে এক দল ডাকাত হানা দেয় বলে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছে।প্রত্যক্ষদর্শী রবিন দেওয়ান নামে এক ব্যক্তি বলেন, ৩/৪টি মোটর সাইকেলে চড়ে ডাকাতরা আসে।

তিনি জানান, ডাকাতরা ব্যাংকে হামলা চালানোর পর স্থানীয় মাইকে ডাকাতদের প্রতিরোধের আহ্বান জানায় এলাকাবাসী। তখন ডাকাতরা গুলি চালালে পাঁচজন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজনের লাশ সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা আছে বলে জানান হাসপাতালের দায়িত্বরত ব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী। আরেক ব্যক্তির লাশ পাওয়া গেছে ঘটনাস্থলের একটু দূরে। তিনি গণপিটুনিতে নিহত হয়েছন বলে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান।নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ওয়ালিউল্লাহ ও গানম্যান বদরুল ইসলাম এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী পলাশ, ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান ও মুড়ি বিক্রেতা মনির হোসেন।

ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার তরিকুল ইসলামসহ কয়েকজন কর্মীর ভাষ্য, বেলা দুইটার দিকে তিনটি মোটরসাইকেলে করে কয়েকজন ব্যক্তি ব্যাংকের সামনে আসে। তারা গ্রাহকের বেশে ব্যাংকের ভেতরে ঢোকে। এরপর তারা ব্যবস্থাপক ওয়ালিউল্লাহকে গ্রেনেড দেখিয়ে জিম্মি করে ভল্টের চাবি চায়। ব্যবস্থাপক চাবি দিতে অস্বীকৃতি জানালে ডাকাতেরা তাঁকে কোপাতে শুরু করে। তারা গ্যানমান বদরুলকে কুপিয়ে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এরপর ডাকাতেরা গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ও গুলি চালিয়ে ত্রাসের সৃষ্টি করে ক্যাশ কাউন্টার থেকে টাকা লুটে নেয়। ঘটনাস্থলেই ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ও গানম্যানের মৃত্যু হয়।ব্যাংকের বাইরের কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ব্যাংকের ভেতর থেকে গ্রেনেড ও গুলির শব্দ এবং লোকজনের চিৎকার শুনে আশপাশের ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসেন। তাঁরা ব্যাংকটি ঘেরাও করে ডাকাতদের আটক করার চেষ্টা করেন। বিষয়টি টের পেয়ে ডাকাতেরা গুলি ও গ্রেনেড ছুড়তে ছুড়তে ব্যাংক থেকে বের হয়ে যায়।আশুলিয়া থানার পুলিশ জানায়, গুলিবিদ্ধ হয়ে ও গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে ১৪ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত ১১ জন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।পুলিশ আরও জানায়, ডাকাতেরা পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতা তাদের ধাওয়া করে দুজনকে ধরে ফেলে। এদের মধ্যে গণধোলাইয়ে একজনের মৃত্যু হয়। এ সময় ধৃতদের কাছ থেকে লুট হওয়া প্রায় পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু সাদেক মো. সোহেল বলেন, এ ঘটনায় তিনি হতভম্ব। ডাকাতেরা পাঁচ লাখ টাকার মতো লুটে নিয়েছিল। এর মধ্যে ৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।সাভারের এএসপি রাসেল শেখ বলেন, ডাকাতের গুলিতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। দুই ডাকাতকে ধরে ফেলে জনতা। এর মধ্যে গণপিটুনিতে একজন মারা গেছে।প্রত্যক্ষদর্শী রবিন বলেন, প্রতিরোধের মুখে ডাকাতরা পালাতে থাকে। এর মধ্যে একটি মোটর সাইকেল পড়ে গেলে জনতা দুই ডাকাতকে ধরে মারধর করে। তাদের একজন ঘটনাস্থলে মারা যায়। অন্যজনকে পুলিশে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে ডাকাতদের ফেলে যাওয়া ৫ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৫ টাকা ভর্তি একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। সন্দেহভাজন ডাকাতদের ওই মোটর সাইকেলটি জ্বালিয়ে দিয়েছে জনতা।ডাকাতের এলোপাতাড়ি গুলিতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানায়। ডাকাত দল বেশ কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণও ঘটায়।গুলিবিদ্ধদের সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাহমুদ হাসান জানান, সেখানে পাঁচটি লাশ রয়েছে।পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেন, ঘটনার পরপরই পুলিশ এলাকায় অভিযান শুরু করেছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।