Rajshahi Education Board News 10-6-15

দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ১০ জুন: নিয়োগের পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো বেতন পাচ্ছেন না রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৮ শিক্ষক-কর্মচারী। অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল হায়াতের এক গুঁয়েমির কারণেই এসব শিক্ষক-কর্মচারী বেতন পাচ্ছেন না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিয়োগ পাওয়া ওই শিক্ষক-কর্মচারীরা বোর্ড চেয়ারম্যান আবুল হায়াতকে ঘুষ না দেওয়ায় তাদের বেতনÑভাতা ছাড় করানো হচ্ছে না। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে তাদের মাঝে।

শিক্ষাবোর্ড সূত্র মতে, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডেও অধিন শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর প্রভাষক, জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও জুনিয়র শিক্ষক মিলে ১২টি পদের জন্য ১২জন শিক্ষক ওছয়টি এমএলএসএস পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এর বিপরীতে চলতি বছর ২ জানুয়ারি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুর রউফ মিয়া ১১ জানুয়ারি নিয়োগ দেন।

ওই নিয়োগ দেওয়ার কিছুদিন মাথায় অবসরে যান আবুর রউফ মিঞা। এরপর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান প্রফেসর আবুল হায়াত। সূত্র মতে, শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অডিট আপত্তি আছে অভিযোগ তুলে বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল হায়াত শিক্ষক-কর্মচারীদের বোর্ডের ফান্ড থেকে দেওয়া বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেন। অথচ শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ওই পদ্ধতিতেই শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়া হত। এ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে বোর্ড চেয়ারম্যান গত ৫ এপ্রিল চিঠি দিয়ে শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মকবুল হোসেনকে নিজ প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের নির্দেশ দেন।

সূত্র মতে, চেয়ারম্যানের এ নির্দেশ ছিল অনিয়মতান্ত্রিক। এর ফলে ওই প্রতিষ্ঠানের অর্থ থেকে বেতন-ভাতা দিতেও ব্যর্থ হন অধ্যক্ষ মকবুল হোসেন। এরপর তিনি বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে মন্ত্রণালয় থেকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। শেষে তিন মাস বন্ধ রেখে শিক্ষা বোর্ডের ফান্ড থেকে গত এপ্রিল থেকে আবার বেতন-ভাতা নিয়মিত করা হয়। তবে গত জানুয়ারি মাসে নিয়োগ পাওয়া ১৮ শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা এখনো ছাড় করেননি বোর্ড চেয়ারম্যান আবুল হায়াত।

শিক্ষা বোর্ড সূত্র আরও জানায়, নিয়োগ পাওয়া ১৮ শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে অভিযোগ তুলে তাঁদের বেতন-ভাতা এখনো বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রকার তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি। কিন্তু তারপরেও ওই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা মাসের পর মাস আটকে থাকার ফলে তারা অনেকটায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

বোর্ডের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, চেয়ারম্যান আবুল হায়াতকে নিয়োগ পাওয়া ওই শিক্ষক-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে মোটা অংকের ঘুষ না দেওয়ায় তাদের বেতন-ভাতা ছাড় করানো হচ্ছে না। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তাদের মাঝে। বিষয়টি নিয়ে খোদ বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝেও দুটি পক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে মাসের পর মাস বেতন-ভাতা না পেয়ে নিয়োগ পাওয়া ওইসব শিক্ষক-কর্মচারীরা অনেকটায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে তাদের মাঝে জানান নিয়োগ পাওয়া একাধিক শিক্ষক-কর্মচারী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিয়োগ পাওয়া ওই শিক্ষক-কর্মচারীদের অনেকেই জানান, নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন ঠিকই তাদের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। কিন্তু এখনো বেতন-ভাতা কিছুই তাদের দেওয়া হচ্ছে না। এতে করে চরম কষ্টের মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে তাদের। ১৮ শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা না পাওয়ার কথা স্বীকার করে শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মকবুল হোসেন বলেন, বেতন ছাড়ের বিষয়টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের হাতে। তিনিই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।’ যোগাযোগ করা হলে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান আবুল হায়াত বলেন, ‘নিয়োগপ্রাপ্ত ওই শিক্ষক-কর্মচারীদের বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ আছে। এর কারণেই বেতন-বাতা দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে তদন্ত করছেন না কেন জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।’

এদিকে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছেন জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট রাজশাহী শাখা। গত গত ৪ জুন তারা বোর্ড চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে নগরীর লক্ষীপুর মোড়ে প্রতিকী অনসনও করেন। আগামী ২০ জুনের মধ্যে বোর্ড চেয়ারম্যান অপসারিত না হলে এ নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও ওই কর্মসূচি থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়।