bazar-dor

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫: সপ্তাহ পার না হতেই রাজধানীর কাঁচাবাজারে আরেক দফা বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। যদিও সবজির বাড়তি দামের পেছনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা আর সরবরাহের ঘাটতিকে দায়ী করছেন বিক্রেতারা। কিন্তু এ বিষয়টিকে শুধুই অজুহাত হিসেবে দেখছেন ক্রেতারা। তবে সরবরাহ ভালো থাকায় মাছের বাজারের উত্তাপ কিছুটা কমেছে এবং তা ঈদ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলেই আশা ব্যবসায়ীদের।শুক্রবার ছুটির দিন, কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যে পুরো সপ্তাহের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারতেই বাজারে তাই অন্যান্য দিনের তুলনায় ভিড় একটু বেশি। ডালা ভর্তি সবজির পসরা নিয়ে বিক্রেতারাও কাটান ব্যস্ত সময়।কিন্তু বাজারে প্রবেশের পরই সব ভাবনা এলোমেলো হয়ে যাওয়ার দশা ক্রেতাদের। বাজারে এক কেজি কাঁচামরিচ ২শ’ টাকা, বেগুন ১শ’, পটল ৭০, করল্লা ৮০, ঝিঙ্গা চিচিঙ্গা প্রত্যেকটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিদরে। সবজির দাম বাড়ার পেছনে বিক্রেতাদের দেখানো বিভিন্ন কারণকেও স্রেফ অজুহাত হিসেবেই দেখছেন ক্রেতারা। তবে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির কোনো প্রভাব বাজারে পড়েছে কিনা এমন প্রশ্নে পাল্টাপাল্টি যুক্তিও দেখালেন তারা।তবে ক্রেতাদের জন্য কিছুটা স্বস্তির খবর রয়েছে মাছ বাজারে, বিক্রেতাদের দাবি, গেল সপ্তাহের তুলনায় কমেছে সব ধরনের মাছের দাম। যদিও বাজারে কেজিপ্রতি চিংড়ি ৭শ’ থেকে ১ হাজার, এক হালি মাঝারি ইলিশ যখন বিক্রি হয় ৬ হাজার টাকায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই বিক্রেতাদের দাবির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

এদিকে, আগের দামেই গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ টাকায়, খাসি সাড়ে ৫শ’ আর কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১শ’ ৪৫ টাকায়।এতোদিন দেশে বৃষ্টির অজুহাতে কাঁচাবাজারে পণ্যের দর বেড়েছে। তবে এখন আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলেও পণ্যের দাম কমছেই না। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সহসাই কাঁচাবাজারে পণ্যের দর কমছে না। কিন্তু পণ্যের দর না কমার সঠিক কোনো কারণ তারা বলতে পারছেন না। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানোর অজুহাত দেখিয়ে অনেক ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের দাম কমাচ্ছেন না বলে খুঁচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন। শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা এ প্রতিবেদককে এমনটাই জানিয়েছেন।

এদিন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, স্বামীবাগ, কাপ্তানবাজার, সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি গাঁজর ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায়, শশা ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকায়, করলা ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় (গত শুক্রবার ছিল ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা), ঝিঙা ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায় (গত শুক্রবার ছিল ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা), বেগুন ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা (গত শুক্রবার ছিল ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা), পটল ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকায়, কাকরল ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, ভেন্ডি ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, ওস্তা ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকায় (গত শুক্রবার ছিল ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা), চিচিঙা ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, পেঁপে ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, দোন্দল ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, বড়বটি ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকায় (গত শুক্রবার ছিল ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা), টমেটো ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকায়, আলু ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে গত দুই তিন দিন আগে মরিচের দাম কমলেও শুক্রবার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মরিচ ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, পাইকারি বাজারে পণ্যের দাম না কমলে তো আমরা কমিয়ে বিক্রি করতে পারবো না। তাছাড়া এখন সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বেড়েছে বলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমাদেরকে অজুহাত দেখাচ্ছে। বৃষ্টির কারণে যেভাবে দাম বেড়েছে সেই দামইতো আর নামেনি। সেগুনবাগিচা বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ জানান, পাইকারি বাজারে গিয়ে যদি বলি, এখনতো বৃষ্টি নাই, পণ্যের দাম কমাচ্ছেন না কেন? তখন পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলে, বৃষ্টি না থাকুক তাতে কি হয়েছে? আমদানি কম, এছাড়া সরকার তো চাকরিজীবীদের বেতন বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের ব্যবসায়ীদের তো আর কোনো ধরনের সুবিধা বাড়ায়নি। উল্টো সরকারকে বেশি করে ট্যাক্স দিতে হবে। তাহলে বাজারে পণ্যের দাম কমবে কি করে।তিনি বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা এমনভাবে বললে পরে আর কিছুই বলা যায় না। বেঁচে থাকার তাগিদে ব্যবসায় টিকে আছি। সব দিক দিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের সমস্যা। এক দিকে পুঁজি কম, অন্যদিকে ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষি, এরপর জিনিসের দাম বাড়ছে কেন জবাব দিতে দিতে অস্থির।

এদিকে বাজারে পেঁয়াজের দাম অপরিবতিত রয়েছে। বাজারে দেশী পেঁয়াজ ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিদেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে রসুনের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দেশি রসুন ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় এবং আমদানি করা রসুন ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি আদা ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ডিমের দাম আগের সপ্তাহের চেয়ে কমেনি। খুচরা বাজারে প্রতি হালি ব্রয়লার মুরগির ডিম ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি হাসের ডিম ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইকারি বাজারে ব্রয়লার মুরগির একশ ডিম ৯০০ টাকায় এবং হাসের ডিম ১০৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।এছাড়া বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির দাম (সাদা) ১৭০ টাকা থেকে ১৭৫ টাকায়, ব্রয়লার মুরগি (লাল) ১৮৫ টাকা থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবং প্রতিকেজি গরুর মাংসা ৩৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশিরভাগ আড়ৎ দুয়েক পদের সবজি নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। মাছের মানভেদে প্রতিকেজি লইট্টা মাছ ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। ছোট-বড় কাতাল ৩০০ থেকে ৩৬০, ইলিশ মান ভেদে ৭৫০ থেকে ১১৫০, রুপচাঁদা ৪০০ থেকে ৯০০টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।মাছ বিক্রেতারা জানান, মাছ আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি রুই মাছ ২২০ থেকে মানভেদে ৩৬০ টাকা পর্যন্ত, তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ২২০ টাকায়। মাঝারি আকারের চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।