01দীর্ঘ ছয় বছর চার মাস পর আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির বহুকাঙ্ক্ষিত ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’ শীর্ষক স্লোগান নিয়ে জাতীয় এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। জানা গেছে, এবারের কাউন্সিলের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি আনাসহ দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রচারাভিযান। সারা দেশ থেকে বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকসহ ২০-দলীয় জোটের হাজার হাজার নেতা-কর্মী এখন ঢাকায় এসে পড়েছে।

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সকাল ১০টায় শুরু হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। দ্বিতীয় পর্বের কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হবে বিকাল ৩টায়। এ জন্য বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ভিতরে ও বাইরে। ভিতরে-বাইরে শতাধিক মাইক ও বেশ কিছু প্রোজেক্টর স্থাপন ছাড়াও সামিয়ানা টানানো হচ্ছে— সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভিতরেও। গতকাল বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে বলে জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ফলে স্থান সংকুলানে আর কোনো বাধা রইল না। অর্ধেকেরও বেশি কাউন্সিলর ও ডেলিগেট গতকালই ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। আজকের মধ্যেই সবাই ঢাকায় এসে পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বিদেশি অতিথিরাও আসতে শুরু করেছেন। কাউন্সিলে যোগ দিতে গতকাল বিকাল ৫টায় লন্ডন থেকে সায়মন বেনজাক নামের একজন ব্রিটিশ এমপি ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক শফিক রেহমান। তবে আরও পাঁচজন ব্রিটিশ এমপি গতকাল পর্যন্তও বাংলাদেশের ভিসা পাননি বলে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতারা জানান। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভিসা পেলেও তারা এসে যোগ দিতে পারেন।

২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দলটির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের মতো এবারও চিকিৎসার্থে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থানকারী দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ধারণ করা একটি ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হবে বলে জানান বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম। এ ছাড়া পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনের ‘থিম সং’টিই এবারের সম্মেলনের ‘থিম সং’ হিসেবে অপরিবর্তিত রয়েছে।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলার চোখকে বলেন, সিটি করপোরেশনের অনুমতি না পাওয়ায় রাজধানীতে সীমিত আকারেই বিলবোর্ড, ডিজিটাল ব্যানার ইত্যাদি ব্যবহার করা হচ্ছে। সাড়ে ছয় লাখ পোস্টারের বেশিরভাগই ব্যবহার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ আয়োজন করার জন্য। উদ্যানের ভিতরে অন্তত হাজার পঞ্চাশেক লোকের বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গতরাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই সম্মেলনের প্রস্তুতি সম্পর্কে ১১টি উপ-কমিটির চূড়ান্ত প্রস্তুতির বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়। সংশ্লিষ্ট আহ্বায়করা চেয়ারপারসনের কাছে তাদের রিপোর্ট করেন এবং চেয়ারপারসন বৈঠকে আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে সেগুলো অনুমোদন করেন।

আপ্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক আবদুস সালাম জানান, দেশি-বিদেশি অতিথিসহ কাউন্সিলর, ডেলিগেটসহ সবার জন্য মোরগ-পোলাওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সঙ্গে থাকবে একটি করে ডিম, পানি এবং কোমল পানীয়।

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এবারের কাউন্সিলের মাধ্যমে জনগণ জেগে উঠবে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের ভিতরে বিদেশি মেহমান, কাউন্সিলর ও সাংবাদিকরা বসবেন। আর ডেলিগেটরা মিলনায়তনের বাইরে ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থান করবেন। তাদেরকে ৯টি স্থান থেকে খাবার সরবরাহ করা হবে।

সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির কর্মকর্তারা জানান, ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়াসহ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় বিশটি দেশের রাজনৈতিক নেতারা ও মন্ত্রী-এমপি, মানবাধিকার কর্মীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিএনপির কাউন্সিলে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রতিটি আমন্ত্রণপত্রেই কোন পরিস্থিতিতে কেন কীভাবে কাউন্সিলটি হচ্ছে এবং বিএনপির পরিচয়সহ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি ও গণতন্ত্রের হাল হকিকত সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক ছাড়াও প্রতিবেশী ভারতেরই রয়েছে আটটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টিসহ (বিজেপি), ভারতীয় কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম, শ্রী জয় ললিতার অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড়া মুন্নেত্রা কাঝাগাম (এআইএডিএমকে), মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি), লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) ও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির (আপ) উল্লেখযোগ্য নেতারা রয়েছেন।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অর্ধ যুগেরও বেশি সময় পর অনুষ্ঠেয় দলের জাতীয় এই কাউন্সিলকে ঘিরে সারা দেশে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে যে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আগামীকাল শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকায় মানুষের ঢল নামবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমেই বিএনপি আরও শক্তিশালী, আরও গতিশীল হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে একদিন দেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সক্ষম হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ২টার মধ্যে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ করে বেলা ৩টার দিকেই শুরু করা হবে কাউন্সিলরদের রুদ্ধদ্বার অধিবেশন। এ অধিবেশন শেষে রাত ৯টার ভিতরেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় ফেরার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে তা নির্ভর করবে কাউন্সিলরদের সঙ্গে চেয়ারপারসনের বৈঠকের দৈর্ঘ্যের ওপর। এর আগে সকাল ৯টা ২০ মিনিটে তিনি গুলশানের বাসা থেকে কাউন্সিলের উদ্দেশে রওনা হবেন। সে বৈঠকে আলোচনা শেষে সারা দেশের কাউন্সিলররা নির্বাহী কমিটিসহ সব কমিটি গঠন এবং অন্যান্য সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বময় ক্ষমতা অর্পণ করবেন। এরপর বেগম খালেদা জিয়া চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।