11ইমরান এইচ সরকার লিখেছেন, এই বছরের প্রথম ৩ মাসেই দেশে প্রায় ১ হাজারের কাছাকাছি মানুষ খুন হয়েছে। কেউ কি বলতে পারবেন যে, এর একটি ঘটনার বিচার হয়েছে? কেনো, এদেশে প্রধানমন্ত্রীর সন্তান না হলে কি কেউ বিচার পাবে না?

সোমবার গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার ফেসবুককে দেয়া স্ট্যাটাসে  তিনি এসব কথা বলেন।

দৈনিক বার্তার পাঠকদের জন্য তার দেওয়া স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো…….

মত প্রকাশের স্বাধীনতা আর ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধার কথা বলতে গিয়ে সম্ভবত আমার নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতাই আজ হুমকির মুখে। কি ভয়াবহ ব্যাপার!

আমি আমার স্ট্যাটাসে পরিষ্কার লিখেছি, আমি শফিক রেহমানের রাজনৈতিক আদর্শের সাথে একমত নই। এমনকি আমি স্ট্যাটাসের কোথাও তার মুক্তির কথাও বলিনি। তাতেই যেভাবে আক্রমণ হচ্ছে, খুব সহজেই অনুমান করা যায় ভিন্নমতের প্রতি সমাজে কতোটুকু শ্রদ্ধা বিদ্যমান।

এদেশে খুব গৎবাঁধা কিছু কথা বলা হয়। একটা খুনের বিচার চাইতে গেলেই কেউ কেউ বলে ‘অমুক এটা করতো’ আপনি খুনের বিচার চেয়ে তার সেই কাজকে সমর্থন করলেন! কারো মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বললেও একই প্রশ্ন। কারো সাথে সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করেও যে তার অধিকারের জন্য লড়াই করা যায়, সরল এই বিষয়টি সমাজ থেকে একদম হারিয়ে যাচ্ছে। কোনো খুনের বিরুদ্ধে কিংবা কারো মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ানো মানে যে তার বক্তব্যের সাথে একমত হওয়া নয়, এই বোধটুকুও আমরা হারিয়ে ফেলছি।

আমি আমার ওই স্ট্যাটাসে দেশে চলমান খুন-ধর্ষণের বিচার নিয়েও বলেছিলাম। এই বছরের প্রথম ৩ মাসেই দেশে প্রায় ১ হাজারের কাছাকাছি মানুষ খুন হয়েছে। কেউ কি বলতে পারবেন যে, এর একটি ঘটনার বিচার হয়েছে? কেনো, এদেশে প্রধানমন্ত্রীর সন্তান না হলে কি কেউ বিচার পাবে না? তনুর বাবা চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী বলে কি তার বিচার পাওয়ার অধিকার নেই?

আমাদের, এদেশের সাধারণ নাগরিকদের সম্ভবত আরেকটু সজাগ হবার দরকার আছে। আমি দেখতে পাচ্ছি, প্রতিপক্ষের প্রতি যেকোনো অবিচার হলে আমরা প্রত্যেকে হাততালি দেই। আর এটাই কিন্তু আমার, আপনার সবার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। দেখানো হচ্ছে দেখো, একে গ্রেফতার, হত্যা, গুম করলে কিংবা শক্তি প্রয়োগ করে মুখ বন্ধ করিয়ে দিলে কতো মানুষ খুশি হয়, তাই আমরা যা করেছি ঠিক করেছি। একবার ভেবে দেখুন, আমার/আপনার হাততালি আমার/আপনার বিরুদ্ধেই ব্যবহার হলো! আমাদের প্রত্যেকের সাথে ঘটা অন্যায়গুলো এভাবেই প্রতিপক্ষের হাততালির আড়ালে স্বীকৃত করে নেয়া হচ্ছে। ফলস্বরূপ আমরা সকলেই অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছি।

যখন দেখতে পাচ্ছি নানাভাবে একের পর এক মানুষের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে এবং সেগুলো বিভিন্ন উপায়ে জাস্টিফাই করা হচ্ছে, তখন জেনে গেছি এই দানব আসলে আমার দিকেই আসছে; আমাদের সবার দিকেই আসছে! তাই আমরা যদি পক্ষ-বিপক্ষ ভুলে এই দানবীয় শক্তির বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়াই, আমাদের বাকরুদ্ধ রেখে রিজার্ভ লুটের মতো সবকিছু লুট হতে থাকবে, আমাদের কিছুই করার থাকবে না।

আর আমার ফেসবুক? এটা তো জনতার গণমাধ্যম! আমার ফেসবুক সমাজের নির্যাতিত, বঞ্চিত, অসহায় মানুষের পক্ষে কথা বলে। সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত থাকবে। ভলতেয়ারের আমার প্রিয় কয়েকটি লাইন দিয়ে শেষ করছি…

“আপনার সঙ্গে আমি একমত হতে পারবো না কিন্তু আমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার যে অধিকার আপনার আছে, সে অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রয়োজন হলে আমি জীবন দিতেও প্রস্তুত।”