একটি শিশুর জন্য পৃথিবীর সর্বোচ্চ নিরাপদ স্থান তার মায়ের কোল। শতকষ্ট ও যন্ত্রণা সহ্য করে মা তাঁর সন্তানকে নিরাপদে রাখেন নিজের সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিয়ে। যেই গর্ভধারীনি মা দশ মাস দশ দিন গর্ভ ধারণ করে অসহনীয় শারীরিক কষ্ট সহ্য করে শিশুকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে সেই পাষন্ড মাই আবার শিশুর গুপ্ত ঘাতক। কথাটা অদ্ভুত মনে হলেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছে হাটহাজারী উপজেলার উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের ঈদগাঁ এলাকায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও থানার পুলিশ সূত্র জানায়, রবিবার ভোরে উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের ঈদগাঁ এলাকা হয়ে আবুল কালাম ফাহিম নামে পঞ্চম শ্রেণি পড়–য়া এক শিশু নূরানী মাদ্রসায় যাচ্ছিল। এ সময় ফাহিম কুমিরখালী ব্রিজের পাশে খালে ৮-৯ মাস বয়সী একটি শিশুর লাশ ভাসতে দেখে এবং খবরটি সে তার সহপাঠি ও এলাকাবাসীকে জানায়। মুহূর্তের মধ্যে এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শত শত উৎসুক জনতা নিহত শিশুটির নিথর দেহ এক নজর দেখার জন্য ওই এলাকায় ভিড় জমাচ্ছে বলে জানান এলাকার স্থানীয় এক হোমিও চিকিৎসক ওমর ফারুক।

এলাকাবাসী জানায়, পার্শ্ববর্তী পেয়ার মোহাম্মদ চৌধুরী বাড়িতে নোয়াখালী জেলার চেয়ারম্যান ঘাটা এলাকার রিজিয়া বেগম নামে এক মহিলা দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ ভাড়া বাসায় থাকত। তার কণ্যা রিনা আক্তার এর সাথে বছর প্রায় আড়াই-তিন বছর আগে এক সনাতন ধর্মাবলম্বী ছেলের সাথে প্রেমের সর্ম্পক অত:পর শুভ পরিণয় হয়। এরমধ্যে তাদের দাম্পত্য জীবনের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এ ঘটনা নিয়ে রিনার সাথে তার মায়ের সাথে সর্ম্পকের অবনতি হয়। অনেক দিন কোন প্রকার যোগাযোগ ছিল না মা- মেয়ের। সম্প্রতি স্বামীর সাথে সর্ম্পকের অবনতি হওয়ায় রিনা তার মায়ের কাছে মাঝেমধ্যে আসা-যাওয়া শুরু করে। তবে এক মাস পূর্বে তার মা আমাদের এ এলাকা ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়। এদিকে ঘটনাস্থ থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে মাদার্শা স্কুল গেইট এলাকার আবদুল মান্নান নামে এক দোকানদার এ প্রতিবেদককে জানান, ভোর সাড়ে ৬টার দিকে রিনাকে তার পুত্র শিশুটিকে কোলে নিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে আসতে দেখেছি। তখন শিশুটি জীবিত ছিল। পরে শুনতে পেয়েছি রিনা তার মাকে ভাড়া বাসায় গিয়ে খোঁজে না পেয়ে তার কোলে থাকা পুত্র শিশুটিকে হত্যা করে খালে ফেলে দিয়ে চলে যায়।

খবর পেয়ে হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক জামাল মৃধা মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, শিশুটির লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তার মলদারের পার্শ্বে ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হবে। সুরুত হাল প্রতিবেদন তৈরী করে লাশ মর্গে পাঠানো হচ্ছে। শিশুটির কোন অভিবাবক খোঁজে না পাওয়ায় তার লাশ আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামে দিয়ে দেওয়া হবে।