পাবনার চাটমোহরে গৃহবন্দি অবস্থায় সুমি খাতুন (১৫) নামে এক গৃহপরিচারিকাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে পৌর এলাকার ছোট শালিকা মহল্লা (কালী নগর) থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় বাড়ির গৃহকর্তা আবদুস সোবাহান বিচ্ছু, তার স্ত্রী ফেরদৌসি বেগম ও তাদের ছেলে ফজলে রোহানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় এবং পরে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। গৃহপরিচারিকা সুমি পার্শ্ববর্তী গুরুদাসপুর উপজেলার দড়ি হাসমারি গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে।
জানা গেছে, দড়ি হাসমারি গ্রামের আলতাব হোসেন নামে এক ব্যক্তি সুমিকে ৫ বছর পূর্বে আঃ সোবাহন বিচ্ছুর বাসায় কাজ করার জন্য রেখে যায়। প্রায়শই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিচ্ছুর স্ত্রী ফেরদৌসি বেগম মেয়েটিকে নানা অজুহাতে মারপিট করতো এবং টয়েলেটে বন্দি করে রাখতো। শুধু তাই নয় মেয়েটিকে (সুমি) চাহিদা মাফিক খেতে দিতো না এবং বাড়ির বাইরে বের হতে দিতো না। এতে করে মেয়েটি শারীরিকভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে শুকিয়ে গেছে। এমতবস্থায় প্রতিবেশীরা বিষয়টি মানবাধিকার কর্মীদের বলেন এবং থানা পুলিশকে অবহিত করেন। রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মানবাধিকার কর্মীরা ওই বাড়িতে গিয়ে মেয়েটিকে (সুমি) উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে পুলিশ গিয়ে সুমিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তবে ওই সময় সুমি গৃহকর্তা ও গৃহকর্তীর ভয়ে কোন অভিযোগ না আনায় পুলিশ মুচলেকা নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়। এরপর সোমবার সকালে কিছুটা সুস্থ হলে সাংবাদিকদের নির্যাতনের বর্ণনা দেয় সুমি।
সোমবার সকালে কথা হয় হাসপাতালে ভর্তি গৃহপরিচারিকা সুমি খাতুনের সাথে। এ সময় সে অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে, ‘আমাকে তারা মারপিট করতো, খাবার কম দিত। বাবা-মার সাথে কথা বলতে দিত না, বাড়ির বাইরে বের হতে দিত না। ওরা মানুষ না, অমানুষ; আমি তাদের বিচার চাইনা; ওদের বিচার আল্লাহ করবেন।’
মানবাধিকার কমিশন চাটমোহর উপজেলা শাখার সভাপতি কেএম বেলাল হোসেন স্বপন বলেন, আমরা গত দু’দিন আগে এমন অভিযোগ পেয়ে বাড়িটির ওপর নজর রাখছিলাম। রোববার ওই বাড়ির মালিককে কয়েকবার বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে তারা সুমিকে গৃহবন্দির বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে পুলিশ গিয়ে সেই বাড়ি থেকেই সুমিকে উদ্ধার করে। বিষয়টি অমানবিক বলে তিনি জানান, সুমির চিকিৎসা ও আইনী সহায়তার জন্য চাটমোহর উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের কর্মীরা পাশে থেকে সহযোগিতা করবেন বলে নেতৃবৃন্দ।
এ বিষয়ে চাটমোহর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম আহসান হাবীব জানান, পাঁচ বছর ধরে সুমি চাটমোহরের ছোট শালিকা মহল্লার আঃ সোবাহান বিচ্ছুর বাসায় বাসায় কাজ করে। স্থানীয়দের অভিযোগ পেয়ে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে প্রথমে তারা বিষয়টি অস্বীকার করে এবং মেয়েটিকে বাড়ির প্রাচীরের পেছনে ফেলে দেয়। বিষয়টি টের পেয়ে তাকে উদ্ধার এবং বাড়ির গৃহকর্তা-গৃহকর্তী ও তাদের ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। গৃহপরিচারিকা সুমিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তার কোন অভিযোগ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। এ জন্য তাদের মুচলেকায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে মেয়েটির পরিবারকে খবর দেয়া হয়েছে। তারা অভিযোগ দিলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।