সহিংসতা, বোমা হামলা, নানা অভিযোগের ঘটনাবহুল পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে দেশটিতে ভোটগ্রহণ চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মোট ২৭২ টি আসনের মধ্যে ২২১ টি আসনের বেসরকারি ফলাফল জানা গেছে। এতে দেখা গেছে, ইমরান খানের দল পিটিআই সবার চেয়ে এগিয়ে আছে। দলটি এখন পর্যন্ত মোট ৯১ টি আসনে জয়লাভের পথে রয়েছে। আর নওয়াজ শরীফের দল পিএমএল-এন ৫০টি আসনে জয়ের পথে। অন্যদিকে, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর দল পিপিপি জিততে চলেছে ৩২টি আসনে। আর বাকী দলগুলো সব মিলিয়ে ৪৮টি আসনে জয় লাভের পথে। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য কোন দলকে এককভাবে ১৩৭টি আসনে জয়লাভ করতে হবে।

এর আগে বুধবার সকাল আটটা থেকে পাকিস্তানের ১১ তম সাধারণ নির্বাচন ও চারটি প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তা চলে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৭২ আসনবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদের জন্য ৩,৪৫৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। তবে পরে এনএ-৬০ ও এনএ-১০৮ আসনে নির্বাচন স্থগিত করে কমিশন। পাকিস্তানে এবার নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ৬০ লাখ। নির্বাচনে শীর্ষ তিনটি প্রতিদ্বন্দ্বী দল হলো-পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন),পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। আর প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে ৮,২৪৫ জন প্রার্থী।

পাকিস্তানে এবার প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মোতায়েন করা হয় রেকর্ড সংখ্যক সেনা। ডনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,এবার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর ৩ লাখ ৭১ হাজারের বেশি সেনা সদস্য এবং পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর আরও সাড়ে ৪ লাখের বেশি সদস্য মোতায়েন করা হয়। দেশজুড়ে ১৭ হাজার ভোটকেন্দ্রকে ‘অত্যন্ত স্পর্শকাতর’ ঘোষণা করা হয়। তবে এতো কঠোর নিরাপত্তা সত্ত্বেও ভোটগ্রহণ শুরুর কয়েক ঘণ্টার মাথায় বেশ কয়েকটি জায়গার সহিংসতার ও ৩৪ জনের প্রাণহানির খবর মিলেছে। স্থানীয় পুলিশকে উদ্ধৃত করে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়, নাওয়ানকালি এলাকায় এন-১৯ (সোয়াবি ২) ও পিকে-৪৭ (সোয়াবি ৫) আসনে সহিংসতা হয়েছে। সেখানে ভোটকেন্দ্রের বাইরে পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হয় পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের এক কর্মী। লারকানায় একটি ক্যাম্পের বাইরে পটকা বিস্ফোরিত হয়েছে। ওই ঘটনায় চারজন আহত হয়। তবে কোনও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।

কোয়েটায় ইস্টার্ন বাইপাস এলাকায় একটি ভোটকেন্দ্রের কাছে বোমা বিস্ফোরণে ৩১ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ২০ জন। এর মধ্যে আটজনের অবস্থা গুরুতর। পুলিশকে উদ্ধৃত করে ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়,বুধবার (২৫ জুলাই) কোয়েটার ‘স্পর্শকাতর’ নির্বাচনি আসন হিসেবে বিবেচিত এনএ-২৬০-এর একটি স্কুলের কাছে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই স্কুলটিতে তখন ভোটগ্রহণ চলছিলো। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ। স্কুলটিতে ভোটগ্রহণ সাময়িক স্থগিত রাখা হয়। পরে আবারও শুরু হয় ভোটগ্রহণ। এরইমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর পক্ষ থেকে হামলার দায় স্বীকার করা হয়েছে।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে উদ্ধৃত করে ডন জানায়,বেলুচিস্তানের খুজদার এলাকার কোশক গ্রামের একটি ভোটকেন্দ্রে গ্রেনেড হামলায় এক পুলিশ সদস্য নিহত ও তিনজন আহত হয়। নাসিরাবাদে একটি পুলিশ স্টেশনে গোলাগুলিতে দুইজন আহত হয়েছে। এছাড়া মারদান, রাজনপুর, খিপরো ও কোহিস্তানেও সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। দিঘরি এলাকার মিরপুরখাস ভোটকেন্দ্রের বাইরে গোলাগুলির ঘটনায় সিকান্দার নুহানি নামের একজন নিহত হয়েছে।