গাজীপুরের টঙ্গীতে ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলার কারণে এক নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত ৬ই অক্টোবর দুপুরে হোসেন মার্কেট এলাকায় গড়ে উঠা ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের নবম তলার মহিলা ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার কারণে মৃত্যু যেন থামছেই না। নামে মাত্র চিকিৎসা দিয়ে মোটা অংকের বিল বানানোর অভিযোগ এখানে নতুন কোন বিষয় নয়। নেই কোন ভাল মান সম্মত ডাক্তার, নেই কোন ভাল চিকিৎসা সরঞ্জাম, আর যে স্বল্প পরিমাণ ডাক্তার রয়েছে, তারা যতটুকে সময় হাসপাতালে ব্যায় করেন তাতে এতো বড় একটি হাসপাতালে আসা রোগীদের জন্য কোন ভাবেই পরিপুরক নয়। ভুল চিকিৎসা কিংবা ডাক্তারের অবহেলার কারণে একের পর এক রোগী অঙ্গহানীসহ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলছে। তেমনি, চিকিৎসকের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নবজাতকের পিতা মোঃ ওসমান গনি ও মাতা আবিদা আক্তার। তারা টঙ্গী বনমালা রোডের দত্তপাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা। বছর তিনেক আগে দম্পতিদ্বয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এটাই ছিল তাদের দাম্পত্য জীবনের প্রথম সন্তান।

নবজাতকের পিতা ওসমান মিয়া জানান, মঙ্গলবার ভোরে আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করি। আবিদার গর্ভে একটি কন্যা নবজাতকের জন্ম হয়। নবজাতক জন্ম নেওয়ার পরে চিকিৎসকরা নবজাতকের সামান্য ঠান্ডা জনিত সমস্যা নিশ্চিত করেন। এমনিতে ভালোই ছিল বেলা ১.৩০ টার দিকে হঠাৎ বাচ্চার শ্বাসকষ্ট বেশি হচ্ছিল চেহারা নীল হয়ে গিয়েছিল। আমি তখন ইমার্জেন্সি ডিউটি ডাক্তার তানভির আহমেদ জহির এর রুমে যাই গিয়ে দেখি ওনি শুয়ে আছেন। ডাক্তারকে ডাকলে তিনি উঠেন বল্লাম আমার বাচ্চার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে শরীর নীল হয়ে গেছে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডাক্তার তানবির বললেন, বাচ্চাটাকে মায়ের কাছে রাখেন বিকাল ৫.০০ টায় শিশু ডাক্তার লুৎফর রহমান স্যার আসলে দেখবে।তিনি আমার কথার কোন গুরুত্ব দেয়নি। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে বারবার জরুরি বিভাগের চিকিৎসককে বললেও তিনি গুরুত্ব দেননি। কিছু সময় পরে আবারও নার্সকে ডেকে বললাম আপা বাচ্চার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে শরীর কেমন নীল হয়ে যাচ্ছে প্লিজ কিছু করেন! নার্স আমার বাচ্চাকে দেখে ডিউটি ডাক্তার তানবির সাহেবের সাথে কথা বললেন। কি বললেন আমি জানিনা আমি কক্ষের বাহিরে ছিলাম। নার্স বাহির হয়ে আমাকে কিছু না বলে অন্য ওয়ার্ডে চলে যায়। এর পর আমার বাচ্চার অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে।এক পর্যায়ে দেখি বাবা আমার নড়াচড়া করছেনা,শ্বাস নিচ্ছে না,সমস্ত শরীর নীল হয়ে গেছে। আমি আমার মাকে ফোন দিয়ে হাসপাতালে আসতে বলি। পরে বাচ্চাকে কুলে নিয়ে জরুরি বিভাগের নিকট যাই। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বাচ্চাকে দেখে বিচলিত হয়ে যায়। পরে আই সি ইউ-তে নিয়ে যায়। এরপরে ১০-১৫ মিনিট পরে তারা এসে বলে আমার বাচ্চা আর নেই। জরুরি বিভাগের চিকিৎসককে বারবার বলেছিলাম চিকিৎসা করতে কিন্তু তারা তা করেননি। এমনকি কোনও নার্সও ঠিকমত কেয়ার করেনি। চিকিৎসকের গাফিলতিতে আমার সন্তান মারা গেলো। চিকিৎসা না পেয়ে আর কোনও বাবা মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়, সে জন্য দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। এমনি করে আহাজারি করে বলছিল নবজাতক শিশুটির বাবা।

এবিষয়ে ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান হাসমত আলী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি আমার জানা ছিলো না তবে ডিউটি ডাক্তারের গাফিলতি থাকলে অবশ্যই ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। এমন সমস্যা আমাদের এখানে প্রতিনিয়তই হয় আবার সমাধান ও হয়। তিনি নবজাতকের পরিবারের লোকদের বলেন, সাংবাদিকদের নিয়ে আসছেন। তাদেরকে বলেন সমাধান করে দিতে। পরবর্তীতে গাসপাতালের পরিচালক হাসমত আলীর সঙ্গে কয়েক দফায় কথা কাটাকাটি হলে এক পর্যায়ে নবজাতকের পরিবারের পক্ষ থেকে টঙ্গী পশ্চিম থানায় ফোন করে অবগত করলে এস আই সাইফুল ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। কিছুক্ষনের মধ্যে হাসপাতালে উপস্থিত হন, টঙ্গী জোনের এ ডি সি ক্রাইম শাহাদাত হোসেন,টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ এমদাদুল হক, এস আই সাইফুল,স্থানীয় কাউন্সিলর জনাব নাসির উদ্দিন মোল্লা, যুবলীগ নেতা বিল্লাল হোসেন মোল্লা।

এসময়ে জিজ্ঞাসাবাদে ডিউটি ডাক্তার তানভীর আহমেদ জহিরের অবহেলা সকলের সামনে ঊঠে আসে। পরবর্তীতে টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ জানান,এ ব্যপারে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তারা চলে যান। এ ঘটনায় নবজাতকের আত্মীয়স্বজন মা-বাবা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানালেও স্থানীয় নেতা ও হাসপাতাল কতৃপক্ষের বিভিন্ন অপ-তৎপরতায় প্রলোভীত হয়ে মোটা অংকের টাকার মাধ্যমে মীমাংসা করে নবজাতকের মরদেহ দত্তপাড়া কবরস্থানে দাফন করেন।

শেখ রাজীব হাসান,গাজীপুর প্রতিনিধি