বিশ্বের ৪৪টি দেশের ১২৯ জন শান্তিরক্ষীকে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ প্রদান করেছে জাতিসংঘ। একক দেশ হিসেবে এবার এ সম্মাননার সর্বোচ্চসংখ্যক মেডেল পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোৎসর্গকারী- মালিতে নিয়োজিত মিনুস্মা মিশনের ওয়ারেন্ট অফিসার আবদুল মো. হালিম; কঙ্গোতে নিয়োজিত মনুস্কো মিশনের ওয়ারেন্ট অফিসার মো. সাইফুল ইমাম ভূঁইয়া, সার্জেন্ট মো. জিয়াউর রহমান, সার্জেন্ট এমডি মোবারক হোসেন ও ল্যান্স কর্পোরাল মো. সাইফুল ইসলাম; সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে নিয়োজিত মিনুস্কা মিশনের ল্যান্স কর্পোরাল মো. আবদুল্লাহ আল মামুন ও সার্জেন্ট মো. ইব্রাহীম এবং দক্ষিণ সুদানে নিয়োজিত আনমিস মিশনের ওয়াসারম্যান নুরুল আমিন এ সম্মাননা পেলেন।

আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। পরে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ফেসবুক পেজে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার মহৎ উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত জীবনের শক্তি, বিশুদ্ধতা ও নশ্বরতাকেই বারবার স্মরণ করছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ ৪৪টি দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিদের হাতে নিজ নিজ দেশের মেডেল তুলে দেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই মেডেল গ্রহণ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এবং মিশনের ডিফেন্স অ্যাডভাইজার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ছাদেকুজ্জামান।

সম্মাননা অনুষ্ঠান উপলক্ষে দেওয়া এক বার্তায় জাতিসংঘের পতাকাতলে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবনদানকারী নীল হেলমেটের সব সাহসী পুরুষ ও নারীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তাদের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার পবিত্র দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ তার অনেক বীর সেনানীকে হারিয়েছে। কিন্তু এই ত্যাগ জাতিসংঘে দায়িত্ব পালনের কোনো আহ্বানে সাড়া দিতে কখনোই আমাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং শান্তির লক্ষ্যে নিজেদের উৎসর্গ করার দৃঢ় সংকল্পকে আরও জোরদার করেছে। দুর্দশামুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করে শান্তির অনুসন্ধান করলেই কেবল কর্তব্যরত অবস্থায় জীবনদানকারী এই শান্তিরক্ষীদের প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন করা হবে।’

জানা গেছে, জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এসব মেডেল কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। জাতিসংঘের ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের প্রায় ৭ হাজার শান্তিরক্ষী কর্মরত রয়েছেন। এ কার্যক্রমে বাংলাদেশ বর্তমানে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। এখন পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় বাংলাদেশের ১৫৯ জন শান্তিরক্ষী মৃত্যুবরণ করেছেন।