1432636575দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ মে: রাজধানীর মিরপুরে পাঁচবছর বয়সী এক স্কুলশিশুকে ধর্ষণের দায়ে এক শিক্ষককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷রাজধানীর মিরপুরে হলি ক্রিসেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্লে শ্রেণীর পাঁচ বছরের ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে এক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ট্রাইবু্যনাল৷ একইসঙ্গে তাকে দুই লাখ টাক জরিমানা করা হয়েছে৷সাজাপ্রাপ্ত আসামির নাম মিনহাজ উদ্দিন (২৫)৷ তিনি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার তবকপুর গ্রামের মৃত এনায়েত হোসেনের ছেলে৷ হলি ক্রিসেন্ট স্কুলটি আসামির ভাই মেসবাহ উদ্দিনের মালিকাধীন৷ তিনি ওই স্কুলে মাঝেমধ্যে আরবি পড়াতেন৷ এজন্য তিনি স্কুলে আলিফ স্যার নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন৷মঙ্গলবার ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনালের বিচারক তানজিনা ইসমাইল এ রায় ঘোষণা করেন৷

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সংশ্লিষ্ট ট্রাইবু্যনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আলী আজগর স্বপন৷ ভিকটিমের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তা করেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা আলী, অ্যাডভোকেট ফাহমিদা আক্তার ও অ্যাডভোকেট ফারহানা রহমার লুনা৷২০১৪ সালের ১১ মার্চ মিরপুরের পশ্চিম শেওড়া পাড়ায় সকাল ১০টায় হলি ক্রিসেন্ট স্কুলে খণ্ডকালীন আরবি শিক্ষক মো. মিনহাজ উদ্দিন ওরফে আলিফ স্যার প্লে শ্রেণীর পাঁচ বছরের এক ছাত্রীকে চকলেট খাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে স্কুলের শৌচাগারে নিয়ে ধর্ষণ করে৷ এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা মো. জসিম উদ্দিন মিরপুর থানায় এই মামলা দায়ের করেন৷৷মামলাটির তদন্ত করে মিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান গত বছরের ২৬ জুন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন৷ এরপর ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইবু্যনালে চার্জ গঠিত হয়৷ ট্রাইবু্যনালে চার্জশিটভুক্ত ১০জন সাক্ষির মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়৷গত এক মাসে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বেশ কয়েকটি ঘটনা নিয়ে আলোচনা ও উদ্বেগের মধ্যেই এক বছর আগের এই মামলার রায় এল৷

অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় মিনহাজকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আরবির শিক্ষক হিসাবে মিনহাজের দায়িত্ব ছিল শিক্ষার্থীদের সর্বোত্তম নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া৷ সেই দায়িত্বে থেকে তিনি এক ছাত্রীকে চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে বাথরুমে নিয়ে ধর্ষণ করে যে পশুত্ব দেখিয়েছেন, তাতে কেবল শিক্ষক সমাজই নয়, পুরো মানব সমাজের বিশ্বাস ভূলুন্ঠিত হয়েছে৷ মামলার বিবরণে বলা হয়, গত বছরের ১১ মার্চ স্কুল ছুটির সময় শিশুটিকে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে কাঁদতে দেখেন তার নানী৷ পরে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে তারা জানতে পারেন, চকলেটের লোভ দেখিয়ে স্কুলের টয়লেটে নিয়ে ওই শিক্ষক তাকে ধর্ষণ করে৷

শিশুটিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়৷ মেয়েটির বাবা শিক্ষক মিনহাজের নামে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন৷এ মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী জানান, বিচার চলাকালে বাদীপক্ষে মোট নয় জনের সাক্ষ্য েেশানেন বিচারক৷এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলী আলী আসগর স্বপন জানান, মামলার আসামি মিনহাজকে মামলা হওয়ার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ রায়ের জন্য মঙ্গলবার তাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়৷কুড়িগ্রামের ছেলে মিনহাজ ঢাকায় শ্যাওড়াপাড়া এলাকাতেই থাকতেন৷ রায় শুনে তার কোনো ভাবান্তর দেখা যায়নি৷ আসামির কাঠগড়ায় তিনি ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন৷স্বপন জানান, আদালত জরিমানার ২ লাখ টাকার মধ্যে ১ লাখ টাকা মেয়েটির পরিবারকে দিতে বলেছে৷